ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার ঘোষণা, সরকারের কথা ও কাজে মিল থাকছে না: ডা. আবদুল্লাহ

দেশে সবাই যখন করোনাভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে রয়েছেন ঠিক এমন সময় স্বনামধন্য চিকিৎসক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ দ্য ডেইল স্টার অনলাইনকে জানালেন, দেশে করোনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
Dr ABM Abdullah
চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
  • যারা বাড়ি গেলেন তারা ঘরেই থাকবেন
  • কোনো অবস্থাতেই কারো সঙ্গে কোলাকুলি করবেন না
  • আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দেশে করোনার ঝুঁকিটা আরও বাড়বে
  • প্রয়োজনে সরকারকে কার্ফু দিতে হবে
  • দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই লকডাউন শুধুমাত্র নামে
  • ‘সাধারণ ছুটি’ না বলে ‘লকডাউন’ বলা উচিত ছিল
  • সরকারকে মানুষের খাওয়া-দাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে
  • কেউ যদি কথা না শুনেন তা আমার অসহায়ত্বই প্রমাণ করে
  • দেশের ভালোর জন্যে আমি চেষ্টা করে যাব
  • আমার কথা শুনে যদি ১০ জনের উপকার হয় সেটাই আমার সফলতা

 

দেশে সবাই যখন করোনাভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে রয়েছেন ঠিক এমন সময় স্বনামধন্য চিকিৎসক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ দ্য ডেইল স্টার অনলাইনকে জানালেন, দেশে করোনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

আজ রোববার তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে দেশে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে।’ প্রয়োজনে সরকারকে কার্ফু দিতে হবে হবে বলেও মনে করছেন তিনি।

‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ঘোষণাটি সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি ‘সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকছে না’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

ডা. আবদুল্লাহ বলেন, অনেক মানুষ ঈদের বন্ধে বাড়ি গেছেন। আমি সবসময় বলেছি, আপনারা বাড়ি যাবেন না। যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করবেন। তারপরও, অনেকে চলে গেলেন। যারা এখনো বাড়ি যাননি, তারা যে যেখানে আছেন, অনুগ্রহ করে সেখানেই ঈদ করেন।

দ্বিতীয় কথা হলো: যারা ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গিয়েছেন, তাদের মনে রাখতে হবে যে, তাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই বেশি। গ্রামটা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। আপনারা গিয়ে গ্রামের ঝুঁকিটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আপনাদের কাছে অনুরোধ, যারা যেখানে গিয়েছেন, ঘরে থাকবেন। ঘরের বাইরে বের হবেন না। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের নামাজ আদায় করবেন। কেউ কোলাকুলি করবেন না। বাচ্চাদের আলিঙ্গণ করবেন না।

ঈদের সময় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের বাড়ি যাবেন না। বাইরে খাওয়া-দাওয়া, ঘুরাফেরা করবেন না। নিজের ঘরেই থাকবেন। নিজের ঘরেই খাবেন। কারো বড়িতে গিয়ে দাওয়াত খাওয়া বা কাউকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর দরকার নাই।

শহরে অনেকে ঈদের নামাজের পর পার্কে যান, চিড়িয়াখানায় যান— এবার এই কাজগুলো করবেন না। আমোদফূর্তি করার কোন দরকার নাই। জীবনটা আগে বাঁচান। যদি বেঁচে থাকেন তাহলে আমোদফূর্তি করার অনেক সুযোগ পাবেন।

আগামী ঈদে না হয় আরও বেশি করে আমোদফূর্তি করবেন। তাতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু, এই ঈদটা আমাদের নিরানন্দভাবেই কাটুক। কারণ, আমাদের জীবনটা সবচেয়ে জরুরি। আমার জীবন, পরিবারের জীবন, আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীর জীবন— সবার জীবন বাঁচুক, সবাই ভালো থাকুক— এটাই আমাদের কামনা।

বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতিটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আমি আগে বলেছিলাম, মে মাসে দেশে করোনাভাইরাস নির্মূল না হলেও, কমে আসবে। দেশের চলমান লকডাউনটা মাথায় রেখে এ কথা বলেছিলাম। এখন যেহেতু লকডাউন আর থাকল না, তখন আমরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছি। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

মানুষ লকডাউন মানছেন না। ঘুরাঘুরি করছেন, হাট-বাজারে যাচ্ছেন, ঈদের কেনাকাটা করছেন। অনেক দোকানই খোলা। ফুটপাতের দোকানও খোলা। কোন দূরত্ব মানা হচ্ছে না। অনেকে গা-ঘেঁষে বাজার করছেন। তারা আমাদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। আমরা সবাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছি।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকে গ্রামে চলে গেলেন। গ্রামের পরিবেশ তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। এতটা ঝুঁকি ছিল না। এই যে তারা গ্রামে চলে গেলেন— কারও মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় করোনাভাইরাস রয়ে গেছে কিনা তা আমরা জানি না। এখন আল্লাহ না করুন এটা একটা গ্রামে ছড়িয়ে না যায়।

ঈদের পর এই মানুষগুলো আবার শহরে ফিরে আসবেন। তারা গ্রামে ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে এসে আবার যদি শহরেও তা ছড়িয়ে দেন তাহলে… আমরা আসলে দুই দিক দিয়েই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছি।

জনগণকে একটা কথা বারবার বলছি— আপনাদের সচেতনতা খুবই জরুরি। আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনারা বাড়ি গেলেন কেন? যেখানে ছিলেন সেখানে ঈদ কাটালে কী সমস্যা হতো?

একজন মানুষ যদি সচেতন না হন, তিনি যদি নাগরিক দায়িত্ব পালন না করেন, সর্বপরি, যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, তাহলে আমরা ঝুঁকির মধ্যে পড়বই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বোঝা যাবে আমরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছি।

সবার কিন্তু ঢাকায় থাকার মতো অবস্থা নেই। যিনি যান, তিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই যান।

সেটাও সত্য। কিন্তু, কথা হলো, আরও একটু কষ্ট করে থাকলে কি হতো না? যিনি বাধ্য হয়ে গেলেন তিনি তো রাস্তায় অনেক টাকা খরচ করেই গেলেন। এমনও শুনেছি, যেখানে এক হাজার টাকা খরচ হওয়া কথা সেখানে ১০ হাজার টাকা খরচ করেও গেছেন। অনেকে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেও গেছেন।

এমনও জেনেছি, কয়েকজন মিলে বেশি টাকায় গাড়ি ভাড়া করে নিজের গাড়ি বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এটা করে তারা খুব ক্ষতি করলেন। একজনের সাক্ষাৎকার দেখলাম, বলছেন— ‘বাবা-মা আগে, পরে করোনা।’ এখন তিনি তো জানেন না, তিনি যদি করোনা বহন করে থাকেন তাহলে তিনি তা তার বাবা-মার কাছে ছড়িয়ে দিয়ে আসলেন।

সুতরাং, থাকার জায়গা যার যেভাবে ছিল, সেখানে একটু কষ্ট করে যদি থাকত, খাওয়া-দাওয়ায় হয়তো কষ্ট হতো, কিন্তু, এখন তারা যে বাড়িতে গেলেন, তার মাধ্যমে যদি মা-বাবা, ভাই-বোনের মধ্যে ভাইরাস ছড়ায় তখন কী হবে? চারদিক থেকে সবাই ঝামেলায় পড়ে যাবেন।

গ্রামে চিকিৎসার ভালো সুযোগ না পেলে তো ঢাকাতেও আসতে পারবেন না। ঝামেলা চতুর্মুখী হয়ে যাবে। ঈদে মানুষের বাড়ি যাওয়াটা বিবেচনাপ্রসূত হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।

বাজার খুলে দিয়ে আপনি কীভাবে বলবেন বাজারে যেও না?

