ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে শরণখোলাবাসী

Bagerhat Beriu Badh.jpg
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ এর পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ। ছবি: স্টার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপকূল জুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়াও বইছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে নদ-নদীর পানি। সময় যত গড়াচ্ছে সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত শরণখোলা উপজেলাবাসীর আতঙ্ক তত বাড়ছে।

একদিকে সুন্দরবনের কোলঘেষা বলেশ্বর নদীর তীরে এই উপজেলার অবস্থান। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ এর পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ। দুইয়ে মিলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের খবরে বেশ আতঙ্কিত এলাকাবাসী। এবারের শঙ্কা যেন একটু বেশিই। কারণ কয়েকদিন আগে ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা ও বগি অংশের একশ মিটারের বেশি বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন আশার আলো মসজিদ ও সাইক্লোন শেল্টারটিও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে কয়েকগুণ বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আম্পান আঘাত হানলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ থেকে পানি ঢুকে সাউথখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হবে। গবাদি পশু ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় নান্টু শেখ, রহিম ও লুলু মল্লিক জানান, বলেশ্বর নদীর পাশে বেড়িবাঁধ না থাকায় সিডরের সময় শরণখোলা উপজেলাবাসী সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার বেড়িবাঁধ থাকার পরও তারা শঙ্কায় আছেন। বেড়িবাঁধের যে অবস্থা একটু জলোচ্ছ্বাস হলেই এই গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম ভেসে যাবে। শুকনো মৌসুমে বার বার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করেনি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, ‘যেকোনো ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা, চালতেবুনিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য দেওয়া বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। যার ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবন বাঁচানোর জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও, মূল্যবান জিনিসপত্র ও গবাদি পশু রেখে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেত রাজি হয় না। এ ছাড়া, আমাদের এসব এলাকায় মানুষের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের পরিমাণ অনেক কম। সবকিছু মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি যদি তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আঘাত হানে, তাহলে সাউথখালী ইউনিয়নবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

শরণখোলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য হালিম শাহ বলেন, ‘সোমবার বিকাল থেকেই আমরা স্থানীয়দের সতর্ক করে মাইকিং শুরু করেছি। এলাকার বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা মানুষের পাশে থাকবেন।’

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের নিকটতম আশার আলো মসজিদ ও সাইক্লোন শেল্টারে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ওই এলাকার মানুষদের জন্য আশপাশের সুবিধাজনক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে সবার আগে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নেওয়া হবে। তাদের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।’

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘সম্প্রতি ভেঙে যাওয়া স্থানে আমরা রিং বেড়িবাঁধ দিয়েছি। আম্পানে যদি আবারও ওই স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English
Former president Hamid airport CCTV footage

The story of Hamid’s exit

Security footage obtained and analysed by The Daily Star shows that Hamid's car reached the barrier gate of the VIP terminal at 12:46am on May 8

11h ago