সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা এখনও ‘হচ্ছে-হবে’

প্রতীকি ছবি। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে একটি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দেশের ৩৯টি বড় সরকারি হাসপাতালের বেশিরভাগে এখনও নেই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। যার মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাসের চিকিত্সায় নিবেদিত হাসপাতালও।

গণপূর্ত বিভাগের তৈরি এই হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন থাকলেও বেশিরভাগেরই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই।

এর পরিবর্তে তারা অক্সিজেন সিলিন্ডারের উপর নির্ভর করে। ফলে, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন করোনা রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের অর্থ একটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট জায়গায় অক্সিজেনের মজুদ থাকবে, যেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে রোগীদের শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশে সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের মতে জুন মাসের শেষের দিকে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগীদের পর্যাপ্ত অক্সিজেন সহায়তা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ অনেক জীবন বাঁচাতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৩৯টি হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল শাখা) সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই চিঠিটি ন্যাশনাল ইলেকট্রো- মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় স্থানে গ্যাস লাইন সম্প্রসারণে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লিখিত সব হাসপাতাল কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা ইতোমধ্যে পরীক্ষা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর প্রধান প্রযুক্তি ব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান বলেন, সকল প্রক্রিয়া শেষ করতে ‘কিছুটা সময়’ লাগবে।

তিনি দাবি করেন, ৩৯টি হাসপাতালের মধ্যে অনেকগুলোরই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে এবং সারাদেশে মোট ২১টি সরকারি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা রয়েছে।

আমিনুর রহমান গতকাল বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা এখন যেসব হাসপাতালে এই ব্যবস্থা রয়েছে এবং যেগুলোতে করা সম্ভব সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করছি। আমরা তালিকাটি আগামীকাল (আজ) মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’

গতকাল তারা তিনটি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানায়, অনুমোদন পাওয়ার পর কাজটি শেষ করতে ১৫ দিন সময় লাগবে।

তিনি জানান, হাসপাতাল তিনটি হলো- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

চিকিত্সক এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে অনেক ক্ষেত্রে আন্তঃসংযোগযুক্ত বড় সিলিন্ডার ব্যবহার করে। সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং মজুদ পর্যাপ্ত আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য চিকিত্সক বা নার্সদের বারবার পর্যবেক্ষণ করতে হয়।

কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন করার সরকারি ব্যবস্থা এমন সময় নেওয়া হচ্ছে যখন অভিযোগ উঠছে যে বেশ কয়েকজন রোগী, বিশেষ করে কোভিড-১৯ হাসপাতালে অপর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের কারণে, মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠিতেও স্বীকার করেছে যে ৩৯টি হাসপাতালের বেশিরভাগে তরল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক না থাকায় কোভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

চিঠিতে উল্লিখিত ৩৯টি হাসপাতালের মধ্যে ১৮টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং মিটফোর্ড হাসপাতাল। এই তালিকায় থাকা হাসপাতালগুলোর মধ্যে ১৬টি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং পাঁচটি বিশেষায়িত হাসপাতাল।

ঢাকার সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (এনআইসিভিডি) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসেসেন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আমিনুর রহমান।

তবে ঢামেকের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাদের নতুন ভবন, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার এবং পোস্ট অপারেটিভ রুমগুলোতেই শুধু কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে Public Hospitals: Central oxygen supply elusive

Comments

The Daily Star  | English

CA approves draft Anti-Terrorism Ordinance

Draft includes provision to ban an entity's activities, restrict terrorism-related content online

8m ago