আম্পান: ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি গ্রামে ঢোকে, ভাটায় নেমে যায়
পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের পায়রা নদীর পাড়ে ভাজনা গ্রাম। এই গ্রামে হালিমা খাতুন (৬০) তার দুই নাতিকে নিয়ে নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ভেতরে ছোট্ট একটি টিনের ঘরে থাকেন। বাঁধটি গত বুধবার রাতে আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে। সেই থেকে পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের সময় পানি বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে গ্রামে ঢুকছে, আবার ভাটার সময় নেমে যাচ্ছে।
ঈদের দিন দুপুরেও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ভাজনা গ্রাম। হালিমা খাতুনের ঘরের ভেতরে জোয়ারের পানি চলে আসে। এই দুর্ভোগ নিয়েই দুই নাতিকে নিয়ে সোমবার ঈদ উদযাপন করেছেন তিনি।
হালিমা খাতুনের ছেলে হারুন মোল্লা ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ছেলের স্ত্রী ইয়ানমিন বেগম তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী। কাজের সূত্রে দুজনে ঢাকায় থাকেন। তাদের পাঠানো টাকায় দুই নাতি নিয়ে গ্রামে দিন গুজরান হয় হালিমা খাতুনের।
গত বুধবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ভাজনা ও পাশের তুষখালী গ্রামের একটি অংশ জোয়ারের সময় প্লাবিত হচ্ছে, আবার ভাটায় পানি নেমে যাচ্ছে। জোয়ারের পানির তোড়ে ঘরের ভিটের মাটি পর্যন্ত খসে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে ভাজনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ার শুরু হতেই বাঁধের পাড়ের মানুষগুলো তাদের ঘরের নিচে রাখা জিনিসপত্র নিরাপদে সরিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
দুই নাতিকে নিয়ে পাশের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন হালিমা। তিনি জানান, দুর্যোগের সময় পায়রা নদী ফুঁসে ওঠে। এই বাঁধ তাদের রক্ষা করেছে এতদিন। কিন্তু এবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কখন জোয়ারের পানি চলে আসে তাই নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। ঘূর্ণিঝড়ের রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছি। সকালে এসে দেখি জলোচ্ছ্বাসে ভিটের মাটি ভেসে গেছে। ঘরে যা ছিল তাও ভেসে গেছে। এই দুর্ভোগের মধ্যে ঈদের দিন পাশের বাড়ি থেকে দুই নাতির জন্য সেমাই রান্না করে এনেছেন।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, পায়রা নদী পাড়ের ভাজনা গ্রামের ৪৩/২-এ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের ৪০ মিটার সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু হবে।
Comments