প্রবাস

যে প্রক্রিয়ায় স্কুল খুলছে দক্ষিণ কোরিয়া

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় জীবনের নানা অনুষঙ্গের প্রয়োজনীয়তায় সাহায্য করছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে দিয়ে এগিয়ে থাকা দেশ কোরিয়া। প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে করোনা মোকাবিলায় অনন্য নজির তৈরি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। যা প্রশংসিত হয়েছে সারাবিশ্বে।
করোনার সংক্রমণের কারণে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলগুলো। ৯ এপ্রিল ২০২০। ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় জীবনের নানা অনুষঙ্গের প্রয়োজনীয়তায় সাহায্য করছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে দিয়ে এগিয়ে থাকা দেশ কোরিয়া। প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে করোনা মোকাবিলায় অনন্য নজির তৈরি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। যা প্রশংসিত হয়েছে সারাবিশ্বে।

করোনা আতঙ্ক পুরোপুরি কাটার আগেই আগামী ১৩ মে থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনায় আনা হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নানা কৌশল।

স্কুল বা শ্রেণিকক্ষের প্রবেশপথ ও কিছু কিছু ক্লাস রুমে বসানো হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানার, মাস্ক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীরা বসবে দূরত্ব মেনে তাদের নির্ধারিত আসনে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মোমিটার ও ফেস মাস্ক প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত মজুদ থাকবে। শ্রেণি বা সেকশনের আকার নিয়মিত শ্রেণিকক্ষের চেয়ে ছোট করা হচ্ছে (এ জন্য শিক্ষার্থীদের শিফটও বাড়ানো হচ্ছে), একজন শিক্ষার্থী একা এক ডেস্কে বসবে এবং প্রতিটি ডেস্ক অন্যদের থেকে প্রায় ২ মিটার দূরে থাকবে।

কোরিয়ান স্কুলগুলোতে সাধারণত দুপুরের খাবার দেওয়া হয়, এবার স্কুল খোলার পর ক্যাফেটেরিয়ার আসন ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রতিটি আসনে আলাদাভাবে কাঁচের পার্টিশন দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে মাস্ক খুলে খাওয়ার সময় নিরাপদ থাকা যাবে। কাঁচের পার্টিশন টেবিলগুলোর সঙ্গে যুক্ত এবং শিক্ষার্থীরা সবাই সারি বা একটি জিগজ্যাগ প্যাটার্নে বসে খাবার গ্রহণ করবে, যাতে তারা একে অপরের মুখোমুখি না হয়। শ্রেণিকক্ষে এয়ার কন্ডিশনার ও এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করার পরিবর্তে জানালা খোলা রেখে উন্মুক্ত বায়ু চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কোভিড-১৯ কোরিয়ান স্কুলগুলোর নতুন পরিবর্তন নিয়ে আসছে। আর শিক্ষামন্ত্রী ইয়ো ইউন হে বলেছেন, ‘হয়তো সহজেই কোভিড-১৯ পূর্বাবস্থায় আমাদের যেতে দেরি হবে। তাই স্কুলগুলো চালাতে নতুন পদ্ধতির জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’

স্কুলে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সব ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার আগে তাদের জ্বর, শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ইত্যাদি রয়েছে কি না, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আর প্রতিদিন এগুলো আপডেট করা হবে। আপডেট করা তথ্যগুলো এডুকেশন বোর্ড, রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য ব্যাংকে যাবে। যাতে মনিটর করা সহজ হয়। 

শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে প্রথমে ও দুপুরের খাবারের আগে দ্বিতীয়বার জ্বর পরীক্ষা করা হবে। যদি জ্বরের লক্ষণ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের লক্ষণে করোনার উপসর্গ দেখা যায়, তাদের প্রথমে পৃথক করা হবে এবং তারপরে কাছাকাছি ক্লিনিকগুলোতে ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নেওয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। যাতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া সহজ হয়। ‘যদি একজন শিক্ষার্থীও করোনায় আক্রান্ত হয়, তবে আবার অনলাইন এডুকেশনে ফেরত যাওয়া হতে পারে’— শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে এমন আভাসই মিলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০০ শতাংশ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে শ্রেণিকক্ষগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে, ডেস্ক পুনরায় সাজানো এবং থার্মাল ক্যামেরা ইনস্টল করে কোয়ারেন্টিনের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। যদিও একই দিন অর্থাৎ ১৩ মে সব ক্লাস খুলবে না। পর্যায়ক্রমে, মানে ধাপে ধাপে সবগুলো ক্লাস খুলে দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার বিরোধিতা করা একটি আবেদন গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি আবেদনকারী সহমত প্রকাশ করে। আর এর পরেই প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন সিউলের কয়েকটি স্কুলে প্রস্তুতির কার্যক্রম সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যাপ্ত প্রস্তুতিতে মুন সন্তুষ্ট হয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সরকারের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘বিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু হওয়া করোনার সংক্রমণের সমাপ্তি হিসেবে দেখা উচিত হবে না। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে আমরা যে অবাধ ও প্রাণবন্ত শ্রেণিকক্ষে থাকতাম, তেমন পরিবেশ এখনই ফিরে পাওয়া যাবে না। এর জন্যে আগামী কিছুদিন বিদ্যালয়ে ও বাড়িতে করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার রীতি মেনে চলতে হবে’— বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। হয়তো করোনা অনেকদিন থাকবে বা দ্রুত রেহাই দিবে বিশ্বকে। কিন্তু, কোরিয়ানদের লকডাউনের বাইরে বিকল্প পন্থায় সবকিছু চালু রাখার নানা প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago