মার্চ থেকে বেতন নেই ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় সুগার মিলে

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে গত দুই মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ছয় হাজার ৫৬১ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত থাকায় শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে হিমসিম খাচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ।
Protest at Thakurgaon sugar mills
বেতন-ভাতার দাবিতে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস অফিসের সামনে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ। ছবি: ফাইল ফটো

ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে গত দুই মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ছয় হাজার ৫৬১ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত থাকায় শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে হিমসিম খাচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ।

মিল দুটির ১,৩৪৭ জন শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন গত মার্চ থেকে বকেয়া পড়ে রয়েছে।

এমনকী, এই দুই মিলে কমপক্ষে ৩৭৩ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী যারা ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবসর নিয়েছেন তারা এখনও অবসর ভাতা কিংবা অন্যান্য সুবিধাধি পাননি।

এ অবস্থায় অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। কীভাবে তারা আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন এ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা-হতাশা। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, বকেয়া বেতন ও অবসরকালীন সুবিধার দাবিতে প্রায়ই বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন তারা।

গত বুধবার অবসর ভাতার দাবিতে মিল অফিসের সামনে প্রায় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বিক্ষোভ করেন। এর আগের দিন চাকরিরত শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়াসহ বেতনের দাবিতে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াৎ হোসেনের অফিস ঘেরাও করে।

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের কর্মচারী কাজল রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা মার্চ মাস থেকে প্রায় তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। ঈদুল ফিতরের আগে বেতন পাই কিনা তা এখনও অনিশ্চিত। বেতন না পেলে ঈদ হবে কি করে?’

এক প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, ‘আমরা যখনই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে যাই, তারা বলেন যে চিনি বিক্রি নেই বলে বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

অবসরে যাওয়া মিলের শ্রমিক মকবুল হোসেন বলেন, ‘দুই বছর অবসর নেওয়ার পরেও অবসর গ্রহণের সুযোগ না পাওয়ায় আমি পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’

‘আমার মতো প্রায় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধাদির জন্য প্রায়ই অফিসে যান, তবে কোনও ফল হয় না,’ যোগ করেন তিনি।

বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী গত বুধবার ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড প্রাঙ্গণে ডেইলি স্টারকে জানান, অবসর সুবিধার অর্থের জন্য কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন অর্থ বরাদ্দ না করা পর্যন্ত অবসর সুবিধাদি প্রদান করা সম্ভব নয়।’

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড ও পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেডের যথাক্রমে ১১৬ জন ও ২৫৭ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীর প্রাপ্য পরিশোধের জন্য যথাক্রমে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রয়োজন।

ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা চিনি বিক্রি করে বেতনের ব্যবস্থা করি। চিনি বিক্রি না হওয়ায় অর্থ ঘাটতির কারণে বেতন বকেয়া পড়েছে। বেতনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া যাবে বলে আশা করি।’

মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. হুমায়ুন কবীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখানকার ৭২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৪০০ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে ঈদকে সামনে রেখে দশ হাজার টাকা করে অগ্রিম হিসেবে দেওয়া হয়েছে।’

পঞ্চগড় সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী রুহুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা মার্চ পর্যন্ত কর্মীদের বেতন দিয়েছি। ঈদের পরে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ চিনি ও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ও কর্মচারীদের অবসর সুবিধা প্রদান সম্ভব নয়।’

সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ে গত মৌসুমে ৫৪ হাজার ২১৪ টন কাঁচা আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে।

উৎপাদিত চিনির মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে যার বাজার মূল্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা।

পঞ্চগড়ে গত মৌসুমে ৪১ হাজার ৭৯০ টন আখ থেকে ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন চিনি উত্পাদন করা হয়েছে।

২০১৯ সালে, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন চিনি উত্পাদিত হয়েছিল।

দুই মৌসুমে উৎপাদিত চিনির মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন চিনি বা প্রায় ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকার চিনি এখন পর্যন্ত অবিক্রীত রয়েছে।

মিল গেটের মূল্য অনুযায়ী এক মেট্রিক টন চিনির দাম ৬০ হাজার টাকা।

এদিকে, চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ডিলাররা রাষ্ট্রায়ত্ত মিল থেকে বর্তমানে চিনি তুলতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের চিনির মূল্য কেজি প্রতি ৬০ টাকা। অপরদিকে, বেসরকারি কারখানার বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৫৪ টাকা।

কর্পোরেশনের ডিলার হাসান আলী বলেন, ‘গ্রাহকরা বেসরকারি মিলগুলিতে (শোধনাগার) উত্পাদিত চিনি কিনতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ, তা দেখতে সরকারি মিলের চিনির চেয়ে বেশি সাদা।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago