সাতক্ষীরায় ২৫ স্থানে বাঁধ ভেঙেছে, ২ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় সাড়ে সাত ঘণ্টার তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার। ঝড়ে অসংখ্য গাছ ও কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন দুই জন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায়ই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় দেশের উপকূলবর্তী এলাকা। ছবি: স্টার

ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় সাড়ে সাত ঘণ্টার তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার। ঝড়ে অসংখ্য গাছ ও কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন দুই জন।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যায় ৯ থেকে ১০ ফুট। জলোচ্ছ্বাসে জেলার খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ, ইছামতি ও চুনোনদীর ২২-২৫ স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে ১০ হাজার চিংড়ি ঘের।

গাছগাছালি পড়ে সাতক্ষীরা সঙ্গে শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয়েছে ৭০ ভাগ আমের।

সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিস পরিদর্শক জুলফিকার আলী জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব পড়তে থাকে বুধবার বেলা ৩টার দিকে। ৪টার দিক থেকে প্রচণ্ড বেগে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ের গতিবেগ কমতে থাকে রাত সাড়ে ১১ দিকে। এ সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার। ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭২ দশমিক ৪ মিটার। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শেষ হয়।

সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের রতন তরফদার বলেন, ‘গতকাল বিকেল ৪টার দিকে প্রবল আকার ধারণ করে ঘূর্ণিঝড়। হুহু শব্দে প্রবল বেগে ঝড়-বৃষ্টিতে পুরো এলাকাই কাঁপছিল। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষ আতঙ্কে চিৎকার করছিল, আল্লাহকে ডাকছিল। এ যেন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ ও ২ অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি, জেলেখালি, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি, ঝাপা, চাউলখোলা, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা, রমজান নগর ইউনিয়নের গোলাখালী, কাশিমারি ইউনিয়নের ঝাপালি, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি, পূর্ব দূর্গাবাটি, কালীগঞ্জ উপজেলার মধুরেশপুর ইউনিয়নের চিংড়ি, ভাড়াশিমুলিয়া ইউনিয়নের খায়েরঘাট, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা, কুড়িকাউনিয়া, সুভদ্রকাটি, ঘিলারআইট, হিজলিয়া, হরিশখালী, আশাশুনি সদরে দোয়ারঘাট, শ্রীউল্যা ইউনিয়নের হাজরাখালী, ও সাতক্ষীরা সদর ইউনিয়নের শাকদাহের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে।

আশাশুনির প্রতাপনগর, রমজাননগরের গোলাখালি, বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালি,পূর্ব দূর্গাপুর ও গাবুরার নাপিতখালি ও জেলেখালি এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

শ্যানগর উপজেলার গাবুরা ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, নাপিতখালি ও জেলেখালি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। নাপিতখালি ও জেলেখালিসহ সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনা ও পাঁচ হাজার চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে।

একই কথা জানান বাড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল। তিনি বলেন, পূর্ব দুর্গাবাটির একস্থানে ও দাতিনাখালির তিন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে দাতিনাখালি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, বুড়িগোয়ালিনি, কলাবাড়ি, পূর্ব দুর্গাবাটি, টুঙ্গিপাড়াসহ আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা লোকালয়ে পানি ঢোকায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি তিন শতাধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে।

রমজান নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল মামুন জানান, গোলাখালি বাঁধ ভেঙ্গে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও ২৫-৩০টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, ইউনিয়নের চাকলা, কুড়িকাউনিয়া ,সুভদ্রকাটি, ঘিলারআইট, হিজলিয়া, হরিশখালি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢুকে চার হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। বাড়ির আঙ্গিনায় পানি ঢুকেছে পড়ায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ- শ্যামনগর, মুন্সিগঞ্জ-নীলডুমুর ও মুন্সিগঞ্জ-হারিনগর সড়কের ওপর অসংখ্য গাছ পড়ে আছে। ফলে কোনো ধরনের যান চলাচল করতে পারছে না। এমনকি মানুষও চলাচল করতে পারছে না।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, শহরের এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় আম কুড়াতে যেয়ে গাছের ডাল মাথায় পড়ে কহিনুর বিবি (৪০) নামের একজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা সদরের বাঁকাল সরদার পাড়ায় শামছুর রহমান (৬৫) নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে নারিকেল গাছ ভেঙ্গে তার মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নূরুল আমিন জানান, এখন ভরা আমের মৌসুম। জেলায় ৫,২৯৯টি বামবাগানে চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ঝড়ে জেলায় উৎপাদিত আমের শতকরা ৭০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চাষিরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের ও বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ২০-২৫ স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে কতটি ঘর ও গাছগাছালি ভেঙ্গে পড়েছে তা নিরুপণ চলছে। একইভাবে কতটি চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে তাও এখনি বলা যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে যাতে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হয় সে বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago