ইরানে লকডাউনের মূল দুই কারণ
ইরানে যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল, সে সময় ইরানের দায়িত্বশীলদের ভাবনায় প্রথমেই ছিল— ‘হাসপাতালগুলো ভর্তি, আইসিইউগুলোতে জায়গা নেই’ এমন অবস্থায় কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়, তাহলে হয়তো সর্বোচ্চ চিকিৎসা না পেয়েই তিনি মারা যেতে পারেন। যে কারণে সে সময় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আগেই তা ঠেকানো যায়।
লকডাউন চলাকালীন দেশটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষই বাসায় অবস্থান করে এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করেছেন। এই লকডাউন সাত দিনের বেশি ছিল না। যদিও সে সময় ‘অবস্থা খারাপ হতে পারে’— এমনটি ভেবে অনেক জায়গায় অস্থায়ী হাসপাতাল পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। কিন্তু, ইরানের অবস্থা সেরকম পর্যায়ে যায়নি।
আরেকটি বিষয় তাদের ভাবনায় ছিল। তা হচ্ছে— রোগীর সংখ্যা হিসেবে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর যাতে অধিক চাপ না পড়ে। তারাই যেহেতু করোনার ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা, সেহেতু তাদের মানসিক অবস্থা ও অন্যান্য বিষয়গুলোও গুরুত্ব বহন করে।
এ দুইটি বিষয় ভেবেই মূলত লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় না ইরানের কেউ বলতে পারবেন যে, সেখানে বিনা চিকিৎসায় করোনা ইস্যুতে কেউ মারা গেছেন বা হাসপাতাল থেকে ফিরে গেছেন। করোনাকেন্দ্র ছাড়াও কেউ তার বাসার পাশের যে কোনো হাসপাতালে গেলে তাকে ভর্তি করা না হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া আর অবস্থা খারাপ মনে হলে পাশের করোনাকেন্দ্রে রেফার করার ব্যবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই করেছেন। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
এই মুহূর্তে প্রথম দিকের অভিজ্ঞতার আলোকে কাজ করা হচ্ছে। আগে যেখানে অনেক রোগীদের ক্ষেত্রেই করোনার লক্ষণ থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করা হতো। কিন্তু, এখন তা না করে বাসা থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে বলা হচ্ছে। দেশটিতে সুস্থতার হারও বাড়ছে। আমাদের ইস্পাহানে চারটি করোনা চিকিৎসাকেন্দ্র ছিল। এখন রোগী কমে যাওয়ায় দুইটি কেন্দ্র খালি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুইটি কেন্দ্রে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
উপরের দুইটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে সবাইকে আরও কিছুদিন বাসায় থাকার জন্য পরামর্শ দেবো এবং জরুরি ও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার জন্যই বলবো। বাসায় থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল, শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি), ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান।
Comments