করোনাকালে ঘূর্ণিঝড়: আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধির কী হবে?

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। যা আগামী বুধবার নাগাদ ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরা-খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ কিলোমিটার, যা ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসের গতিবেগ বিবেচনায় যাকে বলা হচ্ছে ‘Extremely Severe Cyclonic Storm’। ঝড়ের সঙ্গে আছে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনাও।
Corona and Cyclone.jpg

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। যা আগামী বুধবার নাগাদ ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাতক্ষীরা-খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ কিলোমিটার, যা ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। বাতাসের গতিবেগ বিবেচনায় যাকে বলা হচ্ছে ‘Extremely Severe Cyclonic Storm’। ঝড়ের সঙ্গে আছে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনাও।

আমরা দেখেছি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র আছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬০০ থেকে ১২০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। যেখানে মানুষ গাদাগাদি হয়ে থাকেন আপদকালীন সময়টুকু পার করার জন্য।

কিন্তু এই করোনাকালে কী হবে?

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে যখন সবাইকে বলা হচ্ছে জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে, তখন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ভয় তো থেকেই যায়। তবুও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতেই হবে, এর বিকল্প নেই। কেননা, ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মুখে পড়লে প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে বেশি, সেখানে করোনায় আক্রান্ত হলেও প্রাণহানির ঝুঁকিটা কম এবং চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ আছে। সে যাই হোক, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, সবাইকে মাস্ক পড়ার সুবিধা নিশ্চিত করাসহ যতটা সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্ভব হলে, সন্দেহভাজন রোগীদের আলাদা রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হয়তো আরও ভালো উপায় দেখাতে পারবেন। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দ্রুততম সময়ে নিতে হবে।

প্রস্তুত হতে হবে ভবিষ্যতের জন্যও। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের ৫ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ১ লাখ ৩৮ হাজার। সেই অবস্থা থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নতি করেছে, যার প্রমাণ ২০০৭ সালে সিডরের মত সুপার সাইক্লোনেও মানুষের মৃত্যু আটকে রাখা গেছে ১০ হাজারের মধ্যে। এর পরের ঘূর্ণিঝড় গুলোতে জান-মালের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশকে এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেল বলা হয়। অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি পূর্বাভাস ব্যবস্থা জোরদার, প্রশাসনের দ্রুত সাড়াদান ও লাখো প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীর চেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দিন যায় আর তার সঙ্গে নতুন নতুন সমস্যা যুক্ত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনে বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়বে। হয়তো তার সঙ্গে যুক্ত হবে অজানা অন্য কোনো সমস্যা। আমরা কি তার জন্য প্রস্তুত?

পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষের সক্ষমতা বাড়াতে দরকার নতুন চিন্তা ও প্রযুক্তি। যার কিছু কিছু এরইমধ্যে মানুষের হাতে আছে। তার সব না বলে শুধু ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের কথায় আসি।

জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উপকূলের সাড়ে তিন কোটি মানুষকে দুর্যোগ সহনশীল করে গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি অনেক উদ্যোগের পাশাপাশি কাজ করছে ব্র্যাকও। কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা ও মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক একটি নতুন ও সাশ্রয়ী সমাধান বের করেছে। তা হচ্ছে জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়ি।

গত বছর থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়ি বা মিনি সাইক্লোন শেল্টার নিয়ে কাজ করছে ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের অধীনে উপকূলের সবচেয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ১০টি পরিবারের জন্য ১০টি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দোতলা এসব ভবন ২৫০ কিলোমিটার গতিবেগের জড়ে টিকে থাকতে পারবে। ঘরের উচ্চতা ঠিক করা হয়েছে গত ১০০ বছরের জলোচ্ছ্বাসের হিসাব মাথায় রেখে, যাতে তা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। দোতলায় মানুষ এবং নিচতলায় গবাদি পশুর আশ্রয় হবে।

৬৫২ বর্গফুটের এই বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারবেন আশপাশের কয়েক বাড়ির ৩৫-৪০ জন। যাদের সবাই চেনা-জানা, তাই করোনা ভয়ও থাকবে না। অন্যদিকে আশ্রয়ের জন্য বেশি দূরেও যেতে হবে না। কমে আসবে ক্ষয়-ক্ষতি। তাছাড়া এসব বাড়িতে আছে সৌর বিদ্যুৎ, বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও।

এমন একটি বাড়ি বানাতে খরচ হচ্ছে কমপক্ষে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। যা অতি দরিদ্রদের অনুদান বা ভর্তুকি দিয়ে করে দিতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে দুর্যোগ মোকাবিলায় পাথেয় হবে। যাদের একটু সামর্থ্য আছে তাদের জন্য এমন বাড়ি করা খুব কঠিন হবে না। ভবিষ্যতে উপকূলের প্রতিটি বাড়িকে গড়ে তুলতে হবে এক একটি মিনি সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে। দরকার শুধু পথ দেখানো।

আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খান: কর্মসূচি প্রধান, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, ব্র্যাক।

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago