প্লাজমা থেরাপি নিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিজেদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি কিট দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন। এতে দেখা গেছে দুই দিনের মাথায় তার শরীরে সামান্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ মে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়েছিল। গতকাল তিনি প্লাজমা থেরাপিও নিয়েছেন। তার নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে কিডনি ডায়ালাইসিসও করিয়েছেন।
এখন তিনি বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
এই কথাগুলো আজ বুধবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।
শারীরিকভাবে এখন কেমন আছেন?
শারীরিকভাবে এখন আমি খুব ভালো আছি। ভোর ৬টায় ঘুম ভেঙেছে। স্বাভাবিকভাবে নাস্তা করেছি। শারীরিকভাবে কোন রকম অসুবিধা অনুভব করছি না।
শারীরিকভাবে ভালো থাকার কারণ কী? করোনা শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্রামে আছেন, তাই?
হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘আমি হচ্ছি বাংলাদেশে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান করোনা রোগী। কারণ, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক সচিব এন আই খান, কর্নেল সাজ্জাদ জহির ও তারিক সুজাতরা আমার চিকিৎসার জন্যে খুবই তৎপর হয়েছেন। আমার চিকিৎসা যাতে ঠিক মতো হয়— এর উদ্যোগ নিয়েছেন।
সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগী হয়ে আমার জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৯ নম্বর কেবিন বুকড করে দিয়েছেন।
একই দিনে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আমার জন্যে ফল পাঠিয়েছেন।
দুটি ঘটনা একই দিনে ঘটেছে। সেই হিসেবে অবশ্যই আমি বাংলাদেশে সৌভাগ্যবান করোনা রোগী।
যেটা বোঝাতে চাইছি সেটা হলো, আমাদের প্রতি হয়ত মানুষের দোয়া-ভালোবাসা আছে। একজন আমাকে ফোন করে বললেন, আমি নিয়মিত নামাজ আদায় করি না। কিন্তু, আপনার জন্যে দোয়া করতে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেছি। একটি ঘটনা বললাম। এমন বহু ধর্ম-বর্ণের মানুষ দোয়া করছেন। এটাই তো জীবনের প্রাপ্তি।
কেবিন বুকড থাকার পরও আপনি হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় আছেন কেন?
আমি তো ডাক্তার। করোনা রোগ নিয়েও কাজ করছি। আমি জানি, করোনা রোগীর কোন সময় হাসপাতালে যেতে হবে আর কোন সময় বাসায় থাকতে হবে। করোনা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে যেতে হবে— এটি একেবারেই ঠিক নয়।
আমি যদি হাসপাতালে গিয়ে কেবিনে উঠি তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে যে, শনাক্ত হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে যেতে হয়। করোনা রোগীদের জন্যে আমি ভুল বার্তা দিতে চাই না। ফলে, আমার জন্যে ঢামেকে কেবিন বুকিং দিয়ে রাখা সত্ত্বেও আমি হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় আছি। এটাই করোনা রোগের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
সবার ক্ষেত্রে এটাই করা উচিত। এমনিতেই হাসপাতালে জায়গা নেই। যাদের দরকার নেই তারাও যদি হাসপাতালে চলে যাই, তাহলে তো সংকট আরও বাড়বে।
আপনি প্লাজমা থেরাপি কোথায় নিলেন?
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে প্লাজমা থেরাপি নিয়েছি।
সেখানে প্লাজমা থেরাপির ব্যবস্থা আছে?
