ব্যক্তিত্ব

সংবিধান বিষয়ে আনিসুজ্জামানের স্মৃতি

যেকোনো রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন সেই রাষ্ট্র ও তার জনগণের জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন ছিল আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা বাঙালি জনগোষ্ঠী দীর্ঘ দুই যুগের (১৯৪৭-৭১) বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক যতগুলো আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সেগুলোর কেন্দ্রে ছিল একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র বা সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি। স্বাধীনতার পর সংবিধান রচনার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়েছিল। আনিসুজ্জামান খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন সংবিধান রচনার সেই মুহূর্তগুলো। তিনি তার আত্মজীবনীতে সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন। তার আত্মজীবনীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সংবিধান রচনার স্মৃতিগুলোকে একসঙ্গে পরিবেশন করেছেন সংবিধান বিষয়ে গবেষক আরিফ খান।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭-১৪ মে ২০২০)। ছবি: সংগৃহীত

যেকোনো রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন সেই রাষ্ট্র ও তার জনগণের জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন ছিল আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা বাঙালি জনগোষ্ঠী দীর্ঘ দুই যুগের (১৯৪৭-৭১) বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক যতগুলো আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সেগুলোর কেন্দ্রে ছিল একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র বা সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি। স্বাধীনতার পর সংবিধান রচনার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়েছিল। আনিসুজ্জামান খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন সংবিধান রচনার সেই মুহূর্তগুলো। তিনি তার আত্মজীবনীতে সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন। তার আত্মজীবনীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সংবিধান রচনার স্মৃতিগুলোকে একসঙ্গে পরিবেশন করেছেন সংবিধান বিষয়ে গবেষক আরিফ খান

ড. কামাল হোসেন [১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি] এত্তেলা পাঠালেন : বাংলাদেশের সংবিধান-রচনার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি খসড়া তৈরি করবেন ইংরেজিতে, আমাকে তার বাংলা করে দিতে হবে, শেষ পর্যন্ত বাংলাটাই গৃহীত হবে প্রামাণ্য ভাষ্য বলে। বললাম, একা পারবো না, একটা দল চাই। তিনি বললেন, আপনি লোক বেছে নিন। 

প্রথমেই যার কথা আমার মনে হয়েছিল, সে নেয়ামাল বাসির। সে আমার আবাল্য বন্ধু, বাংলা-উর্দু-ফারসিতে তার অগাধ অধিকার, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সে ছিল দোভাষী, ওই পরিষদের দপ্তর ঢাকায় চলে আসার পরে হয়েছে সহকারী বিতর্ক-সম্পাদক। ভাষাজ্ঞানের সঙ্গে সংসদীয় বিষয়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সংবিধান-রচনায় কাজে আসবে। নেয়ামালকে প্রস্তাবটা দিতেই সে রাজি হয়ে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আর কাকে সঙ্গে পাওয়া যায়? সে তার এক সহকর্মীর কথা বললো, ভদ্রলোকের নাম বোধহয় এ কে এম শামসুদ্দীন। স্থির হলো, আমরা তিনজনে মিলে কাজটা করবো।

তার [নেয়ামাল বাসির] ভাষাজ্ঞান এবং সংসদীয় রীতিনীতির অভিজ্ঞতা সংবিধানের বাংলা করার কাজে আমাদের বড়ো সহায় হয়। সে বারবার বলতো, বাংলা শব্দ উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করার যে-সুযোগ আমরা পেয়েছি, তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। তবে সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির সদস্যেরা অনেকক্ষেত্রে প্রচলিত ইংরেজি পরিভাষা রক্ষা করার পক্ষপাতী ছিলেন, তাই আমাদের সকল প্রস্তাব তাঁরা মেনে নেননি। ন্যায়পালের মতো অনেকগুলো পরিভাষা ছিল নেয়ামালেরই উদ্ভাবন। ভাষা ব্যবহারে সে খানিকটা রক্ষণশীল ছিল এই অর্থে যে, মূল ইংরেজিতে বহুবচন থাকলে বাংলায়ও বহুবচন-ব্যবহার সে আবশ্যক বিবেচনা করতো। যেমন, পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্সের বাংলা সে করেছিল সংসদীয় বিষয়াবলি। আমার মতে, এখানে বিষয় বললে চলে, বিষয়াবলি বলার দরকার হয় না। তার যুক্তি ছিল এই যে, ইংরেজি ও বাংলা দুই পাঠের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্যে ব্যাকরণগত গঠন একরকম হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমি তার কথা মেনে নিয়েছিলাম।

সংবিধান-প্রণয়নকালীন বিভিন্ন পর্যায়ের খসড়া, বিল আকারে উপস্থাপিত সংবিধানের পাঠ এবং সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টের যে-কপি নিজের কাছে রেখেছিলাম, সৌভাগ্যক্রমে তা [হাতের কাছে] পেয়ে গেলাম। এর ফলে অনেক কথা এসবের ওপর নির্ভর করে বলা যাবে এবং স্মৃতিনির্ভর দু-একটা বলা কথাও এই সুযোগে সংশোধন করে নেওয়া যাবে।

মনে পড়ে, আইনমন্ত্রী দপ্তরে এক দুপুরে কামাল আর আমি মুখোমুখি বসে। প্যাডের কাগজে খসখস করে কামাল লিখতে শুরু করলেন সংবিধানের প্রস্তাবনা। এক স্লিপ লেখা হলে সাদা কাগজের সঙ্গে সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি অনুবাদ করতে শুরু করলাম। একটা অনাস্বাদিত শিহরণ জাগলো দেহে-মনে : এই আমার স্বাধীন দেশ, তার সংবিধান-রচনার কাজে হাত দিয়েছি।

কামালকে বললাম, অনুবাদটা মাজাঘষা করতে হবে, বাড়ি নিয়ে যাই। তিনি বললেন, মূলটারও কিছু উন্নতি ঘটাতে হবে, কাল আবার বসবো একসঙ্গে।

১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসলো। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে যাঁরা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই এর সদস্য। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ শহীদ হয়েছেন; পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে জহিরুদ্দীন, ফয়জুল হক, ওয়াবদুল্লাহ মজুমদার, এস বি জামানের মতো কয়েকজন দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তাঁরা আর সদস্য নন গণপরিষদের। তাও চার শতাধিক সদস্য। গণপরিষদের অধিবেশনের শুরুতেই কয়েকটি কমিটি গঠিত হলো, তার মধ্যে ‘শাসনতন্ত্র কমিটি’ একটি। আইন ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কামাল হোসেন তার সভাপতি, আর সদস্য ৩৩ জন। তাঁরা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, আবদুর রহিম, আবদুর রউফ, মো: লুতফর রহমান, আবদুল মমিন তালুকদার, আবু সাইয়িদ, মোহাম্মদ বয়তুল্লাহ, আমীরউল ইসলাম, বাদল রশীদ, খোন্দকার আব্দুল হাফিজ, নূরুল ইসলাম মনজুর, শওকত আলী খান, হুমায়ুন খালিদ, আছাদুজ্জামান খান, এ কে মোশারাফ হোসেন আকন্দ, আবদুল মমিন, শামসুদ্দীন মোল্লা, আব্দুর রহমান, ফকির শাহাবুদ্দীন আহমদ, আবদুল মুন্তাকীম চৌধুরী, খোরশেদ আলম, সিরাজুল হক, দেওয়ান আবুল আব্বাছ, হাফেজ হাবীবুর রহমান, আবদুর রশীদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নূরুল ইছলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ খালেদ, রাজিয়া বাণু ও ডা: ক্ষিতীশচন্দ্র মন্ডল। রাজিয়া বাণু ছিলেন একমাত্র মহিলা সদস্য, আর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন বিরোধী দলীয় একমাত্র সদস্য, তিনি তখন ছিলেন মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে। শাসনতন্ত্র কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছিল ১৭ এপ্রিল।

সংবিধানের কাজে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে পনেরো দিন আমি ঢাকায় থেকেছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশে পুরো সময়টাই কাটিয়েছি ঢাকায়। এক-আধবার ছাড়া সড়কপথে নিজেই গাড়ি চালিয়ে সপরিবারে আসা-যাওয়া করেছি। গণপরিষদ-ভবনের পরে যা রূপান্তরিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আমাকে একটা কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেখানেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেটেছে। কখনো বেশি রাত হয়ে গেলে কামালের বাড়ির বসার ঘরে শুয়ে বাকি রাত যাপন করেছি, সকালে সে-বাড়িতেই নাশতা করে দ্রুত চলে এসেছি গণপরিষদে।

কমিটির বৈঠকে কামালের ইংরেজি ভাষ্য এবং আমাদের অনুবাদ গণপরিষদের সচিবালয়ের মারফত বি জি প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়ে উপস্থাপিত হতো। কমিটির সদস্য না হয়েও আমি প্রতি বৈঠকে উপস্থিত থেকেছি, অনেক সদস্যের উপস্থিতির হার তুলনায় অনেক কম ছিল। মন্ত্রীদের মধ্যে খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এইচ এম কামরুজ্জামান খুব কমই আসতেন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ আসতেন মাঝে মাঝে। তাজউদ্দীন যেদিন আসতেন, সেদিন আলোচনায় যোগ দিতেন সাগ্রহে। কোনো কমিটিতেই সব সদস্য অংশ নেন না এটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

সংবিধানের বিষয়ে পরামর্শ দিতে বঙ্গবন্ধু দুবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন কামালকে, সঙ্গে আমিও ছিলাম। তাঁর প্রথম বক্তব্য ছিল রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সংযোগ ছিন্ন করার একটা বিধান থাকতে হবে সংবিধানে। ১২ অনুচ্ছেদে এ-বিষয়ে কিছুটা বলা হয়েছিল, তবে বঙ্গবন্ধু যা চেয়েছিলেন, তা সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্ত অংশে রূপ পেয়েছিল। দ্বিতীয়বার তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান-আমলে সরকার অস্থিতিশীল হয়েছিল মূলত পরিষদ-সদস্যদের দলবদলের ফলে কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের বিপক্ষে ভোটদানের ফলে। এটা বন্ধ করা দরকার। নির্বাচিত সদস্য যদি দলের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হন কিংবা কোনো ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত হবে কিংবা তাঁর সদস্যপদ চলে যাবে এমন একটা নিয়ম করা দরকার। তবে এমন ক্ষেত্রে তিনি উপনির্বাচনের বা পরবর্তী কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হবার অযোগ্য হবেন না, সে-ব্যবস্থাও থাকতে হবে। এই অভিপ্রায়ই সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে প্রকাশ পেয়েছিল।

১২ অনুচ্ছেদের বিধান নিয়ে শাসনতন্ত্র কমিটিতে বেশ বিতর্ক হয়েছিল। চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সম্পাদক মোহাম্মদ খালেদ এবং আরও দু-একজন সদস্য কথাটা উঠিয়েছিলেন। তাঁরা বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন যে, মুসলমান হিসেবে তাঁরা এক অখণ্ড জীবনবিধানের অধীন সেখানে ধর্ম ও রাজনীতিকে পৃথক করা চলে না, তাঁদের রাজনৈতিক জীবনও ধর্মবিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, বাংলাদেশকে তাঁরা ধর্মীয় রাষ্ট্ররূপে দেখতে চান। বাংলাদেশে পালিত ধর্মের মধ্যে রাষ্ট্র কোনো পক্ষপাত করুক কিংবা ধর্মীয় কারণে নাগরিকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য ঘটুক, তা তাঁদের অভিপ্রায় নয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিষয়ে—যেমন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাঁরা ধর্মীয় অনুশাসন দ্বারাই পরিচালিত হতে চান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অধিকাংশের মত তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন।

তর্ক প্রবল হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্তকরণের প্রশ্নে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আছাদুজ্জামান খান। ৪২ অনুচ্ছেদে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বা না দিয়ে রাষ্ট্রের পক্ষে সম্পত্তি অধিগ্রহণের বিধান করা হয়েছিল এবং সেই বিধানের আওতায় প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই বলে বা ক্ষতিপূরণ অপর্যাপ্ত হয়েছে বলে তেমন আইনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছিল। এ-বিষয়ে যাঁরা আপত্তি তুলেছিলেন, তাঁরা বলেছিলেন যে, বিনা ক্ষতিপূরণ সম্পত্তির অধিগ্রহণ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী; তাছাড়া নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে রাষ্ট্র যদি সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে, তাহলে সম্পত্তির মালিকের আদালতে সুবিচার প্রার্থনা করার অধিকারও থাকা দরকার, এই অধিকারও তাঁর মৌলিক অধিকার বলে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মেনে না নিয়ে কমিটিতে তাঁরা ভিন্নমতপোষক লিখিত মন্তব্য দিয়েছিলেন কার্যবিবরণীর অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে। পরবর্তীকালে, মনে হয়, কামাল বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে এসব সদস্যকে বুঝিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করা থেকে তাঁদের বিরত করেছিলেন।

সংবিধান-রচনার কাজে সাহায্য হবে মনে করে বিচারপতি এফ কে এম মুনীমকে আইন-সচিব নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগ অংশে যেসব বিধান করা হচ্ছে, তাতে উচ্চমেধাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রজাতন্ত্রের কর্মে যোগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিসের সদস্যেরা যেমন জ্যোতির্ময় ছিলেন, আমাদের সিভিল সার্ভিস সে-তুলনায় হীনপ্রভ হয়ে পড়বে। কামাল তাঁকে বলেছিলেন যে, উচ্চমেধাসম্পন্নেরা সিভিল সার্ভিসে যোগ না দিয়ে পেশাগত জীবনে গেলে দেশ বেশি উপকৃত হবে।

কামাল খসড়া তৈরি করে যাচ্ছিলেন আর আমরা অনুবাদ করে যাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে বাংলা ভাষ্যের প্রয়োজনে কামাল তাঁর ইংরেজি বাক্য বা তার বিন্যাস পরিবর্তন করতেন। নেয়ামালের পটুত্ব খুব কাজে এসেছিল। শব্দের উদ্ভাবনে তার নৈপুণ্য ছিল। ওমবুড্সম্যানের প্রতিশব্দ ন্যায়পাল তারই তৈরি। তবে তার মধ্যে এক ধরনের রক্ষণশীলতা ছিল। যেমন, ইংরেজিতে বহুবচন থাকলে বাংলায় সে বহুবচনই ব্যবহার করবে; মূলে যদি পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স থাকে, তাহলে অনুবাদে সে সংসদ-বিষয়াবলি করবে, কিছুতেই সংসদ-বিষয়ক করতে রাজি হবে না। সে বারবার বলতো, দেখো, এক জায়গায় গিয়ে তুমি হয়তো দেখবে, বাংলায়ও বহুবচন ব্যবহার না করে উপায় নেই, তখন কী হবে? ইংরেজির বহুবচন বাংলায় কোথাও একবচন করবো, আবার কোথাও বহুবচন করবো, এতে সংগতি থাকে না। তবে সংবিধানে সে আরো বাংলা পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিল, আমিও ছিলাম। কিন্তু শাসনতন্ত্র কমিটিতে আমি সেগুলোর অনুমোদন নিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। শাসনতন্ত্রের বদলে সংবিধান শব্দটা গ্রহণ করাতেই আমাকে বেগ পেতে হয়েছিল। তা যখন গৃহীত হলো, তখন কমিটিও পরিচিত হলো সংবিধান-প্রণয়ন কমিটি বলে। স্পিকারের প্রতিশব্দ হিসেবে কেউ অধ্যক্ষ মেনে নিতে চাইলেন না। একজন বললেন, ওতে মফস্বল কলেজের অধ্যক্ষ মনে হয়। তিনি নিজেই মফস্বল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, তুমুল হাস্যরোল আর করতালির মধ্য দিয়ে তাঁর কথা প্রায় সকলেই অনুমোদন করেছিলেন। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পরে এর ভাষার আলোচনায় আবুল মনসুর আহমদ ইত্তেফাকে লিখেছিলেন, পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসির কনসেপ্টটাই পাশ্চাত্যের, তাই ইংরেজি পরিভাষা ব্যবহার করলে দোষ হতো না, বরঞ্চ জাতীয় সংসদ না বলে পার্লামেন্ট কিংবা রাষ্ট্রপতি না বলে প্রেসিডেন্ট বলাই আমাদের উচিত ছিল। আমরা যতদূর পারি, একই ইংরেজি শব্দের জন্যে একই বাংলা শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলাম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিপ্রেক্ষিত-অনুযায়ী অবশ্য ভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

কামাল হোসেন এক পর্যায়ে স্থির করলেন, তাঁর ইংরেজি খসড়ার চূড়ান্ত রূপদানের জন্যে একজন পেশাদার আইনি খসড়া-প্রণেতার ইংরেজিতে যাকে লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান বলা হয়, তেমন একজনের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। দেশে তেমন কেউ ছিলেন না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাইভেট মেম্বারস বিল তৈরি করতো একটি আইনি প্রতিষ্ঠান। তার এক সদস্যকে এই কাজে নিযুক্ত করা হলো কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সৌজন্যে। রবার্ট গাথরি ছিলেন একজন আইরিশ আইনজীবী। ভালো মানুষ এবং স্বভাবত পরিশ্রমী। তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন ধারণা তাঁর ছিল না। বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ শুনে কামাল যখন ৩৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে একটা শর্ত জুড়ে দিলেন, তখন গাথরি আমাকে বললেন, ‘ইট্’স স্টিফলিং দি অপোজিশন’। পাকিস্তান-আমলে ধর্মের রাজনৈতিক অপব্যবহার সম্পর্কে আমি তাঁকে অবহিত করলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধর্মের নামে কেমন সব অত্যাচার হয়েছে, তাও জানালাম, কিন্তু তাতে তাঁর মনের দ্বিধা কাটেনি। তবে যেহেতু তাঁকে একটা বিশেষ পেশাগত কাজ করতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সে-কাজটি তিনি যত্নের সঙ্গেই করে গেলেন। বাংলা পাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। তাই তিনি আমাকে একাধিকবার বলেছিলেন যে, ইংরেজি ভাষ্যের বাংলা রূপান্তরে অসুবিধে হলে আমি যেন তাকে জানাই, তিনি তা পুনর্লিখন করে দেবেন। এক-আধবার তেমন করেও দিয়েছিলেন।

সংবিধান-রচনার প্রথম পর্যায় থেকেই সকল রাজনৈতিক দলের এবং অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রস্তাব, পরামর্শ বা মতামত চাওয়া হয়েছিল, পাওয়াও গিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল এবং তা নিয়ে তার নেতাদের সঙ্গে কামাল আলাপও করেছিলেন। বিচার বিভাগের অংশটা প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেখানো হয়েছিল। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে একটি সুপ্রিম কোর্ট-গঠনের ধারণা তাঁর ভালো লাগেনি; তিনি চেয়েছিলেন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট আলাদা থাকবে। বাংলা ভাষ্যে জাস্টিস শব্দের বাংলা করা হয়েছিল বিচারপতি, কিন্তু যেখানে সুপ্রিম কোর্টের জাজ বলা হয়েছে, সেখানে আমরা বিচারক করেছিলাম। বিচারপতি সায়েম চাইলেন, বাংলায় উভয় ক্ষেত্রেই বিচারপতি শব্দের প্রয়োগ করা হোক। আমি তাঁকে বললাম, জাজ ও জাস্টিস শব্দের পার্থক্যরক্ষার খাতিরে যথাক্রমে বিচারক ও বিচারপতি করা হয়েছে এবং সে-পার্থক্য থাকা দরকার। তিনি বললেন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা সর্বত্র বিচারপতি বলে পরিচিত, তুমি তাঁদের মর্যাদা কমাতে চাও? আমি আর তর্ক করিনি, তবে তাঁর কথা মেনেও নিইনি। কিন্তু তাঁর অপ্রসন্নতা দূর হয়নি। বহুকাল পরেও তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না, তুমি বিচারপতিকে বিচারক করে দিয়েছো।’ তাঁর সঙ্গে আমাদের দূরসম্পর্কের একটা আত্মীয়তাসূত্র ছিল, তিনি আমাকে আবাল্য দেখে আসছেন, সুতরাং আমাকে তিরস্কার করার অধিকার তাঁর ছিল। সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদ এবং আরো কারো কারো সঙ্গেও সংবিধানের খসড়া নিয়ে কামাল হোসেন আলাপ করেছিলেন।

সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির সদস্য নন, মন্ত্রিসভার এমন সদস্যদের সঙ্গেও সংবিধানের খসড়া নিয়ে একদিন বৈঠক হয়েছিল। তাতে মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী উপস্থিত ছিলেন, তিনি তখন মন্ত্রী। ৪৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও কর্তব্য যেখানে নির্দেশ করা হয়েছে, সেখানে তিনি যোগ করার প্রস্তাব দিলেন যে, রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাকে কমিশন করবেন অর্থাৎ কর্মভার দেবেন। কামালের এতে প্রবল আপত্তি। তিনি বললেন, এটি রাষ্ট্রপতির নিত্যনৈমিত্তিক নির্বাহী দায়িত্বের অন্তর্গত এবং তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ হওয়ার মতো বিষয় হতে পারে না। ওসমানী খুব ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়লেন, ইংরেজিতে বললেন, রাজার স্বাক্ষরিত একটা পার্চমেন্টই তো একজন সেনা কর্মকর্তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—এটার প্রেরণায়ই সে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিতে যায়। আমাদের দেশেও তো রাষ্ট্রপ্রধান এই কাজটি করেন, ভবিষ্যতেও করবেন। সংবিধানে তা লিখতে আপত্তি কেন? দেশের জন্যে যারা প্রাণ দিতে প্রস্তুত, ওতে তাদের মর্যাদা একটু বৃদ্ধি পাবে মাত্র। পরে কারো কাছ থেকে সমর্থন না পেয়ে ওসমানী চুপ করে গেলেন। এক সময়ে হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘প্রফেসর, আপনি সশস্ত্রবাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, বাহিনী ছাড়া ফোর্সেস বোঝাতে আর কোনো বাংলা শব্দ নেই?’ আমি একটু বিচলিতই হলাম। বললাম, ‘এগুলো বাংলায় বহুব্যবহৃত শব্দ—এর বিকল্পের কথা ভাবিনি।’ এবার উনি আসল কথাটি বললেন, ‘লালবাহিনী নীলবাহিনী শুনতে শুনতে এখন কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। এদের যদি বাহিনী বলা হয়, তবে আর্মড ফোর্সেসকে সশস্ত্রবাহিনী বললে তাদের অপমান করা হবে।’ লালবাহিনী ছিল শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগের একটি সংগঠন, অঙ্গসংগঠন ঠিক নয়, কিন্তু তার নেতা আবদুল মান্নানের প্রচণ্ড দাপট ছিল। গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক লক্ষ সদস্য নিয়ে লালবাহিনী গড়ে তোলা হবে। লালবাহিনী তখনই এখানে-ওখানে অন্যায় কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করেছিল।

সংবিধানের যে-মূল কপিতে গণপরিষদের সদস্যেরা স্বাক্ষরদান করবেন, কামাল চেয়েছিলেন, তা বাংলা হস্তাক্ষর লিখিত হবে এবং দেশীয় ধাঁচে অলংকৃত হবে। হাতে লেখার জন্যে আমি এ কে এম আবদুল রউফের নাম প্রস্তাব করলাম। রউফ এক সময়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ নিতে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশের কাজে লেগে পড়েন, স্বাধীনতালাভের পরে লন্ডনে আমাদের হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে সেখান থেকে আনাতে হবে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, অলংকরণের দায়িত্ব জয়নুল আবেদিন নেবেন। কামাল বললেন, রউফের বিষয়টি আবেদিন সাহেবকে জিজ্ঞেস করে নিলে ভালো হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এক সকালে জয়নুল আবেদিন এলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। তাঁর সঙ্গে হাশেম খান, জুনাবুল ইসলাম, সমরজিৎ রায়চৌধুরী, আবুল বারক আলভী প্রমুখ কয়েকজন শিল্পী ছিলেন। তিনি বললেন, পুস্তানিতে নকশি কাঁথার অলংকরণ থাকবে, শিল্পীরা প্রতি পৃষ্ঠার চারপাশ অলংকৃত করে দেবেন। রউফের নাম তিনি অনুমোদন করলেন, ওই অলংকৃত পাতার মধ্যে তাঁর হস্তাক্ষরে সংবিধানের পাঠ লিখিত হবে। পরে তাই হয়েছিল। অলংকরণ করেছিলেন হাশেম খান, জুনাবুল ইসলাম, সমরজিৎ রায়চৌধুরী ও আবুল বারক আলভী। রউফ বহু পরিশ্রম করে পুরো সংবিধান হাতে লিখেছিলেন। তাঁর লেখা প্রতি পৃষ্ঠা আমি দেখে দিয়েছিলাম, একটা বর্ণলোপের জন্যে তাঁকে গোটা পাতা নতুন করে লিখতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এই হাতে-লেখা কপিতে সদস্যেরা (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছাড়া—এ প্রসঙ্গে পরে বলব) স্বাক্ষর করেছিলেন এবং বি জি প্রেসে তাঁর পাঁচ শ কপি ছাপিয়ে চামড়ার বাঁধাই করা হয়েছিল। চর্মশিল্পের কাজ করেছিলেন শাহ্ সৈয়দ আবু শফি। তিনি বেবীর দূরসম্পর্কের মামা, চামড়ার কাজ শিখেছিলেন শ্রীনিকেতনে। চর্মশিল্পী হিসেবে তাঁকে আবিষ্কার করেছিলেন হামিদা হোসেন দারিদ্র্য ও দুর্ভাগ্যপীড়িত জীবনে তিনি যতটুকু কর্মসংস্থান ও সম্মানলাভ করতে পেরেছিলেন, তাও সম্ভবপর হয়েছিল হামিদার জন্যে।

২.

সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির বৈঠক বসে একাদিক্রমে ১৭ থেকে ২৯ এপ্রিল, ১০ থেকে ২৫ মে, ৩ জুন থেকে ১০ জুন, ১০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর। মোট ৮৫ দিন। তৃতীয় দফার বৈঠকে অর্থাৎ ১০ জুনে সংবিধানের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া অনুমোদিত হয়। পূর্ণাঙ্গ মানে বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ। তারপরে বাকি রয়ে যায় ইংরেজি ভাষ্যের আইনি দিক এবং বাংলা ভাষ্যের ভাষাগত দিকের উন্নতিসাধন।

১৩ জুন কামাল হোসেন ভারত হয়ে ইংল্যান্ডে রওনা হন। উভয় দেশেই সংবিধান-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমাদের প্রস্তাবিত সংবিধান মূল কাঠামো সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেন। আলোচনা যে হয়েছে, সে-খবর কাগজে বের হয়, যদিও তার মর্মবস্তু কী, তা প্রকাশিত হয়নি। এতেই দেশে রটে গেল যে, ভারত সরকারকে দিয়ে সংবিধানের খসড়া অনুমোদন করিয়ে আনতে কামাল হোসেন দিল্লি গেছেন বিলেত যাওয়াটা আসলে কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে এই যাত্রায় লন্ডনে গিয়েই আইনি খসড়া-প্রণেতা রবার্ট গাথরিকে আমাদের সংবিধান-রচনায় সহায়তাদানের জন্যে নিয়োগ করে আসেন কামাল।

আমরা তিনজন যে ভাষান্তরের কাজ করছিলাম, তার একটা আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল। আমার পরামর্শে খসড়া-প্রণয়ন কমিটিকে দিয়ে কামাল একটি ভাষা-বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করিয়ে নিয়েছিলেন ইংরেজির সঙ্গে বাংলা পাঠ মিলিয়ে এই কমিটি ভাষাগত উন্নতিসাধনের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এই কমিটি গঠিত হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ আলী আহসান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মযহারুল ইসলাম ও আমাকে নিয়ে, আমি ছিলাম কমিটির আহ্বায়ক। ৩ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ১১টি বৈঠক করে (শেষ চারটিতে মযহারুল ইসলাম থাকতে পারেননি) বাংলা পাঠ সম্পর্কে এই কমিটি সুপারিশ প্রদান করে ১৯ আগস্টে।

তখনো ইংরেজি ভাষ্য চূড়ান্ত হয়নি। গাথরি তাঁর কাজ মোটামুটি শেষ করেন সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখের দিকে। তিনি অবশ্য যখন যতটুকু সম্পন্ন করেছিলেন, তা দিয়ে যাচ্ছিলেন আমাকে। তবু তাঁর পরিমার্জিত ভাষ্য-অনুযায়ী বাংলা পাঠ পরিবর্তন করতে হয়েছিল আমাদের। সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির চতুর্থ বৈঠকে মূলত বাংলা পাঠ এবং পঞ্চম বৈঠকে মূলত গাথরির পরিমার্জিত পাঠ চূড়ান্ত করা হয়।

১২ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বিল-আকারে খসড়া সংবিধান উপস্থাপিত হলো এবং সেই সঙ্গে সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টও পেশ করা হলো। কমিটির ছ জন সদস্যের ভিন্নমতসূচক মন্তব্য রিপোর্টে যুক্ত হয়। এঁদের মধ্যে আ ক মোশাররফ হোসেন আকন্দ সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরুতে ‘সর্বশক্তিমান পরম করুণাময় ও দয়াময়ের নামে’ কথাগুলো যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। ৪২ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে তিনি আপত্তি করেন এবং ৭০ অনুচ্ছেদ বর্জন করতে চান। ৪২ ও ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে বড়োরকম আপত্তি করেন আছাদুজ্জামান খান। তিনি নিজেকে সমাজতন্ত্র কায়েমের বিরোধী নন বলে অভিহিত করে বলেন যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকার, তার রক্ষাকবচ থাকতে হবে এবং কারো সম্পত্তি রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৭০ অনুচ্ছেদের বিরোধিতা করে আবদুল মুন্তাকীম চৌধুরী বলেন যে, সাধারণ আইনদ্বারা সাময়িকভাবে এই বিধান রাখা যেতে পারে, এটি সংবিধানের অংশ হওয়া উচিত নয়, সংবিধানে রাখতে চাইলে তা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে উপস্থিত করতে হবে। তিনি চতুর্থ তফসিলে পরবর্তী নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ জ্ঞাপন করার প্রস্তাব করেন। ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সবচেয়ে কড়া ভাষায় আপত্তি জানান হাফেজ হাবিবুর রহমান। তাঁর মতে, এতে দলীয় একনায়কত্বের ও দলীয় নেতার একনায়কত্বের সৃষ্টি হবে। তাঁর একটি বড়ো প্রস্তাব ছিল দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটে নিম্নপরিষদ ষাটজন সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপরিষদ গঠন করবে, অর্থবিল উত্থাপনের একক অধিকার থাকবে নিম্নপরিষদের, বাকি সব বিষয়ে দুই পরিষদের থাকবে সমান ক্ষমতা, কোনো বিল সম্পর্কে দুই পরিষদের মতানৈক্য ঘটলে দুই পরিষদের যুক্ত বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিষয়ের মীমাংসা হবে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রায় পুরো সংবিধান সম্পর্কেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি থেকে তিনি চার নীতি বাদ দিতে চেয়েছিলেন প্রস্তাবনার পুনরুক্তি হয় বলে; মূলনীতিগুলো যে আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়, তাতে তিনি আপত্তি করেছিলেন; মৌলিক অধিকারের মধ্যে শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল পরিচালনা ও ধর্মঘটের অধিকার যোগ করতে চেয়েছিলেন; প্রত্যেক নাগরিকের সীমিত পরিমাণ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন, ধারণ বা বিলিব্যবস্থার অধিকার থাকবে, তবে সম্পদের সামাজিকীকরণের প্রয়োজনে ক্রমান্বয়ে সমুদয় সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত করা যাবে, এমন বিধান সংযোজন করতে চেয়েছিলেন; তিনি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন, তা নারীপুরুষের সমকক্ষতার ধারণার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে; তিনি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর করতে চেয়েছিলেন; আইনজীবীদের মধ্য থেকে বিচারক-নিয়োগের বিরোধী ছিলেন তিনি; সংবিধান প্রবর্তনের দিন থেকে মন্ত্রিসভা ভেঙে যাবে এবং ন্যাপ, আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি আর নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, এই সরকারই নির্বাচন পরিচালনা করবেন, এমন একটি বিধান সংযোজন করতে চেয়েছিলেন। পেছনে ফিরে মনে হয়, সুরঞ্জিতের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রস্তাব ছিল, বাংলাদেশের সকল উপজাতীয় জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তথা সামগ্রিক বিকাশের উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের অধিকার সংরক্ষণের জন্যে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যোগ করা। ক্ষিতীশচন্দ্র মন্ডল তফসিলি সম্প্রদায়, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির নাগরিকদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের উন্নতিবিধানের ব্যবস্থা সন্নিবেশ করতে চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিতে।

সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির কাছে গণপরিষদের বাইরে থেকে নানা ধরনের পরামর্শ-সংবলিত ৯৮টি স্মারকলিপি এসেছিল। সদস্যদের বিবেচনার জন্যে তা যথারীতি বিলি করা হয়েছিল।

গণপরিষদে সংবিধান-বিল উত্থাপিত হলে সংশোধনীর প্রস্তাব আসে ১৩৪টি, তার মধ্যে আওয়ামী লীগ-দলীয় সাংসদদের ৬০টি এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটি সংশোধনী গৃহীত হয়। ৭০ অনুচ্ছেদ শেষ পর্যন্ত সংশোধিত হয়। খসড়ায় যেখানে বলা হয়েছিল যে, দল থেকে পদত্যাগ করলে কিংবা বহিষ্কৃত হলে সেই দলের মনোনয়নলাভকারী সংসদ-সদস্য সংসদে তাঁর সদস্যপদ হারাবেন, সেখানে সংশোধিত অনুচ্ছেদে বলা হলো, দল থেকে পদত্যাগ করলে বা দলের বিপক্ষে ভোট দিলে তিনি সদস্যপদ হারাবেন। এই অনুচ্ছেদক্রমে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে আদালত প্রশ্ন করবেন না, মূলের এই বিধানও বাদ পড়ল।

একটা বড়োরকম পরিবর্তন এলো ৬ অনুচ্ছেদে। সংবিধান-বিলে এতে বলা হয়েছিল, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে।’ সরকারদলীয় সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ভুঁইয়া সংশোধনী এনে এর পরে যোগ করতে চাইলেন : ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ-সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এ-প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বললেন যে, পার্বত্য এলাকার অধিবাসীরা বাঙালি নয়; বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তারা নিজেদের বাংলাদেশি বলে বিবেচনা করে, কিন্তু তাদের কখনো বাঙালি বলে অভিহিত করা হয়নি; এই সংশোধনী গ্রহণ করলে চাকমা জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু সংসদ-সদস্যদের এক কথায় সংশোধনীটি সমর্থন করলেন, এটি গৃহীত হলো, মানবেন্দ্র লারমা প্রতিবাদে সংসদ-কক্ষ ত্যাগ করলেন।

পাহাড়ি জনসমষ্টির স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি সেদিন আমরা বুঝতে পারিনি। মানবেন্দ্র লারমাও সেদিন পাহাড়ি ও চাকমা প্রায় সমার্থক করে ফেলেছিলেন, অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখ করেননি। ২৪ বছর ধরে বাঙালি জাতিসত্তার জাগরণ ঘটছিল; মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। পাকিস্তান আমলে পাহাড়িরা কখনো নিজেদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার কথা বলেনি। মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের কিছুসংখ্যক অংশগ্রহণ করেছিল—মিজো জাতিসত্তার সংগ্রাম তাদের অনুপ্রাণিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাহাড়িদের প্রথাগত নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তান সরকারের মিত্র। তখনো রাঙামাটির রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ-বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত। বাংলাদেশ-বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী স্বাধীনতার পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আশ্রয় নেয় এবং তাদের বিতাড়ন করতে সেখানে দুবার অভিযান পরিচালিত হয়—একবার ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়ে। এই অবস্থায় ১৯৭২ সালের জুন মাসে মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংহতি দল গঠিত হয়, সেটাও অনেকে ভালোভাবে দেখেনি।

