বাংলাদেশে আম্পানের কেন্দ্র সুন্দরবন
বাংলাদেশে সুপার সাইক্লোন আম্পানের কেন্দ্র হবে সুন্দরবন— এমনটিই ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রথম সুপার সাইক্লোন হলেও সিডরের চেয়ে ক্ষতি কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আম্পান ৫ শ কিলোমিটারের ভেতরে না আসা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে এর গতিপথ বলা যাবে না। এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে সুন্দরবন হবে এর কেন্দ্র। স্থলভাগে ওঠার সময় এটি আর সুপার সাইক্লোন থাকবে না বলে আমরা মনে করছি। এর গতি কমে ১৪০ থেকে ১৮৪ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। যাকে বলা হয়, ভেরি সিরিয়াস সাইক্লোন।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ শক্তিশালী ঝড় খুব একটা গতিপথ পরিবর্তন করে না। তবে ঝড়টি যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে পূর্ব দিকে ঝুঁকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। পূর্ব দিকে ঝুঁকলে ঝড়টি পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে সরাসরি আঘাত করবে। ঝড় বড় হলে জলচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকে। আমরা আশঙ্কা করছি, ৭ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জলচ্ছ্বাস হতে পারে। ঝড়ের কেন্দ্র যদি সুন্দরবন হয়, সে ক্ষেত্রে জলচ্ছ্বাসেও ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।’
‘আগামীকাল ভোররাত থেকে মেঘ জমতে শুরু করবে। মূল ঝড় পাস করতে বিকাল বা সন্ধ্যা হতে পারে’— বলেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাচ্ছে, সুপার সাইক্লোন আম্পান উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে রয়েছে আম্পান। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার ও কক্সবাজার থেকে ৭৬৫ দক্ষিণপশ্চিমে এবং মোংলা থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯০ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঝড়ের কেন্দ্রে ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৩৫ কিলোমিটার। ঝড়ো হাওয়ার মতো যা বেড়ে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দাঁড়াচ্ছিল। সাধারণত বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন ঘোষণা দেওয়া হয়।
খুলনা বিভাগ এবং ঢাকা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, ভোলা, ফেনী, রাজশাহী ও পাবনার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে। পূর্বাভাস বলছে, রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর বলছে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দ্ররে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনীর ওপর দিয়ে জলচ্ছ্বাস বয়ে যাবে।
ঝড় অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। বয়ে যেতে পারে ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হওয়া।
Comments