পঞ্চগড়ে মরিচের টেপাপচা রোগে দিশেহারা চাষিরা

পঞ্চগড়ে চলতি মৌসুমে মরিচ চাষের শেষ পর্যায়ে ক্ষেতে ফল পচা বা টেপাপচা (অ্যানথ্রাক্সনোজ) রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগের কারণে অপরিপক্ব অবস্থায় মরিচ পচে ঝড়ে যাচ্ছে । এতে লোকসানের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার মরিচ চাষিরা।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাঁধানগর গ্রামের আক্রান্ত একটি ক্ষেতের মরিচ গাছে পচা মরিচ দেখা যাচ্ছে। ছবি: স্টার

পঞ্চগড়ে চলতি মৌসুমে মরিচ চাষের শেষ পর্যায়ে ক্ষেতে ফল পচা বা টেপাপচা (অ্যানথ্রাক্সনোজ) রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগের কারণে অপরিপক্ব অবস্থায় মরিচ পচে ঝড়ে যাচ্ছে । এতে লোকসানের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার মরিচ চাষিরা।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানান ঘন ঘন বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামা ও মাঝে মাঝে কুয়াশা পড়ার কারণে অ্যানথ্রাক্সনোজে আক্রান্ত হচ্ছে মরিচ খেত। এটি স্থানীয়ভাবে টেপাপচা রোগ নামে পরিচিত।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া মরিচ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ফলন ভালো হয়। এর ফলে প্রতি বছর আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এই মৌসুমে অধিক জমিতে আবাদ হয়েছে।

গত বছর জেলায় মরিচ চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে শুকনো মরিচ উৎপাদন হয়েছিল ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন।

চলতি মৌসুমে মরিচ চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে শুকনো মরিচে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন।

কৃষকরা জানান, সাধারণত প্রতি বিঘা (এক বিঘা সমান ০.৩৩০৬ একর) জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয় ২৮ থেকে ৩২ মণ। আর কাঁচা মরিচ শুকনা করা হলে সেখান থেকে বিঘায় ১০ থেকে ১২ মন শুকনো মরিচ পাওয়া যায়।

মৌসুমে এসব শুকনো মরিচ প্রতি মণ চার হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে এবার টেপাপচা রোগের কারণে মরিচের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

চাষিরা জানান, এতে তাদের উৎপাদন খরচ উঠানোই কঠিন হয়ে পড়বে। কষ্টকর হবে সার-কীটনাশকের দেনা পরিশোধ করা।

সম্প্রতি পঞ্চগড়ের বোদা ও আটোয়ারী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায় বিঘার পর বিঘা মরিচ চাষ করেছেন কৃষক। তবে ক্ষেতের অনেক গাছেই এই রোগ আক্রমণ করেছে। আক্রান্ত গাছ গুলোতে আসা ফল পচে মাটিতে ঝড়ে পড়ে আছে অপরিপক্ব অবস্থাতেই। কিছু এলাকায় কৃষকরা পরিচর্যা করেছেন আক্রান্ত মরিচ খেতের। কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলোকে রক্ষা করতে কীটনাশক স্প্রে করছেন।

জেলার আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এবার প্রায় দুই বিঘা জমিতে মরিচ আবাদ করেছি। পুরো সময়টা মোটামুটি ভালো গেলেও ফসল তোলার আগ মুহূর্তে পোকার আক্রমণ আর মরিচগুলোর গায়ে সাদা দাগ হয়ে পচে পড়ে যাচ্ছে। গাছগুলোও হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে।

মরিচ তুলতে না পারলে সার কীটনাশকসহ জমির মালিকের টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে ভেবে পাচ্ছি না।

বোদা উপজেলার ধনীপাড়া এলাকার মরিচ চাষি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘গত বছর দুই বিঘা জমিতে মরিচ আবাদ করে ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার আড়াই বিঘা জমিতে মরিচ বপন করি। মরিচও ভালোই ধরেছিল। কিন্তু বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঘন ঘন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় মরিচ গাছগুলো হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। দোকান থেকে কীটনাশক-ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরও কাজ হচ্ছে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, ‘ঘন ঘন বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামা ও মাঝে মাঝে কুয়াশা পড়ার মতো বৈরি আবহাওয়ার কারণে অ্যানথ্রাক্সনোজে, স্থানীয়ভাবে টেপাপচা রোগে, আক্রান্ত হচ্ছে মরিচ খেত।’

এ অবস্থায় ক্ষেতে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না এবং আক্রান্ত ক্ষেতে দশ লিটার পানির সঙ্গে পাঁচ মিলিলিটার ছত্রাকনাশক ছিটাতে (স্প্রে করতে) পরামর্শ দেন তারা।

আবু হানিফ জানান, জেলায় এবার স্থানীয় জাতের মরিচ ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের বাঁশগাইয়া, জিরা, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। উঁচু যেসব জমিতে অন্য ফসল ভালো হয় না সেসব জমিতেই বেশি মরিচ চাষ করেছেন চাষিরা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago