করোনায় পুঁজি হারাচ্ছেন ফেরিওয়ালারা

ফেরিওয়ালা আসমা বেওয়া। ছবি: স্টার

করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফেরিওয়ালা আসমা বেওয়ার (৫৮) পুঁজি ছিল সাড়ে আঠারো হাজার টাকা। নগদ টাকা ছিল দশ হাজার আর পণ্য ছিল বাকি টাকার। গেল দুই মাসে তার নগদ টাকার পুঁজি শেষ হয়েছে। এখন তিনি অবশিষ্ট পুঁজির পণ্যগুলো কমদামে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের কথা ভাবছেন।

লালমনিরহাট পৌরসভার চুড়িপট্টি এলাকার ফেরিওয়ালা আসমা বেওয়ার দুঃখের শেষ নেই। বাকি পুঁজির পণ্যগুলোও যদি শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে বাঁচতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন থাকবে না তার।

আসমা বেওয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই ফেরিওয়ালা হিসেবে চুড়ি-ফিতা-স্নো-পাউডার বিক্রি করছেন তিনি। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করে জীবন চালান। থাকেন সরকারের খাস জমিতে। নিজের বলতে ছোট এক চালা টিনের ঘর আছে। করোনা সংক্রমণ তার জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে।

বলেন, ‘মোর কোন সয়সম্বল নাই যে মুই বেচায়া ফির ফেরি বেবসা শুরু করিম। হাতের এ্যাকনা ক্যাশ আছিল তাকো তো বসি বসি খানুং। এ্যালা চলার মতোন কোন পথ থাকিল না।’

আসমা বেওয়ার মতোই একই এলাকার আকলিমা বেওয়ার (৫৬) মুখে কোন হাসি নেই। তার পুঁজি ছিলো ২১ হাজার টাকা। নগদ সাড়ে ৯ হাজার টাকার পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। হাতে আছে বাকি পুঁজি সাড়ে ১১ হাজার টাকার পণ্য। তাকেও এখন পুঁজির পণ্য কমদামে বিক্রি করে জীবন বাঁচাতে হচ্ছে। আর এ পণ্যগলো চলে গেলে তার ভবিষ্যত হয়ে উঠবে অন্ধকারময়।

ফেরি ব্যবসা বাদ দিয়ে তাকে করতে হবে দিনমজুরি। কিন্তু এ কাজটাও ভালো বুঝেন না তিনি। কারণ, ছোটকাল থেকেই তিনি ফেরি ব্যবসায় নিযুক্ত।

আকলিমা বেওয়া বলেন, ‘মোর পুঁজিকোনা শ্যাষ হইলে মুই বাঁচবার নং। মোর কোন উপায় নাই ফের পুঁজি বানার। ফেরি ছাড়া মুই কিচু করবার পাং না। গ্রাম ঘুরি ঘুরি চুরি-ফিতা-স্নো-পাউডার বেঁচার অভ্যেস মোর।’

তাদের মতোই একই এলাকার ফেরিওয়ালা শাবানা বেগম, রাশেদা বেগম, কুলসুম বিবি, জাহানারা বেওয়া, দুলাল হোসেন, মজনু মিয়া, তবিবর রহমান, শামসুল ইসলামসহ অনেকের মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। করোনা দুর্যোগে তারা পুঁজি হারাচ্ছেন প্রতিদিন। অনেকে ইতোমধ্যে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন। এরা সবাই থাকেন খাস জমিতে।

ফেরিওয়ালা দুলাল হোসেন জানান, জেলায় বিভিন্ন পণ্যের প্রায় পনেরো শতাধিত ফেরিওয়ালা আছেন। তাদের কেউ গ্রামে, কেউ ট্রেনে, আবার কেউ বাসে বা বাস টার্মিনালে পণ্য বিক্রি করেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই তারা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে বসে আছেন।

‘আমাদের পুঁজি স্বল্প তাই পুঁজি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত। সব পুঁজি হারালে আমাদেরকে পথে বসতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

ফেরিওয়ালাদের তালিকা করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়া না হলে তারা পুঁজি হারিয়ে নিজেদের পেশা থেকে ছিঁটকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi killed by Israeli airstrike in Lebanon

Mohammad Nizam, 31, died at 3:23pm in Hazmiye area of Beirut, according to a social media post of Bangladesh embassy in Lebanon

1h ago