করোনায় চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমের ৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৫

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি
ছবি: স্টার

করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর জেটির তিন কর্মচারী মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন কাস্টম হাউজ ও চট্টগ্রাম বন্দরের ৩৫ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যাদের মধ্যে ২১ জন বন্দরের এবং ১৪ জন কাস্টমসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন আরও অন্তত ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি-রপ্তানি পণ্য শুল্কায়নের জন্য আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা তা খালাসের জন্য বন্দরে আসেন। প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার সেবাগ্রহণকারী কাস্টম হাউজ ও বন্দরে আসার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা।

তারা বলছেন, বিশেষ করে বন্দরের জেটি এলাকায় প্রতিদিন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানচালক ও সহকারী, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টসহ বিভিন্ন সেবাগ্রহণকারীরা ভিড় করেন। ফলে এসব জায়গায় সব সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। মূলত এসব কারণে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনা -আতঙ্কে ভুগছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফকরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটির মধ্যেও সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসে ২৪ ঘণ্টাই সচল ছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। প্রতিদিন প্রচুর সেবাগ্রহীতা সেবা নিতে আসার কারণে সবসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ও আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সংক্রমণ কমানো গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভিড় কমাতে কর্মকর্তাদের দুই শিফটে কাজ করানো হয়েছে। করোনা উপসর্গ দেখার সাথে সাথে সন্দেহজনক কর্মী ও সংশ্লিষ্ট গ্রুপ ও শিফটে দায়িত্বরতদের ছুটি ও হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।’

সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে কাজ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন-চার হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানে করে ছয়-থেকে আট হাজার চালক ও চালকের সহকারী বন্দরে প্রবেশ করে। তাছাড়াও আরো চার-পাঁচ হাজার সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, বন্দরে নিয়োজিত শ্রমিক জেটিতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। এছাড়া আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। এতো বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে দূরত্ব নিশ্চিত করে কাজ করা মুসকিল। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা বন্দর হাসপাতালের মাধ্যমে ১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছি। তাও পর্যাপ্ত নয়। ফলে বন্দর হাসপাতালের অধীনে করোনা পরীক্ষার একটি বুথ করার উদ্যোগ নিয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ করেছি আলাদা একটি বুথ করতে। আশা করছি দু-তিন দিনের মধ্যে তা করা সম্ভব হবে।’

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের দুই কর্মীসহ তিন জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর বন্দরের জেটিতে কর্মরত দুই হাজারের বেশি বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাসহ সেখানে কর্মরত শ্রমিক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার জন্য বন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তারা সিএন্ডএফ এজেন্টদের দ্রুত পণ্য খালাসের মানসিকতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানাকে দায়ী করছেন।

তবে এ বিষয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাচ্চু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সবাই দ্রæত কাজ শেষ করতে চায়। এতো ছোট একটি এলাকাতে এতো বেশি সংখ্যক লোক আসার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক জনবল দিয়ে কাজ করছেন। তার ওপর করোনার সময়ে এসে তা কমে এসেছে আরো কয়েক গুণ। ফলে অন্য সময়ের তুলনায় কাজ করতেও কয়েক গুণ বেশি সময় লাগছে। জনবল বাড়লে এ সংকট কেটে যাবে এবং সামাজিক দূরত্বও কিছুটা মেনে চলা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কয়েক দফা বাড়িয়ে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। আগামীকাল রোববার থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত আকারে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থায় খোলা থাকবে। এসময়ে কাস্টমস ও বন্দরের ওপর আরো বেশি চাপ তৈরি হবে বলে মনে করছেন কাস্টমস-বন্দরের কর্মকর্তারা।

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

15m ago