ভালো ফলন, তবুও দুশ্চিন্তায় দিনাজপুরের লিচু চাষিরা

দিনাজপুর ও আশেপাশের জেলার লিচু চাষিরা করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কীভাবে তাদের ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ছবি: স্টার

দিনাজপুর ও আশেপাশের জেলার লিচু চাষিরা করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কীভাবে তাদের ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

লিচু চাষিরা সারা বছর তাদের লিচু গাছের যত্ন নেন বছরের এই স্বল্প সময়ে ফল বিক্রির জন্য। মাত্র চল্লিশ দিন থেকে দুমাসের মধ্যে তাদের লিচু বাজারজাত করতে হয়। এই সময়ের মধ্যে লিচু বাজারজাত করতে না পারলে অপূরণীয় ব্যবসায়িক ক্ষতির মধ্যে পড়বেন তারা।

দেশের ৬৪ জেলার ৩০টিতে লিচুর চাষ হয়। কিন্তু, দিনাজপুরের লিচু স্বাদের জন্য বিখ্যাত এবং উত্তরের জেলাগুলো লিচুর প্রধান উত্স।

উৎপাদকরা বলছেন, দ্রুত পচনশীল লিচু পরিবহন করাটাই এই মৌসুমের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

লিচু সাধারণত ট্রাক, বাস, ট্রেন এমনকী উড়োজাহাজে সারা দেশে পরিবহন করা হয়। তবে শাটডাউনের কারণে এ বছর পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা হবে।

ঈদের পর মে মাসের শেষের দিকে দিনাজপুরের কৃষকরা গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু করতে পারেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বাগানের মালিকরা জানান যে তারা ফেব্রুয়ারির শেষে লিচু গাছগুলোতে বেশ ভালো ফুল দেখতে পেয়েছিলেন এবং আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে।

দিনাজপুর সদরের মাশিমপুর গ্রামের মো. মনসুর আলী বলেন, ‘আমরা এ বছর ভালো উত্পাদন আশা করছি।’

তবে রমজানে লিচুর মৌসুম শুরু হওয়ায় লিচু চাষিরা গত দুবছর ধরে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, রোজায় লিচু কম খাওয়া হয়।

এ বছর, চলমান শাটডাউনের কারণে আবারও লিচু চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ক্ষতির মুখে পড়ার। অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী তাদের বিনিয়োগের মূলধন হারাতে বসেছেন বাজারজাত না করতে পারার কারণে।

খানসামা উপজেলার ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে লিচু বাগানেই পচে যাবে।’

শাটডাউন ও সংক্রমণের ভয়ে অন্যান্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরে লিচু কিনতে আসছেন না বলেও যোগ করেন তিনি।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা রয়েছে। তবে সেসব জেলার ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরের বাগানের বুকিং দিতে আসতে পারেননি বলে জানান বাগানের মালিকরা।

তাই কৃষকদের আরও এক বছর ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন খানসামার লিচু চাষি ওসমান গণি। তার বাগানের ২৫ শতাংশ লিচু অবিক্রীত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ‘এ বছর, করোনাভাইরাস আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করে দেবে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।’

লিচু চাষিরা ক্ষতি তাদের বাঁচাতে সরকারকে কোনো উপায় বের করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কমপক্ষে ছয় মাস লিচু সংরক্ষণ করা যায় এমন সুবিধার ওপর জোর দেন তারা।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জেলা প্রশাসন সারা দেশে লিচু পরিবহনের সুবিধার্থে ব্যবস্থা নেবে।’

গত শনিবার, কৃষিক্ষেত্রের খাদ্য অপচয় ও ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে মৌসুমি ফলের পরিবহন ও বিপণনের উন্নয়নের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় দশ দফা উদ্যোগ এবং সুপারিশ ঘোষণা করেছে।

সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- খাদ্য পণ্য সরবরাহ করার পর ফিরে আসা খালি ট্রাকের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল কমানো, ফলন উৎপাদন অঞ্চলে অন্যান্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিকভাবে চলাচলের ব্যবস্থা এবং সেসব অঞ্চলে ব্যাংকিংয়ের সময় বাড়ানো।

দিনাজপুরের বিখ্যাত লিচু

বিশেষত দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলার লিচুর স্বাদের খ্যাতি রয়েছে।

দিনাজপুরে বোম্বাই, মাদ্রাজি, চীন-১, ২ ও ৩ এবং বেদানা জাতের লিচু চাষ করা হয়। এর মধ্যে বেদানা সবচেয়ে ভালো এবং স্বাদযুক্ত। তাই এটা সবচেয়ে দামি।

এ বছর দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন।

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

9h ago