ঘর সরাতে কেটে গেছে জীবনের অধিকাংশ সময়

পিরোজপুরে কঁচা নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। ছবি: স্টার

সত্তরোর্ধ্ব আবুল খায়ের বাস করেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার কঁচা নদীর পাড়ে টগড়া গ্রামে। এক সময় নদীর পাড়ে ফসলি জমিসহ আরও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল। এখন থাকার জায়গাটুকু ছাড়া অবশিষ্ট বলতে কিছুই নেই।

যে কয়টা দিন বেঁচে আছেন, তত দিন পর্যন্ত শেষ আশ্রয়টুকু রক্ষা করতে পারবেন কিনা এ নিয়েও সংশয় আছে তার।

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামতের কাজে ব্যস্ত ভগ্ন স্বাস্থ্যের আবুল খায়ের জানান, কঁচা নদীর ভাঙনের কারণে এ পর্যন্ত তিন বার ঘর সরাতে হয়েছে। এবারের জলোচ্ছাসে তার ঘরের মেঝের মাটি ধুয়ে গেছে। জীবনে যা উপার্জন করেছেন তার বেশিরভাগটাই ব্যয় হয়ে গেছে বার বার ঘর সরাতে আর মেরামতে।

আবুল খায়ের বলেন, বিভিন্ন সময় জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়েছে তার ঘর। আম্পানের রাতে জলোচ্ছ্বাসে তার ঘরটি দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেসে গেছে বাকি সবকিছু।

২০ মে রাতের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঝড়ের আগেই আমরা পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই। এর মধ্যে ঘরের সব মালামাল ভেসে গেলেও কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।’

এই গল্প শুধু আবুল খায়েরের একার নয়। একই গল্প বেড়িবাঁধ বিহীন কঁচা নদীর পাড়ে বাস করা প্রায় সব মানুষের।

টগড়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম জানান, আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে তার ঘরের সব আসবাবপত্র ভেসে গেছে। মেঝের মাটি ধুয়ে গেলেও শুধু ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে। জানা নেই এই ঘর কবে তিনি মেরামত করতে পারবেন।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী টগড়া ফেরিঘাটে মাটি দিয়ে গত বছর একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলেও এবছর আপম্পানের জলোচ্ছ্বাসে সেটি বিলীন হয়ে গেছে। ছবি: স্টার

স্থানীয়রা জানায়, ইন্দুরকানী উপজেলার চারাখালী গ্রাম থেকে পাড়েরহাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই। এক সময়ে কঁচা নদীর পাড়ে মাটির বেড়িবাঁধ ছিল। সিডরে সেটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধ না থাকায় এখন তিন হাজার লোককে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সিদ্দিকুর রহমান নামে স্থানীয় এক বৃদ্ধ জানান, জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এ সময়টায় নদীর পানিতে গ্রাম প্লাবিত হয়। তখন চাইলেই কেউ বাইরে বের হতে পারেন না।

‘বছরের চার মাস আমরা মসজিদে যেতে পারি না। এমনকি কেউ মারা গেলে জানাজার ব্যবস্থা পর্যন্ত করা যায় না,’ বলছিলেন সিদ্দিকুর।

এ কারণে তাদের গ্রামে কেউ ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে চায়না বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় শিক্ষক শাহজাহান হাওলাদার জানান, বছরের পর বছর ধরে তারা বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানালেও, তা বাস্তবায়ন হয়নি।‘আমরা বার বার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আমাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছি। কিন্তু তারা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর কেউ আমাদের খোঁজও নেয় না,’ অভিযোগ করেন শাহজাহান।

তবে গত বছর টগড়া ফেরিঘাট থেকে শুধু মাটি দিয়ে কিছু জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল যা আম্পানে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তাই চারাখালী থেকে পাড়েরহাট পর্যন্ত স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, টগড়া ও পাড়েরহাট গ্রামে মাটি ও জিও ব্যাগ দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago