আম্পানে উপড়ে গেছে ‘শুভসন্ধ্যা সৈকতের’ ২৫ হাজার ঝাউ গাছ
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বরগুনার তালতলী উপজেলার ‘শুভ সন্ধ্যা’ সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১০ হেক্টর সৈকতের প্রায় ২৫ হাজার ঝাউগাছ ঝড়ে উপড়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য নির্মিত রাস্তা। জোয়ারের তীব্র স্রোতে সৈকতের কোল ঘেঁষা ঝাউ গাছের নিচ থেকে বালু সরে যাওয়ায় এখন পুরো ঝাউবাগানটি ভাঙনের হুমকিতে আছে।
অব্যাহত ভাঙনের ফলে গত ২ বছরে এ সৈকতের ৫০ হেক্টর বনের প্রায় ৫০ হাজার গাছ বিলীন হয়ে গেছে।
তালতলী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উপজেলার নলবুনিয়া এলাকায় বঙ্গোপসাগরের বেলাভূমিতে ‘শুভসন্ধ্যা’ সৈকতে বন বিভাগ ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছর থেকে শুরু করে বনায়ন। পর্যায়ক্রমে এখানে প্রতিবছর বনায়ন করা হয় এবং চলতি বছর পর্যন্ত প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে তৈরি করা হয় নয়নাভিরাম ঝাউবাগান। এ ঝাউবাগানের একদিকে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি, পাশেই তিনটি বড় নদী পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনা। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে সাবেক ইউএনও বদরুদ্দোজা শুভর নাম অনুসারে সৈকতটির নামকরণকরা হয় ‘শুভ সন্ধ্যা’। এরপর থেকেই এখানে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পর্যটক সংখ্যা।
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, ঘুর্ণিঝড় আম্পানের করনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সৈকতটির। তাছাড়া জোয়ারের পানির কারণে ঝাউ গাছের নিচ থেকে বালু সরে যাওয়ায় সৈকত ঘেঁষা বনাঞ্চলের নানা প্রজাতির হাজার হাজার গাছ উপড়ে পড়ে আছে। এভাবে ভূমিক্ষয় অব্যাহত থাকলে এ পর্যটন এলাকা দ্রুত বিলুপ্ত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে এ সৈকতটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। কয়েক হাজার গাছ উপরে পড়েছে এবং সৈকতে যাবার রাস্তাটির সম্মুখভাগের প্রায় ১০০ ফুট রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে।’
ভাঙ্গনে গোটা বাগান শ্রীহীন হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে একদিকে যেমন পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে অপর দিকে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
তালতলী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, ‘অবিলম্বে এ সৈকতটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’
প্রতিবছর এ সৈকতে উপমহাদেশের সব চেয়ে বড় জোছনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তাছাড়া প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে হাজারও পর্যটক আসতো ।
তালতলী রেঞ্জের বন কর্মকর্তা সমির রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, ‘প্রতি বছরই বর্ষা ও জোয়ারের স্রোতে ভাঙছে ঝাউ বাগান। তার ওপর এবারের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবলে এ বনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হেক্টরবাগানের কমপক্ষে ২৫ হাজার ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে।’
বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও ভাঙন রোধে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা একটা ব্যবস্থা নিবেন।
Comments