ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পটুয়াখালী

প্রায় ৯ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালী জেলার ৬২৩ টি মৎস্য ঘের ও ৫ হাজার ৭৫৪ টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। ফলে, নয় কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ছবি: সোহরাব হোসেন

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালী জেলার ৬২৩ টি মৎস্য ঘের ও ৫ হাজার ৭৫৪ টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। ফলে, নয় কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের একজন রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজীর হাওলা গ্রামের শাহাদাৎ প্যাদার (৩৫)। তার ১১ একর জমির ওপর মাছের ঘের। দুই মাস আগে তিনি পাঁচ লাখ টাকার বাগদা, শলা চিংড়ি, রুই, কাতলা, কোড়াল মাছের পোনা ছেড়েছিলেন ঘেরে। আর এক মাস পর ঘের থেকে মাছ উঠিয়ে বিক্রি শুরুর কথা ছিল। কিন্তু, গত ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধসহ ভেসে গেছে সেই ঘেরের মাছ। মাছচাষি শাহাদাৎ এখন দিশেহারা হয়ে ক্ষতিপূরণের আশায় মৎস্য অফিসে ঘুরছেন।

শাহাদাৎ প্যাদা বলেন, ‘ঘেরে মাছ চাষে পাঁচ লাখ টাকার পোনা ছাড়ার পর রক্ষণাবেক্ষণে আরও পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এক মাস পর ঘেরে অন্তত ৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যেত। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে সব শেষ। রাঙ্গাবালীতে মাছচাষিরা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করে আসছেন। সিডর, আইলা, মহাসেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাছচাষিদের নিঃস্ব করে দিয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না।’

শুধু শাহাদতের নয়, তার মতো অনেকের রাঙ্গাবালীর প্রায় ৫০০ মাছের ঘের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে যায়। এসব রক্ষায় কোনো সরকারি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

জেলা মৎস্য কার্যালয় জানায়, আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে জেলায় মোট ৬২৩ টি মাছের ঘের ও ৫ হাজার ৭৫৪ টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ৮ কোটি ৯৬ লাখ ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে রাঙ্গাবালীর সদর ইউনিয়নের কাজীর হাওলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাছের ঘেরগুলো ফাঁকা। ঘেরের বাঁধ বিচ্ছিন্ন হয়ে জোয়ারের সময় পানি ঘেরে উঠছে, আবার ভাটায় নেমে যাচ্ছে। মাছচাষি শাহাদাৎ লোকজন নিয়ে তার ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামত করছেন।

ওই ঘেরের কাছেই আরেক মাছচাষি বাদল প্যাদারের (৪৫) ঘের। তিনি ২০ একর জমি নিয়ে মাছের ঘের করে প্রায় ৭ লাখ টাকার নানা প্রজাতির পোনা ছেড়েছিলেন। এক মাস পরে অন্তত ৪০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করার কথা ছিল তার। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান তছনছ করে দিয়েছে সব।

বাদল প্যাদা বলেন, ‘এমনিতেই করোনার কারণে পরিবহন সংকটে ঘের থেকে মাছ ধরা হচ্ছিল না। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সেই মাছও ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল। ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না কেউ। ক্ষতিপূরণ না দিক, অন্তত ঘের রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ দেওয়া হোক।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাগর মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে মাছের ঘেরের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি মাছের ঘের এই রাঙ্গাবালীতে। এই উপজেলায় মাছের জন্য সুনামও আছে।’

পটুয়াখালীর মৎস্য বিভাগ জানায়, আম্পানে জেলার রাঙ্গাবালীতে ৫০০ ঘের ও কলাপাড়ায় ১২৩ টি ঘেরসহ মোট ৬২৩ টি ঘের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫ হাজার ৭৫৪ টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এ্যামদাদুল্লাহ বলেন, ‘আসলে মাছচাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। বেড়িবাঁধের বাইরে ঘের করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বাঁধ না থাকলে জলোচ্ছ্বাসে ঘের ক্ষতি হবেই। তাই ঘের রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Yunus’ economic gambit paying off

Two months ago, as Professor Muhammad Yunus waded into Bangladesh’s unprecedented political turmoil, he inherited economic chaos by default.

2h ago