ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ করায় ২ জেলেকে কুপিয়ে জখম
বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ করায় দুই জন জেলেকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গণকবর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জখম দুই জেলে হলেন- গর্জনবুনিয়া এলাকার মানিক (৩৬) ও আবদুল্লাহ (২৫)।
তাদের পরিবারের অভিযোগ, চেয়ারম্যানের লোকজন এই দুই জেলেকে কুপিয়ে জখম করেছে। দুজনকেই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকেরা মানিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবীরের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এতে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হন। চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন সন্ধ্যায় মানিক ও আবদুল্লাহর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তারা আহত হন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহ জানান, তিনিসহ মোট ৩০ জন জেলে নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েকদিন আগে জেলেদের চাল আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল।
তিনি বলেন, ‘হামলার সময় চেয়ারম্যানের ভাইয়ের ছেলে মিজান ও সোহাগ উপস্থিত ছিল। চেয়ারম্যানের অনুসারী শহীদ ও মুছা চাল চুরির অভিযোগ দিয়েছি কেন, এ কথা বলেই শহীদের নেতৃত্ব মিজান, সোহাগ, সোহেল, তানজিল, তুষার ও আরও কয়েকজন আমাকে মারধর শুরু করে। এ সময় আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে শহিদ ও মুছা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানিককেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে স্বজনেরা আমাদের উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক নীহার রঞ্জন বৈদ্য বলেন, ‘মানিকের কাঁধ ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।’
আবদুল্লাহ আরও জানান, চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তার ভাইয়ের ছেলে মিজান ও সোহাগের পরিকল্পনায় শহীদ ও মুছার নেতৃত্বে তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান গোলাম কবীর বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ছেলেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। ঘটনাটি মূলত মাদককেন্দ্রিক বিরোধের জেরে ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে জেলেরা বলেছেন, ‘গত ২৯ মার্চ বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নম্বর নলটোনা ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রত্যেক জেলেকে ৩০ কেজি করে ৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলের দুই মাসের ২০ কেজি করে চাল চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন। জেলে তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের সবাই আবার চাল পাননি। প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে যারা মাছ শিকারে যুক্ত না, এমন ব্যক্তিদের নামও তালিকায় রয়েছে।’
পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে অভিযোগটি তদন্ত করে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। যা এখনও তদন্তাধীন।
Comments