প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি সিলগালা করলেন আ. লীগ নেতা

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রাচীন আসাংম্রাই বুদ্ধ মূর্তি সিলগালা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছবি: স্টার

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী আসাংম্রাই (বুড়া গোঁসাই) বুদ্ধ মূর্তি সিলগালা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই মূর্তিটি সিলগালা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন মন্দিরের দায়িত্বরত অধ্যক্ষ ভিক্ষু উ গুণবদ্ধন পঞ্ঞা মহাথের।

তিনি বলেন, ‘সোমবার দুপুরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার ব্যক্তিগত সচিব শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বৌদ্ধ মূর্তিটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, গত ৫ মে মন্দিরের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সংরক্ষণের নামে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মন্দির কমিটিকে পাঠানো হয়। যোগাযোগ করা হলে মন্দির কমিটির সভাপতি থোয়াই চ প্রু মাস্টার বলেন, ‘আমরা তীব্র প্রতিবাদ করার পরেও, পবিত্র এই আসনটি সিলগালা করে দিয়েছে।’

মন্দির কমিটির সেক্রেটারি বা চ মং বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা পবিত্র মূর্তি সিলগালা করে সমগ্র বৌদ্ধদের অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।’

একটি কুচক্রী মহল মন্দিরের প্রায় ১৪ একর সম্পদ দখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন বা চ মং। একই কথা বলেন মন্দিরের দায়ক অং চ মং মারমা। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের এই গর্হিত কাজে আমরা খুবই মর্মাহত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

শেখ শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল চেয়ারম্যানের আদেশ পালন করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্য শৈ হ্লা বলেন, ‘মূলত প্রত্নতাত্ত্বিকদের দিয়ে প্রাচীন এই বৌদ্ধ মূর্তিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যই সিলগালা করে রেখেছি।’

উ গুণবদ্ধন পঞ্ঞা মহাথের জানান, প্রায় ২৪০ বছর আগে রাজা ক্য জাইন প্রু এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আসাংম্রাই বৌদ্ধ মূর্তিটি বুদ্ধের জীবদ্দশায় তৎকালীন আরাকানের রাজা চন্দ্রসূর্যের আমলের তৈরি বলে জানান তিনি। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রয়াত শ্রীমৎ উ পঞ্ঞা জোত মহাথের এই মন্দিরের অধ্যক্ষের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন বলেও তিনি জানান।

উ গুণবদ্ধন আরও জানান, এই মন্দিরেই উ পঞ্ঞা জোত মহাথের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অনাথ আশ্রম ও ফ্রি স্কুল ‘বি হ্যাপি লার্নিং সেন্টার। সেখানে প্রায় ৩১৭ শিশু পড়ালেখা করে।

যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বলেন, ‘জেলা পরিষদ আমাদের এই ব্যাপারে কিছুই জানায়নি।’

সিলগালা করার পরে জেলা পরিষদ মন্দিরের চাবি বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছিল। তবে থানা এতে রাজি হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি শহীদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলা পরিষদ আমাদের কাছে চাবি হস্তান্তর করতে চেয়েছিল। কিন্তু চাবি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জটিলতা থাকায়, আমরা চাবি নিতে রাজি হইনি।’

Comments

The Daily Star  | English

Public servants won’t be forced to retire

The Advisory Council has decided to abolish a provision of the Public Service Act, 2018, which allows the government to send public servants into forced retirement after 25 years of service.

7h ago