খাবারে বিষ মিশিয়ে মাদারীপুরে ১৫টি বানর হত্যা

Madaripur monkey killing.jpg
মাদারীপুরের মধ্যখাগদী এলাকায় ১৫টি মৃত বানর। ছবি: স্টার

খাবারে বিষ মিশিয়ে বানর নিধনের ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরে। গতকাল বিকালে মাদারীপুরের মধ্যখাগদী এলাকায় ১৫টি মৃত বানর উদ্ধার করে স্থানীয় কয়েকজন তরুণ। সন্ধ্যার পরে তারা বানরগুলোকে একটি খাল পাড়ে মাটি চাপা দেয়।

ঘটনার ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, একটি খালের পাড়ে মৃত বানরগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা। পাশে রয়েছেন কয়েকজন তরুণ। তখনও দুই-তিনটি বানর ছটফট করছে। মারা যাওয়ার পর তারা বানরগুলোকে মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও প্রচার হওয়ার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে। এভাবে বন্যপ্রাণী হত্যার বিচারের দাবি তুলেছেন অনেকেই।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, মাদারীপুর শহরের আট ও নয় নম্বর ওয়ার্ডে অন্তত আড়াই হাজার বানরের আবাস। বানরগুলোর খাদ্য সংকটের কথা বিবেচনায় সম্প্রতি ৭৬ দিনের একটি কর্মসূচি চালু করে সরকার। চলতি সপ্তাহে এই কর্মসূচি শেষ হয়েছে। খাবার সংকটে বানরগুলো এখন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

খাবারের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় বানরগুলো দলে দলে ভাগ হয়ে লোকালয়ে বসবাস শুরু করে। এর মধ্যে কিছু বানরকে স্থানীয়রা নিয়মিত খাবার দিচ্ছিলেন। এর পরও যে বানরগুলো অভুক্ত থেকে যাচ্ছিল তারা বাড়িতে প্রায়ই হানা দিচ্ছিল। কখনো কখনো খাবার ছিনিয়ে খাচ্ছিল। উৎপাত থেকে বাঁচতে এর মধ্যে ইটপাটকেল নিয়ে বানরদের ওপর আক্রমণও হয়েছে।

কিন্তু মঙ্গলবারের দিনটি ছিল ভিন্ন। সকাল থেকেই খাবারের আশায় বানরগুলো জড়ো হয় মধ্যখাগদী এলাকায়। স্থানীয় কয়েকজন খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেয়। এর মধ্যে কেয়েকজন বানরগুলোকে বাঁচানোরও চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর মৃত বানরগুলো একটি খাল পাড়ে নিয়ে মাটি চাপা দেয়।

বানরগুলোকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন মধ্যখাগদী এলাকার অপু হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘বানর তো আমাদের বাড়িতেও জ্বালায়। কখনো উৎপাত সহ্য করতে না পেরে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারি। আবার কখনো ঘর থেকে খাবার এনে ওদের নিজ হাতে খাওয়াই। কিন্তু বানরগুলোকে কেউ বিষ খাইয়ে এভাবে মেরে ফেলতে পারে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’

একই এলাকার ইয়ারসিন হোসেন বলেন, ‘বানরগুলোকে বাঁচাতে যখন ওদের মুখে পানি দেই, তখন আমাদেরই চোখেও পানি চলে আসে। আমরা বানরগুলোকে বাঁচাতে পৌরসভা ও বন বিভাগকে জানাই। কিন্তু তারা অনেক দেরি করে এখানে আসে। তখন ১৫টি বানর মরে যায়। সন্ধ্যার পরে আমরা সেগুলোকে মাটি চাপা দেই। এখনো অনেক বানর আছে যারা ওই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে। যারা বানরের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর কাজ করেছে, আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সুবল বিশ্বাস বলেন, ‘শুধু বানর বলে নয়, প্রতিটি পশুর প্রতি মানুষের আচরণ হওয়া উচিত, একজন মানুষের প্রতি মানুষের আচরণ যেমন, ঠিক তেমন। প্রাণীরা আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোনো মানুষ যদি পশু-পাখির প্রতি সহানুভূতিশীল না হন, তাহলে তার কাছ থেকে মানুষের প্রতি সহানুভূতি আশা করা যায় না। পশু-পাখি তো কোনো পাপ করতে পারে না। এত নিষ্পাপ প্রাণীর প্রতি যদি আমরা মমতা দেখাতে না পারি, তাহলে মানুষের প্রতি মমত্ব দেখাব কি করে?’

খাবারে বিষ দিয়ে বানর নিধনের খবর শুনে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জানতে চাইলে জেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা তাপস কুমার সেনগুপ্ত মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা আজও বিকালে বানরদের খাবার দিয়েছি। গত তিন মাস ধরে খাবার দেওয়া হচ্ছে। খাবারের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা বিষ প্রয়োগ করে বানরগুলো মেরেছে, তারা জঘন্য অপরাধ করেছেন। রাতে আমাদের বন বিভাগের লোক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’

বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago