দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, পপ সম্রাট আজম খানের প্রয়াণের ৯ বছর

Azam Khan
সংগৃহীত

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে আজম খানকে খুঁজে পাওয়া যায় এইভাবে- ‘২০শে আগস্ট, ১৯৭১ একটা তাঁবুতে আলো জ্বলছে, আর সেখান থেকে ভেসে আসছে গানের সুর: হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ- বুঝলাম আজম খান গাইছে। আজম খানের সুন্দর গলা। আবার অন্যদিকে ভীষণ সাহসী গেরিলা, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা।’

সেই ‘পপসম্রাট’ আজম খানের আজ চলে যাওয়ার নয় বছর। ২০১১ সালের ৫ জুন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান তিনি। ২০১০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

আজম খান ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০নং ভবনে জন্ম নেন। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। তারা চার ভাই ও এক বোন।

১৯৫৫ সালে আজম খান প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সাল থেকে কমলাপুরে থাকতেন পরিবারসহ। সেখানেই আমৃত্যু ছিলেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।

১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। দুই নম্বর সেক্টরের একটি সেকশনের ইনচার্জ ছিলেন। সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা এবং আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন তিনি।

আজম খান যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশান তিতাস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধের পর তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বন্ধু নিলু আর মনসুরকে নিয়ে ব্যান্ডের অনুষ্ঠান শুরু করেন। ওই বছরই তার ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচারের পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ঐ বস্তিতে’ শিরোনামের গানটি গেয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন তিনি।

আজম খানের গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘আমি যারে চাইরে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।

১৯৮২ সালে ‌‘এক যুগ’ নামে তার প্রথম ক্যাসেট বের হয়। তার গাওয়া গানের প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়।

গানের পাশাপাশি ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামন সিরিজের নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়াও, ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।

২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন আজম খান। সর্বশেষ ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন এই পপ সম্রাট।

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

Strategies we can employ in tariff talks with the US

We must realise that the US has started the tariff war with a political agenda.

5h ago