থাকবে না কেন? আমরা একটা হাসপাতাল বানিয়েছি সেই হাসপাতালে যদি আমাদের নিজেদের চিকিৎসাই করতে না পারি, তাহলে তা থাকারই কোনো অর্থ নেই। যে হাসপাতালে আমরা নিজেদের চিকিৎসা করতে পারব না, সেই হাসপাতাল রাখব কেন? সেই হাসপাতাল তৈরি করব কেন? আমি আমার সব রকমের চিকিৎসা আমাদের হাসপাতালে করি।
আজ থেকে ১৮ বছর আগে যখন আমার চোখের অপারেশন করা দরকার হয়েছিল তখন আমি তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে করিয়েছিলাম। তখন আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য ছিলাম। সেসময় পৃথিবীর যে কোনো দেশে, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশের উন্নত হাসপাতালটিতেও আমি বিনা পয়সায় চোখের অপারেশন করাতে পারতাম। কিন্তু, আমি তা করাইনি। জনগণের মাঝে কখনোই কোনো ভুল তথ্য বা ভুল বার্তা দিতে চাইনি। চোখের অপারেশন আমি আমাদের হাসপাতালেই করিয়েছি এবং বাংলাদেশের মানুষকে বুঝাতে চেয়েছি যে এই অপারেশন বাংলাদেশেও করা যায় এবং তা খুবই মানসম্পন্ন।
প্রায় ১৮ বছর আগে আমি চোখে যে অপারেশন করিয়েছিলাম তা বাংলাদেশের হাসপাতাল তথা আমাদের হাসপাতাল সফলভাবে করেছিল। আজকে পর্যন্ত আমার চোখে কোনো সমস্যা নাই। আমাকে চশমাও ব্যবহার করতে হয় না।
আমার আমেরিকা-ইউরোপের বন্ধুরা অনেকবার উদ্যোগ নিয়ে বলেছে, চলে আসো। বিনা খরচে আমরা তোমার কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থা করবো। রাজি হইনি। কারণ, আমি একা সুবিধা নেব আর বাংলাদেশের সব মানুষ বঞ্চিত থাকবে, তা হতে পারে না।
আপনি আপনাদের উদ্ভাবিত কিট দিয়ে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। সেখানে করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রশ্ন এসেছে, আপনি পিসিআর পরীক্ষা করাচ্ছেন না কেন?
কেন করব না? অবশ্যই করব। বিজ্ঞানভিত্তিক যে কোনো কিছুর পক্ষে আমার অবস্থান। বিএসএমএমইউ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা বলেছে, লোক পাঠাবে। আমার নমুনা সংগ্রহ করবে। আজকেই তা করবে। এতে আমার কোনো অসম্মতি বা অসুবিধা নেই।
এখানে আমি আরেকটি কথা আবারও বলতে চাই যে, আমাদের হাতে যদি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট না থাকতো তাহলে আমি স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতাম। আরও দুই-একদিন পর হাসপাতালে যেতাম। পিসিআর পরীক্ষার জন্যে লাইনে দাঁড়াতাম, হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরতাম। সেসময় আমার আশেপাশে যারা থাকত— পরিবারে সদস্য, হাসপাতালের কর্মী থেকে শুরু করে বহু মানুষকে আমি আক্রান্ত করতাম।
আমাদের হাতে এই কিট থাকার কারণে সামান্য জ্বরের প্রেক্ষিতে আমি করোনা পরীক্ষা করতে পারলাম। আমার করোনা শনাক্ত হলো। আমি আইসোলেশনে চলে আসলাম। এর মানে হচ্ছে, প্রথম অবস্থায় যদি করোনা শনাক্ত করা যায় তাহলে সংক্রমণের হার অনেক কমানো যাবে।
দেশের মানুষকে, সরকারকে বারবার এই কথাটি বুঝানোর চেষ্টা করছি যে আমাদের কিটটির অনুমোদন দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক মানুষকে শনাক্ত করতে পারবো।
আমরা আমাদের জায়গা থেকে বারবার বলার চেষ্টা করছি, বুঝানোর চেষ্টা করছি। হয়তো আমাদেরই অক্ষমতা— আমরা এ কথা এখন পর্যন্ত বুঝাতে পারছি না। যদি তারা নিজেরা বুঝেন তাহলেই হয়তো সম্ভব। তাছাড়া, আমাদের পক্ষে আর কোনকিছু করা বা বুঝানো সম্ভব না।
আরও পড়ুন:
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা পজিটিভ
সরকারের কাছে কিটের সাময়িক সনদপত্র চাইলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
Comments