রাজধানীতে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া নারী ও তার ২ মেয়েকে মারধরের অভিযোগ
রাজধানীতে বাড়ি ভাড়ার জন্য এক গারো নারী ও তার দুই মেয়েকে জনসম্মুখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে। গত ১৭ মে রাজধানীর গুলশান থানার অধীন কালাচাঁদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা হলেন— শুভ্রা ঘাগরা (৪৫) এবং তার দুই মেয়ে মৌ ঘাগরা (২৫) ও ঝুমু ঘাগরা (১৭)।
শুভ্রা ঘাগরার অভিযোগ, সময় মতো বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় তাদের মারধর করা হয়েছে। তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাড়িওয়ালা নজরুল ইসলামের পরিবার বলছে, করোনার মধ্যে ভাড়াটিয়ারা তাদের অতিথি বা আত্মীয়দের বাসায় আনুক, তারা তা চায়নি। এ কারণেই তাদের মধ্যে ‘ধস্তাধস্তি’ হয়েছে।
দ্য ডেইলি স্টারকে শুভ্রা ঘাগরা বলেন, ‘ঘটনার দিন (১৭ মে) সকালে বাড়িওয়ালা এ মাসের ভাড়া চাইতে আসেন। তখন তিনি বাড়িওয়ালাকে ২০ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন। কারণ, তার দুই মেয়ে পার্লারে কাজ করে। কিন্তু, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ। এই কারণেই তাদের কিছুটা সময় দরকার। কিন্তু, বাড়িওয়ালা নজরুল এ কারণে রেগে গিয়ে অশালীন আচরণ করেন।’
‘ওইদিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমার দুই মেয়ে ও তিন বছরের নাতনি মিলে স্থানীয় কাঁচাবাজার থেকে কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফেরার পর ভবনের গেট বন্ধ পায়’, যোগ করেন শুভ্রা।
তিনি জানান, ওই বাসার পাঁচতলার দুই রুমের ফ্ল্যাটে তারা ভাড়া থাকেন। যেটার মাসিক ভাড়া ১২ হাজার টাকা।
মৌ ঘাগরা বলেন, ‘ওইদিন দারোয়ানকে গেট খুলে দিতে বললে তিনি জানান, বাড়িওয়ালার নির্দেশ। গেট খোলা যাবে না। এরপর এক পর্যায়ে বাড়িওয়ালা নজরুল এসে আমাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী এসে যুক্ত হন এবং আমাদের গায়ে হাত তোলেন। তখন বাড়িওয়ালার ছেলেও যুক্ত হয়ে আমার ছোট বোনের গলা চেপে ধরে। সে সময় আমাদের কেনা শাক-সবজি সব রাস্তায় পড়ে যায়।’
‘বারান্দা থেকে ঘটনা দেখতে পেরে আমাদের মা নিচে নেমে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। মারধরে আমাদের জামা-কাপড় ছিঁড়ে যায়’, বলেন তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, এ ঘটনার পর তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশের সহায়তায় তারা বাসায় ঢোকেন।
অভিযোগ পেয়ে গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ বেলাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে যান।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে বাড়িওয়ালা নজরুলের স্ত্রী ফাতেমা বেগম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তারা সবসময় আত্মীয় নিয়ে আসেন। আমরা নিষেধ করেছি, যেন এই লকডাউনের সময় তারা কাউকে না নিয়ে আসেন। কিন্তু, তারা শোনেননি। ওই দিনও তারা অতিথি নিয়ে আসেন। এর জন্য আমার সঙ্গে মেয়েদের ধস্তাধস্তি হয়। এর বেশি কিছু না।’
বাড়িওয়ালা নজরুলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ‘তিনি অসুস্থ’ বলে ছেলেকে ফোন দেন ফাতেমা বেগম। তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা ফাহাদ ইসলামও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অতিথি আনার বিষয়ে মৌ ঘাগরাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ওইদিন বাসায় কোনো অতিথি আনিনি। অতিথি আনার ব্যাপারে সবসময়েই বাড়িওয়ালার বিধি-নিষেধ ছিল। সেটা করোনাভাইরাসের আগে থেকেই। বিশ্বাস না হলে অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞেস করুন।’
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মারধরের ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। যারা ঘটনাটি দেখেছেন, তারা বলেছেন, শুভ্রা ঘাগরা ও তার মেয়েরা বাড়িওয়ালার পরিবারের লাঞ্ছনা ও মারধরের শিকার হয়েছেন।
ওই বাসার পাশের এক বাসার দারোয়ান নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি দেখেছি বাড়িওয়ালার ছেলে ভাড়াটিয়াদের একজনের গলা চেপে ধরেছে আর বাড়িওয়ালার স্ত্রী আরেকজনের গালে চড় মেরেছেন। রাস্তায় সবার সামনেই তারা এটি করেছে।’
ওই বাড়িরই এক ভাড়াটিয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাড়িওয়ালা প্রায়ই আমাদের সঙ্গে এবং আমাদের কাছে কোনো অতিথি আসলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’
গুলশান থানার এসআই মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘আমি বাড়িওয়ালার কাছ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ চেয়েছি। ফুটেজ দেখার পর আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়নি বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক যে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। যে কারণেই হোক, ভাড়াটিয়াদের গায়ে বাড়িওয়ালার হাত তোলা ঠিক হয়নি।’
‘যেহেতু এই বিষয়টি গুলশান থানার এসআই মোহাম্মদ বেলাল দেখছেন। আমি আশা করবো, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে’, বলেন তিনি।
Comments