আমরা যা আজ ভাবছি, পশ্চিমা বিশ্ব তা আগামীকাল ভাবছে: ড. বিজন

• জাপান যে পরীক্ষার কথা ভাবছে, আমরা তা করে ফেলেছি।

• অনুমোদনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তিন বছরকে তিন দিনে নামিয়ে এনেছে।

• গণস্বাস্থ্যের কিটের পরীক্ষায় সাফল্যের হার ৯০ শতাংশের বেশি।

• আমরা যে কিট উদ্ভাবন করেছি, তা ডা. জাফরুল্লাহ স্যার ছাড়া সম্ভব হতো না।

• করোনার ভ্যাকসিন আসতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।

• বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ হয়তো আক্রান্ত হয়েছেন।

ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশের বিজ্ঞানী-গবেষক, পরিচিতি পৃথিবীব্যাপী। ছাগলের রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে আলোচনায় এসেছিলেন। তবে, পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ২০০৩ সালে যখন তিনি সিঙ্গাপুরে সার্স ভাইরাস শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করেন। এখন তিনি আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করছেন করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করে। কিট এখনো অনুমোদন পায়নি, তবে ড. বিজন পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা।

নাটোরের কৃষক পরিবারের সন্তান সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। যোগ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, ক্যামেরার সামনে আসায় ব্যাপক অনীহা। তবুও দ্য ডেইলি স্টারের মুখোমুখি হয়েছিলেন গত ৩০ মে রাত ১০টায়। ড. বিজন কথা বলেছেন সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে। তার কর্ম-গবেষণা ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলেছেন অনেক কথা। দ্য ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচারিত সেই সাক্ষাৎকার এবার লিখিত আকারে পাঠকের সামনে।

আপনাদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট ‘জি র‍্যাপিড ডট ব্লট’ বর্তমানে কী অবস্থায় আছে?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কিটের ট্রায়াল চলছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে এই ট্রায়াল শেষ করে তারা রিপোর্ট দেবেন অনুমোদনের জন্য।

গত সপ্তাহে যখন আপনার সঙ্গে কথা হয়, তখনো আপনার আশা ছিল ‘আগামী সপ্তাহে’ ফলাফল পাবেন। সেই সময় পার হয়ে গেছে। এখনো আপনি আশাবাদী। এই আশার সময়টা কি বেশি হয়ে যাচ্ছে? আপনার কী মনে হয়?

একটু তো বেশি হচ্ছে। প্রথমে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন রক্ত থেকে শনাক্ত করার জন্য। কিন্তু, ইতোমধ্যে আমরা স্যালাইভা থেকে এটি শনাক্ত করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে অতি দ্রুত আমরা শনাক্ত করতে পারছি। দেখা গেছে রোগীর উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই তার স্যালাইভাতে ভাইরাস পাওয়া গেছে। যার কারণে আমরা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলকে অনুরোধ করেছি, স্যালাইভা পদ্ধতিতে পরীক্ষার কিট ট্রায়ালের জন্য নিতে। এটা করতে গিয়ে আবার তাদের মিটিং করতে হয়েছে এবং অনুমোদন নিতে হয়েছে। এরপর আমরা তাদের কিট দিয়েছি এবং স্যালাইভা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় কন্টেইনার, যেটা তাদের কাছে ছিল না, সরবরাহ করেছি। এ কারণে হয়তো একটু বেশি সময় লাগছে। তবে, তা সত্ত্বেও বলবো, সময় বেশি লেগে যাচ্ছে।

আপনারা হয়তো জানেন বিশ্বে দুইটি দেশে অ্যান্টিজেন কিট অনুমোদন পেয়েছে। একটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং অপরটি জাপানে। জাপানের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন তারা ভবিষ্যতে স্যালাইভার বিষয়ে ভাববেন। কিন্তু, তার আগেই আমরা স্যালাইভা পরীক্ষা করে ফেললাম। এর মাধ্যমে বেশ ভালো ফলাফল আমরা পেয়েছি।

আপনারা জানেন যে আমাদের কিট দিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা আমি শনাক্ত করেছি। আমাদের কিট দিয়ে গত ২৬ মে আমরা পরীক্ষা করি। ২৭ মে তিনি পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আপনারা অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা পৃথিবীতে প্রথম দিয়েছিলেন। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র পরে ঘোষণা দিলেও আগে বাজারে নিয়ে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিটের অনুমোদন দিয়েছে। জাপানের আগে আপনারা স্যালাইভা পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছেন। আগের মতো এই ক্ষেত্রে আবারও কি আপনারা পিছিয়ে পড়বেন?

সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ, আমরা এর জন্য পেটেন্ট ফাইল করেছি। যদি অন্য কেউ এটা করতে চায়, তাহলে তার জন্য আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

কিন্তু, আপনাদের কিট নিয়ে তো বহু সমালোচনা। দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের অনেকে বলেন, এই ধরনের কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে সঠিক ফল পাওয়া যায় না।

নভেল করোনাভাইরাস আমার কাছে নতুন না। কারণ, ২০০৩ সালে আমি সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করেছি। এটা সার্সেরই খুব ঘনিষ্ঠ ভ্রাতা। এটা অনেকটা সার্সের মতোই। যারা এসব বলছেন, ফলাফল ঠিক মতো আসে না বা সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না, তারা সবাই অনেক অভিজ্ঞ, আমি তাদের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি নই। আমি যা বলছি, যা করছি, তা নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে সার্স শনাক্ত করতে আমি চারটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছিলাম। যার প্রথম এবং দ্বিতীয়টি বর্তমানে বাংলাদেশে করা যাচ্ছে না। কারণ, সেই ক্যাটাগরির ল্যাবরেটরি আমাদের নেই।

এরপর আছে পিসিআর পদ্ধতি, সেটা আমরা সেই সময় (২০০৩ সালে) সিঙ্গাপুরে ডিজাইন করেছিলাম। সর্বশেষ পদ্ধতি ছিল ডট ব্লট। ডট ব্লট পদ্ধতিটা সবচেয়ে দ্রুত শনাক্ত করার পদ্ধতি। পিসিআরে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে এবং সেল কালচারে তারও বেশি সময় লাগে। ডট ব্লটে সময় লাগে ১৫ মিনিট। যেটাতে এখন সময় লাগছে তিন থেকে পাঁচ মিনিট। আমরা গবেষণা-উদ্ভাবন-পরীক্ষার ভিত্তিতে বলছি যে, সঠিক ফলাফল পেয়েছি। যারা বলছেন (কিটে সঠিক ফল পাওয়া যায় না), তারা কিসের ভিত্তিতে বলছেন আমরা জানি না।

এটা সঠিক ফল দেয় না, এই প্রচারণার কারণ কী?

যারা বলছেন তারা কিছু জানেন না, তা আমি বলব না। তারাও জানেন। কিন্তু, এই বিষয়ে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বেশি রয়েছে। অ্যান্টিবডি পরীক্ষা দরকার আছে, অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও দরকার আছে। গত ২০ বছরে মলিকুলার টেকনোলজির বিশাল সম্প্রসারণ হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সময় জানা গেছে যে, পিসিআর পরীক্ষার ফলাফলে ভুল আসছে। সবচেয়ে বড় কথা পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ একটি বড় ব্যাপার। যদি আপনি সঠিক জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ না করেন বা করতে না পারেন, তাহলে পরীক্ষায় সঠিক ফল পাবেন না। দক্ষ টেকনিশিয়ান দরকার, সেই সঙ্গে এটি সংরক্ষণও জরুরি। এগুলোর অভাবে দেখা যায় পিসিআর পরীক্ষায় সাধারণত ৩০ শতাংশ ভুল ফলাফল আসতে পারে। আর পিসিআর মেশিনের দামও অনেক বেশি। সেই সব চিন্তা থেকেই এই র‌্যাপিড ব্লট কিট তৈরি করা। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এটা দিয়ে আপনি পরীক্ষার ফল জানতে পারবেন। সমালোচনাকে আমি শ্রদ্ধা করি, তা গঠনমূলক হলে আরও বেশি শ্রদ্ধা করব।

যখনই আপনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, শুনি যে আপনি ল্যাবে। ল্যাবে এখন ব্যস্ত কী নিয়ে?

লকডাউনের কারণে আমাদের প্রত্যেকটি রিএজেন্ট আমদানি করতে হয়েছে। সেগুলোও এসেছে অনেকগুলো দেশ ঘুরে। সময় বেশি লাগার কারণে সেগুলো নিয়েও কিছু চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে। কিন্তু, আমরা পরাজিত হইনি। সেই সঙ্গে যেহেতু অনেক সমালোচনা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, তাই আমরা এটিকে আরও রিফাইন করার কাজ করছি। আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না, এখন যে ল্যাবে আমরা কাজ করছি এটি তৈরি করেছিলাম মাত্র সাত দিনের মধ্যে। আমরা যা আজ ভাবছি, পশ্চিমা বিশ্ব তা আগামীকাল ভাবছে। এজন্যে আমাদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে, যাতে কোনো ভুল না হয়।

সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশের ল্যাবে কাজ করে এসেছেন আপনি। সেখান থেকে ফিরে বাংলাদেশে এসে গরিবের জন্যে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

আমাদের টিমে গবেষক যারা আছেন, তারা সবাই খুবই মেধাবী। সিঙ্গাপুরে কাজের সময় যখন যেটা চাইতাম খুব দ্রুতই তা চলে আসত। তখন কোনো লকডাউন ছিল না। সেখানে অ্যান্টিজেন আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। কিন্তু, এখন এই অ্যান্টিজেন পেতে আমাদের খুব বেগ পেতে হয়েছে। আমাদের অনেক কিছুতেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোনো কিছুই আমাদের দেশে তৈরি হয় না, সবই বাইরে থেকে আনতে হয়েছে। অনেকেরই সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সাহায্য করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের সাহায্য করেছে। কাস্টমস আমাদের সাহায্য করেছে। সবার সহযোগিতা নিয়েই আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। সামনের বাধাও আশা করি অতিক্রম করতে পারব।

সিঙ্গাপুরে সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবনের পর তার অনুমোদন পেতে আপনাদের কতদিন লেগেছিল?

তখন ছিল সার্স ভাইরাস সংক্রমণের জরুরি পর্যায়। যে কারণে আমাদের কিটের অনুমোদনের জন্যে বাড়তি কোনো সময় লাগেনি। আমি সিঙ্গাপুর সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলাম। সেটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সেখানে কাজ করে আমরা যে কিট তৈরি করেছি, সেটাই সরকার অনুমোদিত বলে ধরা হয়েছে। সরাসরি শনাক্তের কাজ শুরু হয়েছে সেই কিট দিয়ে।

সার্সের তুলনায় করোনাভাইরাস অনেক বেশি জরুরি অবস্থা তৈরি করেছে সারাবিশ্বে। এমন সময়ে কিট অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কেমন সময় নিচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ’র (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনুমোদন পেতে আপনাকে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা লিখে, কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে তারপর অনুমোদন পেতে হয়। সেই এফডিএ অ্যান্টিজেন কিট তিন দিনের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কেমন সময় নিচ্ছে। তিন বছরকে তিন দিনে নামিয়ে এনেছে।

জানা যায় বিশ্বব্যাপী পিসিআর পরীক্ষায় কমবেশি ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল ফলাফল আসে। আপনাদের কিটে ভুল ফলাফল আসার সম্ভাবনা কতটা?

কোনো পরীক্ষায়ই শতভাগ সঠিক ফল পাওয়া সম্ভব না। কেউ যদি এমনটা বলে, তাহলে ভুল বলবে। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কারণে আমাদের পরীক্ষায় ফাঁকফোকর কম। আমাদের কিটের পরীক্ষার সাফল্যের হার ৯০ শতাংশের বেশি হবে।

অল্প সময়ে করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছে ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়া। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে তাদের সাফল্যের কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

আমরা পরীক্ষার সময়ে উপসর্গহীন মানুষের স্যালাইভাতে করোনা পেয়েছি এবং অনেক বেশি পরিমাণে পেয়েছি। কোরিয়ার দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন তারা ম্যাসিভ পরিমাণে পরীক্ষা করেছে। তারা র‌্যাপিড কিট ব্যবহার করেছে এবং করছে। তারা ভাইরাসটি ছড়াতে দেয়নি। আমাদের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সরকার চেষ্টা করার পরেও মানুষ চলাচল করছে। ফলে ভাইরাস ছড়াচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় যখন আসে তখন সে সব গাছের ওপরেই প্রভাব ফেলে। দুর্বল গাছ ভেঙে যায়, শক্তিশালীগুলো টিকে থাকে। করোনাভাইরাসও আমাদের কাউকেই ছাড়বে না, আমরা যতই পালিয়ে থাকি না কেন। তবে, আমরা বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে যাব। যারা অন্য রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি বেশি ক্ষতির কারণ হবে।

বিভিন্ন জায়গা থেকেই এখন শোনা যাচ্ছে, আমার আত্মীয় করোনায় আক্রান্ত, তার প্লাজমা থেরাপি দরকার। এটা সম্ভবত বেশি প্রচারণা পেয়েছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্লাজমা থেরাপি নিয়ে সুস্থ বোধ করছেন সেটা জানার পর। বাংলাদেশে এই প্লাজমা থেরাপির সুযোগ কতটা আছে বা এর কোনো খারাপ দিক আছে কিনা?

আমি গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে লিখেছিলাম, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এখন একটাই পথ খোলা, আর তা হলো— ‘হাইপার-ইমিউন থেরাপি’ বা ‘প্লাজমা থেরাপি’। এর মাধ্যমে অনেক সংবেদনশীল রোগীদেরও সুস্থ করা যেতে পারে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শরীরে প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার পর এখন যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। যা ভাইরাসটিকে প্রতিহত করতে সমর্থ।

এর থেকেও ভালো একটি পদ্ধতি আছে। করোনা রোগীর শরীরে যদি করোনা থেকে সুস্থ হওয়া কারো রক্ত দেওয়া যায়, তাহলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে দুই জনের রক্ত ম্যাচ করতে হবে। রক্ত দিলে ভালো হবে। কারণ, রক্তের অ্যান্টিবডি  ‘ভাইরাস যাতে বাড়তে না পারে’ তা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের প্লাজমা সেল অ্যান্টিবডি তৈরি করে। প্রতি সেকেন্ডে তা দুই হাজার অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর শরীরে আরেকটি সেল থাকে, তা হলো মেমরি সেল। এটি খুব দ্রুত প্লাজমা সেল তৈরি করে। যার কারণে প্লাজমা থেরাপি ভালো হলেও তার চেয়েও ভালো সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর রক্ত দেওয়া। এর ফলে ত্রিমুখী আক্রমণের মাধ্যমে ভাইরাসকে প্রতিহত করা যাবে।

এই রোগ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মনোবল। মনোবল শক্ত থাকলে তা শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ব্যক্তি বিজন কুমার শীল সম্পর্কে জানতে চাই। জন্ম, বেড়ে ওঠা কোথায়?

আমার জন্ম নাটোরে একটি কৃষক পরিবারে। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালীন আমি বাবার সঙ্গে মাঠে কৃষিকাজ করেছি। বনপাড়া সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছি। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। গ্র্যাজুয়েশন করেছি ডক্টর অব ভেটেনারি অ্যান্ড মেডিসিনে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকেই মাস্টার্স করে পিএইচডি করি লন্ডনে মলিকুলার ভাইরোলজি নিয়ে।

কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। তখন ছাগলের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করি। যেটা এখন বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে আমি কাজ করেছিলাম ১০ বছরের মতো। এরপর আমি কাজ শুরু করেছিলাম অধ্যাপক নূরুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে, ডেঙ্গু নিয়ে। ২০০০ সালে যখন বাংলাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হলো তখন নূরুল ইসলাম স্যার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি উপাচার্য হন। ওই কাজটি করতে গিয়ে আমি সিঙ্গাপুর সরকারের নজরে পড়ি। তারা তখন ডেঙ্গুর ওপর ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যাপারে ভাবছিল। আমার একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছিল ফ্রান্সে। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর সরকার আমাকে আমন্ত্রণ জানায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ করার জন্যে। সিঙ্গাপুরে গিয়ে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস নিয়ে কাজ শুরু করলাম।

সার্স মোকাবিলা শেষ করার পরেই আমি যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলাম তা হলো— স্যালাইভা থেকে ডেঙ্গু শনাক্তের পদ্ধতি বের করা। এটা নিয়ে পৃথিবীতে ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন বায়ো র‌্যাক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ডেঙ্গুর র‌্যাপিড টেস্ট কিট তৈরি করেছে। এই পর্যায়ে র‌্যাপিড টেস্ট কিটে একাধিক পরীক্ষার পরিকল্পনা করি। অর্থাৎ, একটা কিটে অনেকগুলো পরীক্ষা করা যায়, সেই ব্যবস্থা। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরেই আমি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সেখানেই আমি র‌্যাপিড টেস্ট কিট ডেভেলপের কাজ করি।

আপনি সিঙ্গাপুরে কাজ করছিলেন। সেখানে থেকে দেশে ফিরে আসলেন কেন?

আমি যে সমস্ত পণ্য উদ্ভাবন করেছি তার মধ্যে পাঁচটি এখন বাজারে আছে, যা ইউরোপিয়ান কমিশন অনুমোদিত। এই সবগুলোরই ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা আমি বাংলাদেশে করেছি। দেশের ঋণ কখনো শোধ হয় না। মা ও মাতৃভূমির ঋণ শোধ করা যায় না। আমি এমন একটি সময় দেশে ফিরে এসেছি যখন আমার আসা উচিত ছিল।

দেশে অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থাকতে গরিবের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্যে কেন যোগ দিলেন?

আমি গরিব মানুষেরই বন্ধু। সবসময় গরিবের জন্যই কাজ করি। আর আমার কেন যেন মনে হয়, আমরা যে কিট উদ্ভাবন করেছি, তা ডা. জাফরুল্লাহ স্যার ছাড়া সম্ভব হতো না। এর জন্য যে মানসিক শক্তি প্রয়োজন হয়েছে, তা আর কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না।

আপনি একজন বিজ্ঞানী-গবেষক। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কি প্রকৃত অর্থে কোনো গবেষণা হচ্ছে?

বাংলাদেশে মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল থেকে বঙ্গমাতা মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার তৈরি করছে। আমি সেখানে উপদেষ্টা হিসেবে আছি। করোনা কিট তৈরি করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, এটি যদি আরও ১০ বছর আগে তৈরি হতো, তাহলে বাংলাদেশ আজ পিসিআর কিট তৈরি করতে পারত, আমাদের কিটের সকল রিএজেন্ট তৈরি করতে পারত। লকডাউনের মধ্যে বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হতো না। আমাদের গবেষণা, গবেষণার সুযোগ, প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তা ছাড়া তো চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতি সম্ভব না। আগামী দিনগুলোতে তা নিশ্চয়ই হবে।

কিন্তু আমরা কি এই পদ্ধতিতে বিশ্বাসী? আমরা তো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আপনি যেখানে গবেষণা করেছেন সেই সিঙ্গাপুর চলে যাই, ব্যাংকক চলে যাই।

এবারের সমস্যার ব্যাপকতার কারণে সবাই বুঝতে পেরেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন, এই মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারটি হোক। আমাদের দেশে অনেক বিজ্ঞানী আছেন। আমার সঙ্গে যে চারজন বিজ্ঞানী আছেন তারা খুবই দক্ষ-মেধাবী-পরিশ্রমী। কিন্তু, আগে তারা কাজ করার সুযোগ পাননি।

করোনাভাইরাসে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম। এমনকি যদি সরকারি হিসাবের বাইরে বেসরকারি হিসাব মেলালেও মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক বিচারে কম। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আমার ধারণা বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ হয়তো আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে গেছেন, নিজেও হয়তো জানেন না। আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সব সময় বাড়াতে হয়। এটা তখনই বাড়ে যখন বাইরে থেকে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে প্রবেশ করে। আমাদের দেশে বাতাসের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ভাইরাস গ্রহণ করছি। যে কারণে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই অ্যাকটিভ। আমার মনে হয়, ইউরোপের মানুষের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাটি এভাবে অ্যাকটিভ ছিল না। যার কারণে ভাইরাস তাদের বেশি আক্রমণ করতে পেরেছে। আমাদের দেশে তাপমাত্রাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা করোনাভাইরাসের অত বেশি প্রকোপ অনুভব করছি না। আগামী ১৫ দিন থেকে এক মাস বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। তবে, আক্রান্ত হলেও তার খুব খারাপ প্রভাব পড়বে না।

চীন, ইউরোপ ও বাংলাদেশে এই ভাইরাসের শক্তির কি তারতম্য আছে?

চীন ও ইউরোপে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে শীতকালে। আমাদের সৌভাগ্য আমাদের দেশে ভাইরাসটি এসেছে গরমে। মার্চের শেষ দিকে হওয়ায় আমরা অনেকাংশেই প্রাকৃতিক সুবিধা পেয়েছি। শীতকালে ঘরের জানালা-দরজা সব বন্ধ থাকে। ভাইরাস মানুষকে চেপে ধরতে পারে। গরমে জানালা-দরজা খোলা থাকায় বাইরের বাতাস পাওয়া যায়। ভাইরাস বন্ধ ঘরে আটকে থাকার মতো সুবিধা গরমকালে পায় না।

বাংলাদেশে আর ছুটি বাড়ানো হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে করণীয় কী? বিজ্ঞানী হিসেবে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভাইরাসটি যেহেতু মুখে বাড়ে, আপনি যদি গরম চা পান করেন, চা দিয়ে গার্গল করেন, তাহলে ভাইরাসটি খুব সহজে বাড়তে পারবে না। চা একটি অ্যান্টিবায়োটিক। আর এটি গরম হওয়ার কারণে মুখের ভেতরে রক্তের প্রবাহ বাড়বে। যা রোগপ্রতিরোধী সেল বাড়ায়। আর সবচেয়ে বড় বিষয় ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় ও সতেজ করে। আমাদের দেশে ভিটামিন সি এবং জিংকের সমন্বয়ে কোনো সাপ্লিমেন্ট ছিল না। গণস্বাস্থ্য এটা তৈরি করছে।

বাজারে ভিটামিন সি’র যেসব প্রাকৃতিক উপাদান (লেবু, মাল্টা বা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল) পাওয়া যায়, তার পাশাপাশি সকালে দুটো এবং রাতে দুটো সাপ্লিমেন্ট নিলে আমার মনে হয় ভাইরাসের প্রকোপ অনেকাংশে কমবে। এই ভাইরাস আপনাকে সংক্রমিত করবেই। এর থেকে মুক্তি নেই। কিন্তু, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনাকে এর মোকাবিলা করতে হবে।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কোন পর্যায়ে আছে বলে আপনার মনে হয়?

মানুষের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি খুব সহজ জিনিস না। এটা দু-চার দিনের মধ্যে আসবে— এমন কিছু আশা করি না। কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তা প্রমাণ করতে সময় লাগবে। ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়েও কাজ চলছে। কিন্তু, ম্যাসিভ আকারে তা আসেনি। এটা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার।

করোনার কিটের পাশাপাশি আর কী করছেন?

আমার একটি কিট বাজারে আসার পথে। ২০১৫ সালে বেঙ্গালুরোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট তৈরি করেছিলাম। সেটা ভারত সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এটা এখন বাংলাদেশে তৈরি করার পরিকল্পনা করছি। হয়তো ডেঙ্গুর এই মৌসুমেই তা বাংলাদেশের মানুষ পেতে পারে।

আরেকটি ভালো কিট আমি তৈরি করেছি রক্ত পরীক্ষা করার। রক্ত দেওয়ার সময় পাঁচটি পরীক্ষা করতে হয়। এই পরীক্ষাগুলোর জন্য পাঁচটি আলাদা ডিভাইস লাগে। আমি এগুলোকে একটি ডিভাইসে নিয়ে আসছি। তবে, স্যালাইভা থেকে করোনা শনাক্তের কিট আবিষ্কার করতে পেরে আমার টিমের সবাই খুব সন্তুষ্ট। বিশ্বাস করতে পারবেন না, আমার টিমের বিজ্ঞানীরা দিনে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছেন।

২২ ঘণ্টা কাজ করা বিজ্ঞানীদের অন্তরে দুঃখ জমা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে।

তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে মাঝেমধ্যে। তারা যে স্যাক্রিফাইস করেছে, তার তুলনা হয় না। এত অল্প সময়ে একটি কিট তৈরি করা হয়েছে। তাও বাংলাদেশের মতো জায়গায় বসে, যেখানে সব রিএজেন্ট আনতে হয়েছে বাইরে থেকে। আজ যে পর্যায়ে এসেছি, সেখান থেকে এই কিট যদি ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে বিশাল দুঃখ থাকবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই দুঃখ পাবেন। এই কিটটা বাংলাদেশের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতেই যেতে পারে। এটা এক বিশাল বিনিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের মতো দেশ যা চিন্তা করতে পারছে না, তা আমরা করে ফেলেছি। এটা দেশের জন্য এক বিরাট সুনাম। এটা যেন আমরা নষ্ট না করি।

আগামী দিনে কি বাংলাদেশে থেকেই গবেষণা করবেন, নাকি উন্নত কোনো দেশে যাওয়ার ডাক পেলে সেখানে চলে যাবেন?

আমি দেশেই কাজ করতে চাই। অন্য কোথাও যাব না, যেতে চাই না। দেশে থেকেই আমার দেশের বিজ্ঞানকে আমি বাইরে রপ্তানি করব। বাইরে থেকে কিছু আনব না, আমরা নিজেরাই তৈরি করব।

ডেঙ্গুর মৌসুমে করোনার আক্রমণ। বাংলাদেশের কেউ যদি একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে করণীয় কী?

অতি দ্রুত শনাক্ত করতে হবে আগে। এরপর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা।

শেষ প্রশ্ন। বাংলাদেশের অল্পকিছু ব্যতিক্রম ছাড়া চিকিৎসকদের কাজের সুনাম আছে। কিন্তু, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ব্যবস্থাপনার দিকে তাকালে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার আলোচনাই সামনে আসে। সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা যেমন আপনার হয়েছে, তেমনি হয়েছে বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে আপনার ধারণা এবং পরামর্শ কী?

কঠিন প্রশ্ন। আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষ এর উত্তর দিতে পারে না। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুবই উন্নত। একবার রাত একটার দিকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ফোন করার ১০ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আমাদের (বাংলাদেশের) চিকিৎসকরা খুব ভালো এবং অভিজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি আরেকটু সচেতন হই, তাহলে আমাদের দেশেও সেটা সম্ভব। আমরা চাইলেই পারব। আমরা কী করতে চাই, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা অবশ্যই অনেক কিছু ভাবছেন। আমার বিশ্বাস, করোনা থেকে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন এবং আমরা সবাই মিলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি করতে পারব।

দেশের মানুষের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কী?

সবাইকে শুধু এটাই বলব, করোনা নিয়ে ভয় পাবেন না। সারা পৃথিবীর মতোই এটি বাংলাদেশে এসেছে। আমার কাছে মনে হয় এর তীব্রতা অনেকাংশেই কমে আসছে। আমি যতটা বলেছি, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। আগেই বলেছি, আমি মহাপণ্ডিত নই। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, কারও মনে আঘাত লেগে থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি এবং আমার টিম একেবারে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। তার সাফল্য এই যে, আমরা আজ যা ভেবেছি, বহির্বিশ্ব আগামীকাল তা ভাববে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এবং আপনাদেরকে। আপনাদের মাধ্যমে আমরা সফল বাংলাদেশের চিত্র দেখছি। গরিব মানুষের জন্য কাজ করার যে ব্রত নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাজ করছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের একটি হাসপাতালে সাত দিনের মধ্যে ল্যাব তৈরি করে করোনা পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছেন আপনারা। আপনার মাধ্যমে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল কর্মী, আপনার ল্যাবের সকল বিজ্ঞানী ও কর্মীদের আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। অভিনন্দন আপনাদের।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Emerging Cocaine Transit Hub

Bangladesh now a transit for cocaine smuggling

A sharp rise in the smuggling of cocaine, which mainly enters Bangladesh from African and South American countries, has become a new headache for authorities.

15h ago