সরকার লকডাউন বাতিল করেনি, শিথিল করেছে। গার্মেন্টেসে কিছু কর্মচারী দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করবে। মার্কেটের কথা বলা আছে, তারা চাইলে খুলতে পারে। বসুন্ধরা, যমুনা খুলে নাই। এখানে তো কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এখন মার্কেট খুলেছে বলে যদি ঢালাওভাবে সেই সুযোগ নিয়ে মার্কেটে যাওয়া হয়, তাহলে জনগণ তার দায়িত্ব পালন করলেন না।

সরকার বলেনি তোমরা ঠেলাঠেলি করে, গায়ে গা-ঘেঁষে মার্কেটে যাও। অনেক বাপ-মাকেও দেখেছি— ছোট বাচ্চাকে মাস্ক পরিয়ে ঈদের বাজার করতে এসেছেন। তাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছে, ‘বাচ্চাকে কেন এনেছেন?’ উনি বলছেন, ‘বাচ্চা ছাড়ে না। অস্থির হয়ে গেছে। কী করবো!’— এগুলো দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জীবনটাও লাগবে, জীবিকাও লাগবে। এর মানে এই নয় যে যা খুশি, ঢাকঢোল পিটিয়ে ঈদের বাজার করতে হবে।

বাঁচতে হলে আমাকেই সচেতন হতে হবে। আমার নিজের নিরাপত্তার জন্যে যা করা দরকার তা করতে হবে। আমি যদি তা না করি তাহলে সরকার বা প্রশাসন-পুলিশ দিয়ে তা ঠেকানো যাবে না।

সরকারিভাবে কি কোন লকডাউন ছিল বা আছে?

আসলে সরকারিভাবে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা আছে।

কিন্তু, সেটা তো সাধারণ ছুটি। কোন লকডাউন না।

আমি মনে করি, এটা ছুটি না। এটা লকডাউন।

মনে করার বিষয় এক জিনিস আর আনুষ্ঠানিক লকডাউন আরেক জিনিস।

আপনি ঠিকই বলেছেন। আমিও তাই মনে করি। আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন হওয়া উচিত ছিল। ছুটি নয়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই লকডাউন শুধুমাত্র নামে। বাস্তবে কোন লকডাউন নেই। হয় তো কাগজে-কলমে আছে।

কাগজে-কলমেও সাধারণ ছুটিই পাই।

‘সাধারণ ছুটি’ না বলে ‘লকডাউন’ বলা উচিত ছিল। এটা তো আমোদফূর্তি বা বেড়ানোর ছুটি না। ছুটি দেওয়া হয়েছে যেন মানুষ ঘরে থাকে। বাইরে বের না হয়।

ছুটির উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, ছুটি মানেই আনন্দ।

হ্যাঁ, কথা ঠিক।

তাহলে সরকার কেন লকডাউন দিলো না?

আমিও তো তাই মনে করছি। ‘ছুটি’ কথাটা বলাই উচিত হয় নাই। আমি মনে করি, এটা ‘লকডাউন’ই বলা উচিত ছিল। শুরুতেই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত ছিল।

তার মানে, সরকার শুরুতেই ভুল করেছে?

সরকার ‘ছুটি’ বলতে বুঝিয়েছে অফিস ছুটি।

মনের মধ্যে যাই থাকুক, আমাদের দেশে সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি— এটাই বাস্তবতা।

ঠিকই বলেছেন। আমিও তাই মনে করি। এটাই আমাদের বাস্তবতা।

কিন্তু, সরকার প্রথমেই যে ভুল করল সেটার মাসুল কে দিবে?

আমার মনে নয়, সরকারের এই ভুলটা করা উচিত হয় নাই। কে ভুল করল, কেন করল… আমি তো শুরু থেকেই বলছি— ছুটির মানে হচ্ছে— আপনারা ঘরে থাকবেন,  বাইরে বের হবেন না। জনগণকেও তো বুঝতে হবে। জনগণের কি কোনো দায়িত্ব নাই?

সব সময় জনগণের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সরকার দায়মুক্ত থাকার চেষ্টা করে, কেন?

জনগণকে তো নিজের স্বার্থে, নিজে বাঁচার জন্যে, পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী সর্বপরি, দেশকে বাঁচানোর জন্যে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এটা তো তাকে বুঝতে হবে।

কিন্তু, জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব কার?

সেটা তো বটেই— সরকার জনগণকে সচেতন করবে। জনগণও নিজেরা সচেতন থাকবে— এটা সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে হবে।

সমন্বয়তো সরকারি পর্যায়েই হয়নি, তাহলে?

সেটাই বলছি, আমি আমার দায়িত্ব পালন করবো, সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু, সরকার বলছে বলেই আমি যা খুশি তাই করব সেটাতো কাম্য হতে পারে না।

আমি বারবার হাত ধুতে বলছি। সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে এসে অবশ্যই হাত ধুতে হবে। এটা নিজের দয়িত্ব। এটা সরকার করিয়ে দিবে না। যতটুকু সম্ভব আমার হাত আমাকেই ধুতে হবে। আমি যদি তা না করি এর জন্যে সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নাই।

তবে, সরকার ‘ছুটি’ যখন বলেছে, সঙ্গে লেখা উচিত ছিল— ‘এটি বিনোদনমূলক ছুটি নয়। আপনারা ঘরে অবস্থান করবেন। বাইরে যাবেন না।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করছে। তারাও পারছে না। অনেক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েকজন মারাও গেছেন। এখন তারা নিজেরাও ভয়ে আছেন।

আমরা সর্বস্তরের জনগণ এখন ঝুঁকিতে আছি। আমি মনে করি, এখন ঝুঁকিটা আরও বেড়ে গেল। আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ঝুঁকিটা আরও বাড়বে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোথাও লকডাউন ঘোষণা করলে জনগণকে কী কী সুবিধা দিতে হয়?

প্রথম কথা হলো: মানুষকে তিন বেলা খাবার দিতে হবে। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষদের খাওয়া-দাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তারা যদি জীবন বাঁচাতে পারে তাহলে জীবিকার সন্ধানে বাইরে বের হবে না। সরকার এটা যদি নিশ্চিত করতে পারত তাহলে ‘লকডাউন’টা আরও কার্যকরী হতো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালায় আছে… আমি মনে করি, সরকার হয়ত ত্রাণ দিচ্ছে কিন্তু, তা অপ্রতুল। কেউ তিন বেলা খেতে পারছে বলে আমার মনে হয় না। অনেক জায়গায় অনেক অভিযোগ আছে। রাস্তাঘাটে লোক দেখলে বোঝা যায়।

জনগণের জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন হলো: ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, দূরত্ব বজায় রাখা, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া। বাইরে গেলেও দ্রুত কাজ সেরে ঘরে ফিরে আসতে হবে। হাত ধুয়ে ঘরে ঢুকতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। জনগণকে এগুলো মানতেই হবে।

অনেক দেশে জেল-জরিমানা, শাস্তির ব্যবস্থা আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে তা হয় নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়ত পেরে উঠছে না। দেশে মানুষ বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। হয়ত বাস্তবতার কারণেই এসব মেনে চলা যাচ্ছে না।

জনগণের একটা বিশাল অংশ ‘লকডাউন’ মানতে পারছেন না বাস্তবতার কারণে। বস্তিতে একটা ছোট ঘরে ৫-৬ জন মানুষ থাকেন। সেখানে কীসের লকডাউন? একই টয়লেট-বাথরুম সবাই ব্যবহার করেন। দূর থেকে পানি বয়ে এনে ব্যবহার করেন।

এছাড়াও, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মানুষ যেভাবে থাকেন সেখানে বাস্তবতার কারণে ‘লকডাউন’ মানা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকী, শ্রমিকরা এক রুমে ৫ থেকে ১০ জনও থাকেন। বাস্তবতার কারণে অনেকের স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয় না। এই সত্যটা অস্বীকার করার উপায় নাই। তারপরও আমাদের যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমাকেও বাঁচতে হবে, সবাইকেই বাঁচতে হবে। সবাই বাঁচলে আমিও বাঁচবো। দেশ বাঁচবে। এই উদ্দেশ্য নিয়ে সবাই যদি সম্মেলিত প্রচেষ্ঠা চালাই তাহলে, আমি মনে করি, শতভাগ না হলেও এই দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টিতে জনগণকে বাঁচানোর জন্যে সরকারের কী করা উচিত?

