পর্যটনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

করোনাভাইরাস মহামারি কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ব্যাংককের স্ট্রিট শপগুলো আবারও খুলতে শুরু করেছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে শহরের বিখ্যাত পর্যটন এলাকাগুলোর রাস্তায় সাধারণত পর্যটকদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়।
ব্যাংককে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা সুখুমভিট

করোনাভাইরাস মহামারি কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ব্যাংককের স্ট্রিট শপগুলো আবারও খুলতে শুরু করেছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে শহরের বিখ্যাত পর্যটন এলাকাগুলোর রাস্তায় সাধারণত পর্যটকদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়।

দীর্ঘদিন পর রাস্তায় পাশে নিজের গিফট শপের ঝাঁপ খুলেছেন বিক্রেতা ক্লেটানা থ্যাংওয়ারাচাই। খাও সান রোডের ওই দোকানটিতে সারি সারি ঝুলছে চকচকে চুম্বক ও চাবির রিং। সাজানো আছে নানা ডিজাইনের সুতি কাপড়ের প্যান্ট, যা এশিয়ার ভ্রমণপিপাসুদের একটি অনানুষ্ঠানিক ইউনিফর্ম।

সাধারণ দিনে তার দোকানে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এখন ক্রেতা বলতে কেউ নেই। ৪৫ বছর বয়সী এই নারী এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাস্তার পাশে গিফট শপটি চালাচ্ছেন। এখনও প্রতিদিন এই আশায় দোকান খুলছেন যে, হয়তো কোনো পর্যটক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন তার দোকানে আসবেন।

এপ্রিল মাসে সমস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে থাইল্যান্ড। ক্লেটানার মতো অনেকেই এখন জীবিকার জন্য লড়াই করে চলছেন। কোভিড-১৯ মহামারির আগে তিনি দিনে ৩০০ ডলার আয় করতেন। তার সর্বোচ্চ আয় এখন দিনে দুই ডলার কখনো বা শূন্য।

বিক্রেতা ক্লেটানার জীবনসংগ্রামের কথা এভাবেই উঠে এসেছে সিএনএনের প্রতিবেদনে। করোনাভাইরাস মহামারিতে মারাত্মক হুমকির মুখে থাকা থাইল্যান্ডের পর্যটন খাত নিয়ে সিএনএন জানায়, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অন্যান্য পর্যটন নির্ভর দেশগুলো জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মতে, গত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটন প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১০ কোটি মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।

এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ বছর দেশটিতে ৬৫ শতাংশ কম পর্যটক যাবে।

হাজারো মানুষের জীবিকা ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনেক দেশই ঝুঁকি নিয়েও পর্যটন চালু রাখার উপায় খুঁজছে। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া দুদেশের মধ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার জন্য ‘ট্র্যাভেল বাবল’ (নিকটবর্তী কয়েকটি দেশের মধ্যে ভ্রমণ যোগাযোগ) তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীন অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সীমানা বন্ধ রাখলেও অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ চালু করেছে। থাইল্যান্ড কোয়ারেন্টিন অঞ্চলের মতো করে পর্যটন রিসোর্ট তৈরির বিষয় বিবেচনা করছে।

তবে, এসব নতুন উদ্যোগে ভ্রমণ চালু হলেও পর্যটন স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত পর্যটন ব্যবস্থা কেবল কয়েকটি দেশের মধ্যে, আঞ্চলিক ‘বুদবুদ’ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বের অনেক দেশ স্বল্প পরিসরে পর্যটক ভিসা ও আঞ্চলিক ভ্রমণ শুরুর পরিকল্পনা করছে।

ইউরোপে এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া- এই তিন দেশের নাগরিকদের জন্য ১৫ মে থেকে অভ্যন্তরীণ সীমান্ত খোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব দেশেই ভ্রমণ এমন আঞ্চলিক বুদবুদ ব্যবস্থার দিকে এগুবে।

থাইল্যান্ড ভিত্তিক প্রশান্ত মহাসাগরীয় এশিয়া ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পটা) প্রধান নির্বাহী মারিও হার্ডির জানান, আগামী কয়েক মাসে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড একটি ভ্রমণ করিডোর তৈরির কথা ভাবছে। তার মতে, দেশগুলোকে প্রথমে আঞ্চলিক ভ্রমণের সম্ভাবনার দিকে নজর দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যটন খাতকে বাঁচাতে হলে যেসব দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি তাদের বাদ রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশেষ করে, যে সমস্ত দেশ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল, তাদেরকে অর্থনৈতিক উদ্বেগ ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।

এভিয়াশন বিশ্লেষক ব্রেন্ডন সোবির মতে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যে আঞ্চলিক ভ্রমণ ব্যবস্থা চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ জোটবদ্ধ হয়ে ভ্রমণ চালুর বিষয়ে ভাবছে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হবে। যেসব দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাদের পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা যাচাই করতে হবে।’

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন ভূগোলবিদ বেনজামিন ইয়াকিন্তো জানান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ইতিমধ্যে একটি সুদৃঢ় রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তাই তাদের জোটবদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক।

এশিয়ায় পর্যটনের জন্য বৃহত্তম বাজার চীন। এক জরিপে দেখা গেছে, চীনা পর্যটকরা ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুব বেশি দূরে যান না। প্রতিবছর থাইল্যান্ডেই প্রায় ১১ মিলিয়ন চীনা পর্যটক ভ্রমণ করেন। তাই থাইল্যান্ডে ভ্রমণ চালুর ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক চুক্তি অগ্রাধিকার পেতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক ফ্রেয়া হিগিংস জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশের চীনবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে। এমন দেশগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই চীনারা ভ্রমণে কম আগ্রহী হবেন।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মহামারি সংকটের সময়ে ভূ-রাজনৈতিক খেলা বা কৌশলের কারণে পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now