করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত নারীর দাফনে বাধা, ইউপি সদস্যের জমিতে দাফন
ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর মরদেহ শ্বশুর বাড়ি ও বাবার বাড়ি উভয় গ্রামের কবরস্থানে দাফনে বাধা দিয়েছে গ্রামবাসী।
পরে আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বাবার বাড়ির কাছে সদর উপজেলার কশালবাড়ি গ্রামের এক ইউপি সদস্যের জমিতে ওই গৃহবধূর দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ২৩ বছরের ওই গৃহবধূ। রোগীকে তার মা খদেজা বেগম, বোন ইতি আক্তার, ছোটভাই রাসেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালের প্রি-আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত এক টার দিকে ওই গৃহবধূ মারা যান বলে জানান তিনি।
গৃহবধূ মারা যাওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন থেকে তার স্বামী আকবর আলীসহ অন্যান্য স্বজনদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মরদেহ গ্রহণে স্বজনদের দিক থেকে সাড়া মেলেনি।
আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, ‘মারা যাওয়া নারীর সঙ্গে ছয় বছর আগে একই উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের আকবর আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তারা জগ্ননাথপুর ইউনিয়নের বাদুপাড়া কলোনিতে বসবাস করছিলেন। সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ দাফনের জন্য নিহতের বাবার বাড়িতে যাই। বঠিনা গ্রামে দুটি কবরস্থানে দাফনের জন্য কবর খুড়তে গেলে এলাকাবাসী বাঁধা দেয়।’
অন্যদিকে, আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের মাধ্যমে নিহতের শ্বশুরবাড়িতে ইউএনও দাফনের পদক্ষেপ নিলে সেখানেও গ্রামবাসী বাঁধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে নিহতের বাবার বাড়ির কাছের গ্রাম কশালবাড়িতে আকচা ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী তার নিজস্ব জমিতে কবর খুড়ে ওই গৃহবধূর মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
এরপর ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি স্বেচ্ছাসেবক দল মরদেহ নিয়ে যায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিকেলে দাফন করে।
ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘গ্রামবাসীর বাঁধার মুখে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া গৃহবধূর মরদেহ দাফন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মানবিক দিক থেকে নিজের জমিতেই কবর খুড়ে তাকে দাফনের উদ্যোগ নেই।’
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আজ সকাল থেকেই আউলিয়াপুর ও আকচা ইউনিয়নে গৃহবধূ রাণী আক্তারের লাশ দাফন করার চেষ্টা করলে গ্রামবাসী আপত্তি জানায়। পরে আকচা ইউপি সদস্য রমজান আলীর জমিতেই কবর খুড়ে দাফন করা হয়।’
Comments