সরকারকে লকডাউন দিতে হবে। এখন আপাতত লকডাউন নাই। আগামী পাঁচ-সাতদিন পর্যবেক্ষণ করে কড়াকড়িভাবে লকডাউন দিতে হবে। সরকারকে মানুষের খাওয়া-দাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে। জোর করে হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখতে হবে। এরপরও মানুষ যদি না মানেন তাহলে প্রয়োজনে সরকারকে কার্ফু দিতে হবে।

কিন্তু, এ সবকিছুর আগে সরকারকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যে যা যা দরকার তা তা নিশ্চিত করতে হবে।

এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে কীভাবে ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়া যাবে’ বলে ঘোষণা আসে?

এই কথা তো আমিও বলতে চাচ্ছিলাম। আমরা যখন বলছি ঘরে থাকবেন, যে যেখানেই আছেন সেখানেই ঈদ কাটাবেন। এখন এই ঘোষণা কে করলো, কেন করলো? ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার’ ঘোষণাটি সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে। সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকছে না। এটা করা কোনভাবেই উচিত হয় নাই।

এর মানে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেই ঝামেলা?

সেখানে সমন্বয়ের মারাত্মক অভাব রয়েছে। তারা কে, কীভাবে, কী করছেন… আমি মনে করি, তাদের মধ্যে সমন্বয় ঠিক মতো হয় নাই। একদিকে, আমরা বলছি বাড়ি যাবেন না, অন্যদিকে বলছি ব্যক্তিগত গাড়িতে যাবেন, তাহলে তো কিছু হলো না। আমরা এটা একটা অন্যায় করে ফেললাম।

সরকার বারবার ভুল করছে আর আপনারা বলছেন জনগণকে সচেতন হতে। সরকারকে সচেতন হওয়ার কথা কে বলবে?

আমরা দুই পক্ষকেই সতর্ক হতে বলছি। সরকার বা প্রশাসনে যারা আছেন, বা যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আরও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। জনগণ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। তারা সচেতন হবে। সরকার ও জনগণ— এই দুইয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই চলতে হবে। এ কথা জনগণকেও বলছি, সরকার বা প্রশাসনকেও বলছি।

সরকার যেহেতু ক্ষমতায় আছে তাই তাদের দায়িত্ব অপরিসীম। তাদের দায়িত্ব তাদেরকে পালন করতে হবে। জনগণকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই বেশি, তারা যেহেতু দেশ চালায়।

কিন্তু, কেউই তো আপনাদের কথা শুনছে না।

এখন কেউ যদি না শুনে, তাহলে… আমি আমার কথা বলতে পারি। মানুষের ভালোর জন্যে উপদেশ দিতে পারি। সবার ভালোর জন্যে, দেশের ভালোর জন্যে আমি চেষ্টা করে যাব। কেউ যদি কথা না শুনেন তখন তা আমার অসহায়ত্বই প্রমাণ করে। আমি তখন অসহায়। তবুও আমি চেষ্টা করব। আমি উপদেশ দিব। কেউ যদি না মানেন সেটা তার দায়িত্ব, আমার নয়।

আমার কথা শুনে যদি দশ জন লোকের উপকার হয় সেটাই আমার সফলতা। আমি চেষ্টা করে যাব। আমাকে সত্য কথা বলে যেতেই হবে। উপদেশ দিতেই হবে। মানা না মানা তাদের ইচ্ছা।

আরও পড়ুন

অনিয়মের প্রতিবাদকারী চিকিৎসকদের সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি: ডা. আব্দুল্লাহ

আতঙ্কিত হবেন না, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী সাধারণ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেন: ডা. আব্দুল্লাহ

করোনাভাইরাস: করণীয় কী? ডাক্তার আবদুল্লাহর পরামর্শ

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago