লাইফস্টাইল

সামাজিক মাধ্যম কি হতে পারে গঠনমূলক সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু?

চলুন ফিরে যাই ১৯৮০ কিংবা ১৯৯০ এর দশকে। যখন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। দেশে তখনো যখন বেসরকারি চ্যানেলগুলোর আনাগোনা শুরু হয়নি।
ছবি: সংগৃহীত

চলুন ফিরে যাই ১৯৮০ কিংবা ১৯৯০ এর দশকে। যখন বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। দেশে তখনো যখন বেসরকারি চ্যানেলগুলোর আনাগোনা শুরু হয়নি।

মনে পড়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলোর কথা? ঘণ্টাব্যাপী বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো কেবল দুটি পক্ষের যুক্তির যুদ্ধক্ষেত্রই ছিলো না, সেখানে থাকতো গঠনমূলক সমালোচনা। এর সঙ্গে মিশে থাকতো একটু-আধটু হাস্যরসও!

সুন্দর বাচনভঙ্গিতে, দেশ-বিদেশের চলমান বিষয়বস্তুগুলো সম্পর্কে বেশ জ্ঞানের চর্চাও হয়ে যেত টেলিভিশন দেখতে দেখতে।

কিন্তু, সময়ের বিবর্তনে বিটিভির সিংহাসনে ধীরে ধীরে যোগ হলো দেশি-বিদেশি আরও অনেক চ্যানেল, আর সেই সঙ্গে বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলোও হারিয়ে গেল ধীরে ধীরে।

বিনোদনের বিভিন্ন উৎস আমাদের হাতে ধরা দিলো আর আমরা বেমালুম ভুলে গেলাম গঠনমূলক সমালোচনার সেই অনুষ্ঠানগুলোকে।

এবার ফিরে আসা যাক বর্তমানে। যোগাযোগের অন্যতম অংশ হিসেবে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোর জুড়ি মেলা ভার তো বটেই; বিনোদনের ক্ষেত্রেও তরুণদের কাছে খুব জনপ্রিয় এই প্লাটফর্মগুলো।

জনপ্রিয়তার একটি মুখ্য কারণ হচ্ছে ‘রিয়েলটাইম এনগেজমেন্ট’ যা সম্ভব হয়েছে ‘লাইভ’ কন্টেন্টগুলোর মাধ্যমে। যা আমাদের টিভি, রেডিও বা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব ছিল না।

কোভিড-১৯ এর ফলে সারা দেশ যখন লকডাউনে, তখন এই সামাজিক মাধ্যমগুলোর ব্যবহার আরও বেড়ে গিয়েছে। কারণ এখন আমরা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি ডিজিটাল কন্টেন্ট উপভোগ করছি। ইভেন্ট ও আলাপচারিতার জায়গা পূরণ করতে এখন বিভিন্ন প্লাটফর্ম প্রচার করছে বিভিন্ন ধরণের লাইভ শো।

কিন্তু, ‘রবি টেন মিনিট স্কুল’ নিয়ে এলো নতুন এক ধরণের লাইভ শো। ঐ যে আশি বা নব্বই দশকে বিতর্ককে নতুনভাবে আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে ‘টেন মিনিট স্কুল’ শুরু করলো ‘লাইভ ডিবেট’।

কিন্তু, এই লাইভ ডিবেটে অংশ নিবেন আমাদের দেশের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা মানুষেরা, যারা একজন আরেকজনকে চ্যালেঞ্জ করবেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। একটি গঠনমূলক সমালোচনা ও যুক্তির মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা করবেন।

লাইভ ডিবেটটির প্রথম পর্বে বিতার্কিক হিসেবে ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব মার্কেটিং, তাজদীন হাসান ও নগদ-এর হেড অব মার্কেট ডেভেলপমেন্ট সোলায়মান সুখন।

শো-টির হোস্ট ছিলেন রবি টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আয়মান সাদিক যিনি কিনা বেশ সুন্দরভাবে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন স্থির করে দিয়ে বিতর্কটি নিয়ন্ত্রণ করেন। লাইভ বিতর্কটি প্রচারিত হয় রবি টেন মিনিট স্কুলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ ও আয়মান সাদিকের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে।

নিয়মগুলোতে ছিলো— একজন তার প্রতিপক্ষকে কয়টি প্রশ্ন করতে পারবেন, উত্তর দেওয়ার জন্য কতখানি সময় পাবেন— এরকম আরও মজার-মজার কিছু নিয়ম। যেহেতু এটা প্রচারিত হচ্ছে ফেসবুকে, সেক্ষেত্রে অডিয়েন্স এঙ্গেজমেন্টের জন্য ব্যবস্থা থাকবে না তা কী হয়?

