ঘূর্ণিঝড় আম্পানে চুয়াডাঙ্গায় ৩২ কোটি টাকার আমের ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১০ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন আমের ক্ষতি হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১০ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন আমের ক্ষতি হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।   

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ১৯৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। চলতি মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৮০ হেক্টরে। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে ৩০ হেক্টর জমিতে আমের নতুন বাগান হয়েছে। এসব বাগান থেকে ফলন ধরা হয় ২৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আম। পাইকারি প্রতিমণ ১২০০ টাকা হিসেবে বিক্রি হলে, হবে ৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। 

মূলত আম চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলার কৃষকেরা আম বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ হাজার ৫৮৪ মেট্ট্রিক টন আমের ক্ষতি হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৩১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ।

চুয়াডাঙ্গার জেলা আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ‘আম্পানের তাণ্ডবে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে অধিকাংশ আম ঝরে পড়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার কেশপুর গ্রামে ৪০ লাখ টাকায় ৭০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ১০ হাজার আমের চারা রোপনসহ বাগান তৈরি করতে আরও ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এখনও খরচের বেশিরভাগই উঠে আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘ফলন যা আছে করোনার কারণে বাজারজাত নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি। তবে আমাদের এলাকার হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, আমরূপালীসহ অনেক ভাল ভাল জাতের আম ফলে। এ সব আম খুবই সুস্বাদু, দেশ বিদেশে এর খ্যাতি আছে। তবে পর পর দুটি ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ মৌসুমে  আম বিক্রি করে সারা বছরের বাগান পরিচর্যা ও শ্রমিকের মজুরি উঠে আসবে না।’

আম বর্গাচাষী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত আম জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন মোকামে রপ্তানি করে থাকি। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের এই আম বাজারজাত করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

আম বর্গাচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আম্পান ও  কালবৈশাখীতে প্রচুর আম ঝরে পড়েছে। অবশিষ্ট যে আম গাছে আছে, এর সঠিক বাজারজাতকরণ দরকার। এর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

আমবাগান শ্রমিক ফরজুল খাঁ জানান,  আম গাছে মুকুল আসার আগ থেকে ১৮-২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করি। আমাদের প্রতিমাসে ৯ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়। আম গাছ থেকে পাড়ার সময় আরো অতিরিক্ত শ্রমিক নেয়া হয় দিন হাজিরায়। তাদের ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে দেয়া হয়। কিন্ত ঝড়ে আম চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গার হিমসাগর আম বিখ্যাত। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা সঠিক দামে যেন আম বিক্রি করতে পারে এ জন্য জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এ জেলা থেকে বিভিন্ন মোকামে আম পাঠাতে বা বিক্রি করতে কোন ধরনের সমস্যা যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। বিভিন্ন মোকাম থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা চুয়াডাঙ্গায় আম কিনতে আসবেন তাদের নির্বিঘ্নে আসা, থাকা, খাওয়া এবং নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব কিছুর দেখভাল করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

তিনি জানান, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ আমসহ সকল প্রান্তিক চাষিকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

58m ago