জাবি শিক্ষকের ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ অ্যাপ

অ্যাপেই মিলবে করোনা ঝুঁকির তথ্য: ‘কোভিড ফাইন্ডার’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান (বামে) এবং একই ইন্সটিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী রাজন হোসেন (ডানে) । ছবি: সংগৃহীত

করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় বাধা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ বা সামাজিক সংক্রমণ। এর জন্য প্রয়োজন রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের শনাক্ত করা। যত দ্রুত শনাক্ত করা যাবে এই ভাইরাস তত বেশি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকে বলে ‘কনট্রাক্ট ট্রেসিং’। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি কোথায় গিয়েছিল, কার কার সংস্পর্শে এসেছে, কত সময় ছিল এমন তথ্য জানা। এই মহামারির সময়ে এই তথ্য জানাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এ কাজটি আপনার হাতের মোবাইলে ডাউনলোড করা অ্যাপের মাধ্যমেই করা যায়, তাহলে কেমন হয়?

হ্যাঁ, এমনই একটি অ্যাপ যৌথভাবে তৈরি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান ও একই ইন্সটিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী রাজন হোসেন।

ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো। রাজন হোসেন মন্সটারল্যাব বাংলাদেশে এ সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

তারা তাদের অ্যাপের নাম দিয়েছেন ‘কোভিড ফাইন্ডার’। এটি শনাক্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুব সহজেই খুঁজে দেবে। গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি নামিয়ে নাম ও মোবাইল নম্বর দিলেই চালু হয়ে যাবে এটি। অ্যাপে তৈরি হয়ে যাবে ইউনিভার্সালি ইউনিক আইডেন্টিফায়ার (ইউইউআইডি)। এটি মূলত একটি ইউনিক সংখ্যা যা একটি মোবাইল নম্বরের জন্য একটিই তৈরি হবে।

অ্যাপটি ব্লুটুথের মাধ্যমে কাজ করবে। এটি সব সময় ঝুঁকির কথা বলবে। যেমন- অনেক রোগী সত্য তথ্য দেন না। তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, এই অ্যাপ থাকলে সেটি আর পারবেন না। বড় বড় শপিংমল কিংবা অফিসগুলোতে এর মাধ্যমে অবাধ যাতায়াত ও ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।

এর জন্য সারাক্ষণ ইন্টারনেট সংযোগ লাগবে না। আবার যখন খুশি এটিকে বন্ধও রাখা যাবে।

এসব তথ্য জানান অ্যাপটির উদ্ভাবক ড. ওয়াহিদুজ্জামান। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কীভাবে উপৃকত হবে— জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশেও এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া সম্ভব। আমরা অ্যাপটির কাজ শেষ করেছি। প্রয়োজন হলে আরও নতুন ফিচার যোগ করতে পারবো।’

‘ভারতে “আরোগ্য” নামে এক ধরনের অ্যাপ ব্যবহৃত হচ্ছে,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে এমন অ্যাপ পুরোমাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরেই প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ফলে ওই দেশগুলো কোভিড প্রতিরোধে সাফল্য পাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে।’

তিনি মনে করেন, ‘কোভিড কিন্তু খুব সহজেই যাচ্ছে না। এটিকে ম্যানেজ করতে হবে। হঠাৎ নতুন কোনো ভাইরাসের উপদ্রব দেখা দিলেও কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং জরুরি হয়ে পরবে। তাই দীর্ঘস্থায়ী জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে এই অ্যাপটি খুবই কাজে দিবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অ্যাপের সাফল্য আসবে তখনই, যখন এর ব্যবহার বাড়বে। এই অ্যাপের সবচেয়ে ভালোর দিক হলো, এটি ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা দেবে। কারোর জন্যই আক্রান্ত ব্যক্তির নাম কিংবা মোবাইল নম্বর সম্বলিত কোনো তথ্য উন্মুক্ত থাকবে না। শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানই (যেমন-আইইডিসিআর কিংবা জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা সংস্থা) এটি জানতে পারবে।’

যেহেতু যেকোনো কোভিড সংক্রান্ত অ্যাপ চালু করতেই সরকারের অনুমোদন লাগে, সেহেতু এটি তখনই আলোর মুখ দেখবে যখন সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আর এটি শুধু একটি অ্যাপই নয়, এর সঙ্গে আরও অনেকগুলো ফ্যাক্টর যেমন: সার্ভার, চেকার মেশিন, ডেটা মাইনিং ইত্যাদি জড়িত। এর কার্যক্রম করতে হবে সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে, তাই বাজট সম্পর্কে বলাটা মুশকিল। সরকার কাজ শুরু করলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাথে বসে বাজেট করতে পারবে এবং যেহেতু প্রতিবেশী দেশগুলো অ্যাপের কাজ শুরু করে দিয়েছে, তাই আশা করা যায় আমরাও খুব দ্রুত শুরু করতে পারব।

আমরা চেষ্টা করছি যাতে শুধু মোবাইল নম্বর দিয়ে যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেন, গত ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে তিনি এসেছেন কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত পরীক্ষা করানো যাবে। আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষার সংখ্যাও কমে যাবে। করোনার লক্ষণ দেখার আগেই অ্যাপ ব্যবহারকারী নিজের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Money laundering: NBR traces Tk 40,000cr in assets abroad

The National Board of Revenue has found assets worth nearly Tk 40,000 crore in five countries which it believes were bought with money laundered from Bangladesh, said the Chief Adviser’s Office yesterday.

7h ago