তিস্তার বুকে চরবাসীর বাঁশ-কাঠের সাঁকো
লালমনিরহাট সদরের খুনিয়াগাছায় মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কয়েকশ পরিবার তিস্তা নদীর কালমাটি মাঝের চরে বসবাস করেন। এই চরের কোল ঘেঁষে তিস্তার একটি শাখা নদীতে সেতু না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয় এসব বাসিন্দাদের। অবশেষে এখানে সাঁকো তৈরিতে নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন। সবার সামর্থ্য অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে সাঁকো তৈর করছেন তারা। এই সাঁকো নির্মিত হলে এখানকার মানুষের কষ্টের দিন শেষ হবে।
কালমাটি মাঝের চরের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘তিস্তা নদীর কারণে লালমনিরহাটের মুল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। আমাদেরর সঙ্গে সহজ ও নিকট যোগাযোগ হলো রংপুরের হারাগাছ। হাট-বাজার, কেনাকাটা সবকিছুই হারাগাছাতেই। শুধু আইনি অথবা সরকারি কোনো কাজে যেতে হয় লালমনিরহাটে। বর্ষাকালে তিস্তা যখন ভরপুর থাকে তখন আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আমরা একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় দুই লাথ টাকা খরচে আমরা সম্মিলিতভাবে তিস্তার একটি শাখা নদীর উপর ২০০ মিটার বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করছি। মাঝের চরের প্রায় সাড়ের চারশ পরিবারের সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
ওই চরের আরেক কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সাঁকো নির্মাণে আমরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেকবার ধর্না দিয়েও কোনো ফল না পাইনি। অবশেষে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সাঁকো তৈরি করছি। ২৬ এপ্রিল থেকে সাঁকো তৈরির কাজ শুরু হয় এবং আগামী ১৫ মের মধ্যে শেষ হবে।’
চরের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘চারদিকে নদী ঘেরা চরে আমাদের বসবাস। মাঝের চরে কোনো স্কুল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। সবকিছুর সেবা পেতে হয় হারাগাছ এলাকায়। চর থেকে এক কিলোমিটার দুনদ্বে হারাগাছ যেতে তিস্তার শাখার কারণে বর্ষাকালে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল যাতায়াত করতে ঝামেলায় পড়তে হয়। তিস্তার এই শাখার উপর সাঁকো নির্মাণের চেষ্টা অনেক দিনের। অবশেষে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সেই চেষ্টা সফল করছি।’
খুনিয়া-গাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চারদিকে তিস্তা নদী ঘেরা মাঝের চরে বসবাসকারী চরবাসী নিজ উদ্যোগে নিজেদের প্রয়োজনে সাঁকো বানাচ্ছেন। সাঁকোটি বর্ষাকালে তাদের চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তিস্তার বুকে নির্মাণধীন সাঁকোটি মজবুত ও টেকসই করতে সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন তিস্তার চরবাসীরা।
Comments