পাহাড়িদের নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য যে সেদিন আমরা উপলব্ধি করতে সমর্থ হইনি, এ ছিল নিজেদের বড়োরকম এক ব্যর্থতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রেরণা পেয়েও যে পাহাড়ি জাতীয়তাবোধের বা চাকমা জাতীয়তাবোধের সূচনা হতে পারে, এ-কথা একবারও আমাদের মনে হয়নি। নিজেদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাফল্যে আমরা তখন বেশিদূর দেখতে পারছি না, মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরে অন্য কোনো জাতীয়বোধ স্বীকার করতে পারছি না, বরঞ্চ তাকে সন্দেহের চোখে দেখছি। ৬ অনুচ্ছেদের ওই ছোট্ট সংশোধনীকে উপলক্ষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতিত্বের সঙ্গে পাহাড়িদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার যে-বিরোধ সেদিন সূচিত  হলো, তার ফল কত সুদূরপ্রসারী হয়েছিল, তা এখন আমরা জানি।

এখানে একটি কথা বলা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না। খসড়া সংবিধান-প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টে যাঁরা ভিন্নমতসূচক মন্তব্য যুক্ত করেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এবং গণপরিষদে সংবিধান বিল উত্থাপনের পরে যাঁরা সংশোধনী এনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই কিন্তু নেয়ামাল বাসির বা আমাকে দিয়ে তাঁদের বক্তব্য বা সংশোধনীর ভাষা পরিমার্জনা করে নিয়েছিলেন। এতে কামাল হোসেন বা আর কেউ কিছু মনে করেননি। সেই উদারতার বাতাবরণ কখন যেন হারিয়ে গেল। হাফিজ হাবিবুর রহমান যে তখন প্রকাশ্যে ‘দলীয় একনায়কত্বের ও দলীয় নেতার একনায়কত্বের সৃষ্টি’র আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, সে-কথাটাও মনে রাখার যোগ্য।

সংবিধান বিলের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বেশ দীর্ঘ ও তীব্র বক্তৃতা দিতেন। বঙ্গবন্ধু একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি সুরঞ্জিতের বক্তব্য শুনছি কি না। গণপরিষদের অধিবেশন চলাকালে আমি প্রায়ই সদস্যদের পেছনে আমলাদের সারিতে বসতাম, কোনো প্রশ্নে আইনমন্ত্রীর সাহায্য প্রয়োজন হলে সেখান থেকেই চিরকুট চালাচালি করতাম। তবে সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকতে পারতাম না। গণপরিষদ-ভবনে আমাকে যে-কক্ষটি বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেখানে বসে বিতর্ক শোনার ব্যবস্থা ছিল, শুনতামও। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে বললাম, মাঝে মাঝে শুনি। তিনি হেসে বললেন, ‘১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে কনস্টিটিউশন নিয়ে আমি যেসব কথা বলেছি, সেসব কথাই এখন সুরঞ্জিত আমাকে শোনাচ্ছে। তখনকার হাউজের ডিবেট পড়ে দেখো।’

৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হলো। পাকিস্তানের সংবিধান তৈরি করতে লেগেছিল প্রায় নয় বছর, আমরা তা এক বছরের মধ্যেই পারলাম। এতে আত্মসন্তুষ্টির কারণ ছিল বই কী! একটা ভালো সংবিধান-রচনার জন্যে কামাল হোসেন দেশ-বিদেশের প্রশংসা পেয়েছিলেন, লর্ড ডেনিং তো উচ্ছ্বসিত ভাষায় একটি চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতালাভের পরে নিজেদের যে ঐক্য নষ্ট হতে শুরু করেছিল, সংবিধান-রচনার সাফল্যও সে-ঐক্য রক্ষা করতে পারল না। গণপরিষদে সংবিধান বিল উপস্থাপনের ঠিক আগে মওলানা ভাসানী দাবি করলেন, গণপরিষদে উত্থাপনের আগে, জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করে সেখানে সংবিধানের খসড়া আলোচনা করতে হবে। একই সময়ে আ স ম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজ বিবৃতি দিয়ে দাবি করলো, সংবিধান গণভোটে দিতে হবে। গণপরিষদে যখন খসড়া সংবিধানের আলোচনা চলছে, তখন, ২৩ অক্টোবরে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠা ঘটলো। আত্মপ্রকাশের মুহূর্তেই এটি হয়ে দাঁড়ালো বৃহত্তম বিরোধী দল। কাদের প্রেরণায় এবং কোন লক্ষ্যে এই নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠলো, এ-নিয়ে অনেক কানাঘুষো শোনা গেল। সরকার কী বুঝলো, জানিনা, কিন্তু মনে হয়, একটা শক্ত অবস্থান নিলো অর্থাৎ সহনশীলতার মাত্রা কমলো।

এদিকে সংবিধানে বলে দেওয়া হলো যে, সংবিধানের একটি নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ ও একটি নির্ভরযোগ্য ইংরেজি পাঠ থাকবে এবং উভয় পাঠের মধ্যে বিরোধ ঘটলে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। এতে একইসঙ্গে গৌরব ও দায়িত্বের বোধ জেগেছিল আমার, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভীতি ও শঙ্কার ভাবও যে জাগেনি, তাও নয়।

উৎস : বিপুলা পৃথিবী, আনিসুজ্জামান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৫। পৃষ্ঠা ৩২-৩৮; ৫৬-৬১; ও ৩৮৯-৩৯৩।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago