‘ঢাকার বস্তিগুলোতে করোনা আক্রান্ত আছে কিনা জানা নেই’

রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে ঈদের দুই দিন আগে বিকেলে একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে এসে হঠাৎ করে মারা যান। মসজিদে ভিড় হয়। অন্য মুসল্লিদের জিজ্ঞেস করি— কী হয়েছে এত ভিড় কেন? তারা জানান, ‘একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে এসে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে, কেউ বলে স্ট্রোক করে মারা গেছে, কেউ বলে কীভাবে মারা গেছে জানি না!’
Slum dwellers
ভাষানটেক বস্তি। ছবি: স্টার

রাজধানীর ভাষানটেক বস্তিতে ঈদের দুই দিন আগে বিকেলে একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে এসে হঠাৎ করে মারা যান। মসজিদে ভিড় হয়। অন্য মুসল্লিদের জিজ্ঞেস করি— কী হয়েছে এত ভিড় কেন? তারা জানান, ‘একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে এসে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে, কেউ বলে স্ট্রোক করে মারা গেছে, কেউ বলে কীভাবে মারা গেছে জানি না!’

নিহত ব্যক্তি পেশায় বাবুর্চি ছিলেন। মধ্যবয়স্ক সেই ব্যক্তি মসজিদের পাশেই বস্তিতে থাকতেন।

নিহতের কোনো করোনা উপসর্গ ছিল কিনা, সে সম্পর্কে কারো কোনো ধারণাই নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঢাকার বস্তিগুলোতে করোনা আক্রান্ত আছে কিনা জানা নেই, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

তবে যেহেতু সারা দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে তাই অনেকে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। যেহেতু বস্তিবাসীরা দরিদ্র, বিভিন্ন জায়গায় বের হন, কেউ রিকশা চালান, কেউ রাস্তাঘাটে বিভিন্ন রকম কাজ করেন, তাই অনেকের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হতে পারে।

রাজধানীর রমনা এলাকার একটি বস্তিতে একজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। এ ছাড়া আর কোথাও কোনো আক্রান্ত বা মারা যাওয়ার সংবাদ এখনো জানা যায়নি।

ঢাকা শহরের ৭০টির বেশি বস্তি আছে। এগুলোতে কয়েক লাখ মানুষ বাস করেন।

বস্তিতে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তা হবে ভয়াবহ। কারণ সেখানে ছোট ছোট ঘর। একটা ঘরের সঙ্গে আরেকটা ঘর লাগানো অবস্থায় থাকে। রাস্তা একেবারেই সরু। ঘরের ভিতরে ও বাইরে অনেক মানুষ। ছোট একটা ঘরে চার থেকে ছয় জন করে বসবাস করে। বস্তিবাসীদের মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই।

রাজধানীর বনানীতে কড়াইল বস্তি সবচেয়ে বড়। এখানে প্রায় ৩০ হাজার ঘর আছে। প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষ বসবাস করেন ৯০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে।

রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় ভাষানটেক বস্তি যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার ঘর ২৫ হাজারের মতো লোক বসবাস করে। এছাড়াও, পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ বস্তি, রূপনগরের চলন্তিকা বস্তি ও মিরপুর কমার্স কলেজের পাশে ঝিলপাড় বস্তি রয়েছে।

ভাষানটেক ধামালকোট বস্তি মিরপুর সিআরপির পিছনে আবুলের বস্তিতে কয়েকদিন ধরে করোনা রোগী সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। যেখানে কারো জানা মতে কোনো করোনা রোগী নেই।

এই বস্তিগুলোর একাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, কারো শরীরে করোনাভাইরাস থাকতে পারে, অনেকের শরীরে জ্বর আছে, অনেকের ঠান্ডা আছে। কিন্তু কেউ পরীক্ষা করতে যায় না। কোথায় যেতে হবে কীভাবে পরীক্ষা করতে হয় তা তাদের জানা নেই।

কড়াইল বস্তি উন্নয়ন কমিটির বউবাজার শাখার সভাপতি মাওলানা আবদুস সোবাহান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বস্তির অনেকের মধ্যেই জ্বর-ঠান্ডা আছে। জ্বর-ঠান্ডা হলে প্যারাসিটামল খায় কেউ, কেউ ঠান্ডার ওষুধ খায়। কিন্তু করোনা হয়েছে বা করোনা হয়ে মারা গেছে এ রকম কোনো সংবাদ আমাদের জানা নেই।’

‘তবে বস্তিতে অন্য সময়ের মতো এখনো লোকজন মারা যান। কেউ বার্ধক্যে, কেউ বিভিন্ন রোগে মারা যান। তাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। তবে তা আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না,’ যোগ করেন তিনি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে বস্তিগুলোর মতই অনেকগুলো বিহারি ক্যাম্প আছে সেখানো সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। কারণ, সেগুলো খুবই ঘনবসতিপূর্ণ।

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ও অসুস্থ হওয়ার কথা জানা গেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে লোকজন কিছুটা সতর্ক। কেউ অসুস্থ হলে তারা পার্শ্ববর্তী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। কারো করোনা উপসর্গ দেখা দিলে সেখানে পরীক্ষা করানো হয়।

জেনেভা ক্যাম্পে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এবং অসুস্থ হওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে অনেক কাবাবের দোকান আছে। গাড়ি মেরামতের দোকান আছে। সম্ভবত আসা লোকজন থেকে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

In order to improve law and order, the government last night gave the power of magistracy to commissioned army officers for 60 days.

2h ago