করোনাভাইরাস

নোয়াখালীতে আক্রান্ত আরও ৪৭ জনের মধ্যে বেগমগঞ্জেই ৪৩, দিশেহারা স্বাস্থ্য বিভাগ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় দ্রুত বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩ জন। এর মধ্যে ৩০ জনই চৌমুহনী পৌর বাজার এলাকার। এ অবস্থায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়।
Chowmuhoni Bazar-1.jpg
বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে লকডাউন শিথিলভাবে পালন হওয়ায় করোনা আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। ছবি: স্টার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় দ্রুত বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩ জন। এর মধ্যে ৩০ জনই চৌমুহনী পৌর বাজার এলাকার। এ অবস্থায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জন কার্যালয়।

বেগমগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিবেশী জেলা লক্ষ্মীপুরের চেয়েও অনেক বেশী। গতকাল রাত পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলার নয়টি উপজেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৪ জন। এর মধ্যে বেগমগঞ্জেই ১০৪ জন।

এ জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা রোগীর চিকিৎসা শয্যা আছে মাত্র ৮২টি। জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের আশঙ্কা, প্রতিদিন বেগমগঞ্জে যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, আরও শয্যা বাড়ানো না হলে স্বাস্থ্য বিভাগকে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মো. মোমিনুর রহমান বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীকে করোনা সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় ও বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গতকাল ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে যে ৪৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৩ জনই বেগমগঞ্জ উপজেলার। তাদের মধ্যে ৩০ জনই চৌমুহনী বাজার এলাকার।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নোয়াখালীর প্রতিবেশী জেলা লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় রবিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৯ জন। আর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জেই করোনা আক্রান্ত ১০৪ জন।

বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাস বলেন, ‘প্রতিদিনই স্রোতের মতো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ কারণে চৌমুহনী বড় উদ্বেগের জায়গা। বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী শহরে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে অর্ধশত ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতিনিয়তই লোক সমাগম ঘটে, আর সে কারণেই করোনার সংক্রমণ হচ্ছে। কিছুতেই লোক সমাগম সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ রোধে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন চৌমুহনী বাজারে লোক সমাগম ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি অবস্থা জারির জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর গত মঙ্গলবার লিখিত আবেদন করেছিল।’

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১১ এপ্রিল নোয়াখালী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে লকডাউন অনেকটা শিথিলভাবে পালন হওয়ায় এখানে করোনা আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরী চৌমুহনীতে লকডাউন শিথিলভাবে পালনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘চৌমুহনী বাজারে ফুটপাতের ব্যবসা ছাড়াও সাত হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সেগুলোতে দুই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। পাইকারি বাজার হওয়ার কারণে এখানে লোক সমাগম ও যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’

নোয়াখালী জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন ডা. মো. মোমিনুর রহমান বলেন, ‘জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। এখন করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘জেলার করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে মাইজদী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে দুটি ইউনিটে ৮২ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে চিকিৎসা সেবা চলছে। তবে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশিরভাগকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে যাদের শারীরিক উপসর্গ রয়েছে তাদেরকে আইসোলেশনে এনে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী খাঁন বলেন, ‘এ জেলায় করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও সে অনুযায়ী জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসনের কোনো প্রস্তুতি নেই।’

বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তায় নবনির্মিত ‘প্রাইম হাসপাতাল-২’-তে জরুরিভিত্তিতে করোনা চিকিৎসার আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। করোনা শনাক্ত রোগীদের অনেকে আছেন, যাদের বাড়িতে একটি মাত্র কক্ষ আছে। তাদের পক্ষে বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হিতে বিপরীত হচ্ছে।’

করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, ‘যে হারে বেগমগঞ্জসহ জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে বড় ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে। আইসোলেশন শয্যা বাড়াতে হবে। না হয় নতুন আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিপদে পড়তে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে নোয়াখালীতে চিকিৎসক ও নার্স সংকট নেই। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে। চৌমুহনীতে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে চৌমুহনীতে লোক প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

S Alam sons: They used fake pay orders even to legalise black money

Ashraful Alam and Asadul Alam Mahir, two sons of controversial businessman Mohammed Saiful Alam, deprived the state of Tk 75 crore in taxes by legalising Tk 500 crore in undisclosed income, documents obtained by The Daily Star have revealed.

2h ago