দুই পক্ষের উত্তরের যুক্তির ওপর নির্ভর করে দর্শকরা তাদের স্কোর জানাতে পারবেন লাইভে কমেন্ট করে! ব্যস! প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে মজার মজার ও সেই সঙ্গে কঠিন সব প্রশ্ন আসতে থাকলো। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসল সুন্দর সব যুক্তি, আর চলতে থাকল কমেন্টে স্কোরিং!

প্রশ্নগুলো ছিল বেশ কঠিন! যেমন, সেশনের শুরুতেই তাজদীন হাসান একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন সোলায়মান সুখনকে। সুখন কয়েকদিন আগে তার এক ভিডিওতে বলেন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিদেশপ্রীতিমূলক আচরণ দেখা যায় যা তার মোটেও পছন্দ নয়। কিন্তু দেখা গেছে, তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি বিদেশভ্রমণের দারুণ দারুণ সব পোজের ছবি আপলোড করেন! এই প্রশ্নের জবাবে সুখন বললেন— তিনি বিদেশপ্রীতিকে নিন্দা করেন ঠিকই কিন্তু দেশের সম্মানকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরাকে তিনি প্রশংসা করেন। তিনি সব তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যখনই আমরা যেকোন কারণেই বিদেশে যাবো। আমরা যাতে নিজ দেশের মাথা উঁচু রাখতে পিছপা না হই।’

একইভাবে, সুখনও তাজদীন হাসানকে প্রশ্ন করেন— দ্য ডেইলি স্টার কেন শুধু নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে? তাজদীন হাসান এর জবাবে বলেন, ‘সংবাদপত্র “সমাজের ডাক্তার” (Social Doctor) হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক, পাঠকদের অধিকার সঠিক তথ্য জানবার। শুধুমাত্র সংবাদ ছাপানোই নয়, বরং ডেইলি স্টার সেই সংবাদগুলোর সুষ্ঠু বিশ্লেষণ করে তার পাঠকের কাছে তুলে ধরে যা একটি সমাজকে পথ দেখায় তার কোন দিকে যাওয়া উচিৎ এবং তা সেদিকে যেতে পারছে কিনা।’

দর্শকরাও প্রতিটি প্রশ্ন ও উত্তরে তাদের মতামত জানাতে থাকেন এবং বেশ টানটান উত্তেজনায় চলতে থাকে অনুষ্ঠানটি। একজন দর্শক হিসেবে বলছি, এক পর্যায়ে আমি বেশ চিন্তিতই হয়ে পড়েছিলাম এটা ভেবে যে আলোচনাটি ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যায় কিনা। কারণ, প্রশ্নোত্তরগুলো বেশ কড়া-ই ছিলো! কিন্তু, আমার মতো সব দর্শককেই ভুল প্রমাণ করলেন বিতার্কিকেরা।

বেশ গঠনমূলক ও যথাযথ যুক্তি-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা আলোচনাটি করলেন। আর আয়মানের অবদানও এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবি রাখে। মধ্যস্থ হিসেবে তিনি বেশ ভালো ভূমিকা পালন করেন!

তাজদীন হাসান জানান, তিনি কেন সোশ্যাল মিডিয়াতে নেতিবাচক সংবাদ শেয়ার করেন। তার মতে, এটি তিনি এই উদ্দেশ্যে করেন যাতে করেন আমাদের সবার সমস্যাগুলো সঠিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং তারা এই সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে আসতে পারেন।

অপরদিকে সোলায়মান সুখন জানান, তিনি কেন শুধু সমাজের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি চান এগুলো থেকে যাতে বাকি সবাই অনুপ্রাণিত হতে পারেন ভালো কিছু করার।

ব্যক্তিগত জীবনে তো আমরা হর-হামেশাই বিভিন্ন বিষয়ে ‘ডিবেট’ করেই থাকি। তা সামনা-সামনি হোক, আর সোশ্যাল মিডিয়াতে হোক। একজনের মতামত বাকি সবাই পছন্দ করবে— তা সব ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।

ইদানিং যেকোন ছোট বিষয়কেই সহমর্মিতার চোখে না দেখে, আমরা তা নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করি। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, কটাক্ষ না করে আরেকজনের মতামতকেও গঠনমূলকভাবে বিশ্লেষণ করাটা খুব কঠিন কিছু নয়। বরং এতে প্রকাশ করে সামাজিকতা, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব।

এই শো-টির উদ্দেশ্য এটাই সবাইকে শেখানো। বিনোদনের মাঝেও গঠনমূলক সমালোচনার জন্য এ ধরণের ‘লাইভ ডিবেট’ আরও দেখতে পেলে খারাপ হয় না!

লাইভিটির রেকর্ডেড ভার্শন দেখতে ভিজিট করুন এই লিঙ্কে: https://www.facebook.com/aymansadiq10/videos/883636312113509/

নওরিন জাহান, ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now