পঞ্চগড়ে সুপারির ভালো ফলনেও দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা
গত কয়েক বছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ে সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতিতে বাজার দর কমে যাওয়ায় হতাশ এ এলাকার চাষিরা।
স্থানীয় সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সুপারি ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় বাজারে চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এর প্রভাব পড়ছে সুপারির দামের ওপর।
স্থানীয়রা বসত ভিটায় কিংবা বাড়ির আশেপাশে লাগানো সুপারির বাগান থেকে আয়ের টাকা বোরো ধান কিংবা অন্যান্য শস্যের উৎপাদন খরচ মেটাতে কাজে লাগান। চাহিদা না থাকায়, একরকম বাধ্য হয়েই উৎপাদিত সুপারি তারা কম দামে বিক্রি করছেন।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৪৫ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের সুপারি বাগান রয়েছে। ২০১৯ সালে জেলায় সুপারি উৎপাদন হয়েছে সাত হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে সুপারি উৎপাদন গত বছরের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন তারা।
পঞ্চগড়ের বাজারগুলোতে সুপারি বিক্রি হয় পন ও কাহন এককে। প্রতি পনে ৮০টি সুপারি থাকে এবং ১৬ পন সুপারিতে এক কাহন হয়।
সম্প্রতি পঞ্চগড়ের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর সুপারির দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে, প্রতি পন সুপারি বিক্রি হচ্ছে মান ও আকার ভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। তিন দিন আগেও এর দাম ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
পঞ্চগড় জালাসী বাজারে সুপারি বিক্রি করতে আসা কৃষক মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের বাজারে আশি পন সুপারি ১২০ টাকা দরে নয় হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হল। অথচ, গতবছর একই মানের সুপারি বিক্রি করেছিলাম ২৫০ টাকা দরে।’
জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী গ্রামের মো. ইসলাম বলেন, ‘এ সময়টাতে সুপারি থেকে যে টাকা পাওয়া যায়, তা বোরো ধান আবাদের কাজে লাগাই। অন্যান্য বছর সুপারি বিক্রির টাকা থেকে তিন বিঘা জমির বোরো আবাদের প্রায় অর্ধেক খরচ চলে আসে। কিন্তু, এবার যে টাকা পাওয়া গেল, তা গত বছরের মতো কাজে লাগবে না।’
পঞ্চগড়ের জালাসী বাজারের ক্ষুদ্র সুপারি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, ‘পঞ্চগড়ের মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সারা দেশেই এ এলাকার সুপারির চাহিদা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ঢাকা, কুমিল্লা, সৈয়দপুর, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে। এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলার বাইরে থেকে খুব অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী আসায় দাম নিম্নমুখী।’
সুপারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করি। এক বস্তায় দুই কাহন (৩২ পন) সুপারি থাকে। সাধারণত, কেনার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা পর্যন্ত পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বস্তায় আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা লাভ হয়। কিন্তু, এ বছর বাজার এতোই খারাপ যে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে এখনই বলা কঠিন।’
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, ‘পঞ্চগড়ের মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে, এখানকার সুপারি আকারে বেশ বড় ও সুস্বাদু। তাই অনেকেই এখানে বাণিজ্যিকভাবে সুপারির চাষ করছেন।’
এ বছর প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এখন বাজার মন্দা হলেও, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন।
Comments