করোনা মোকাবিলায় করণীয়
বর্তমানে সারাবিশ্বের জন্য আতঙ্কের বিষয় করোনাভাইরান। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে মরণঘাতী এই ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। থেমে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা।
ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলো এই ভাইরাস মোকাবিলায় কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। কিন্তু, ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন সফলভাবে করোনা মোকেবিলা করে সারাবিশ্বের জন্য হয়ে উঠেছে অনুকরণীয় উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আক্রান্ত দেশকে চীনের উদ্যোগ অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে।
চীনের এই সফলতার পেছনে রয়েছে জরুরি অবস্থা জারি ও উৎসস্থলগুলো পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া, পর্যাপ্ত টেস্ট করানো এবং জরুরি হাসপাতাল তৈরি ও নিরবিছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অনন্য নজির রেখেছে চীন।
আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদান এবং দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই করোনা মোকাবিলা করতে হবে। করোনা মোকেবিলায় মোকাবেলায় আগামি দিনে করণীয় বিষয়গুলো নিন্মরূপ হকে পারে।
ক. পর্যাপ্ত করোনা টেস্ট
করোনা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো রোগ নির্ণয় করা এবং আক্রান্তদের আলাদা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। আমাদের দেশে এখনও প্রয়োজনের তুলনায় টেস্টের সংখ্যা অনেক কম। টেস্টের সংখ্যা বড়াতে আমরা চীন থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে টেস্ট কিট আমদানি ও প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি।
খ. চীন-বাংলাদেশ যৌথ করোনা হাসপাতাল তৈরি
চীনের যে কোনো কিছুই দ্রুত করতে পারে। ইতোমধ্যে তারা প্রমাণও রেখেছে তারা। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহানে নির্মিত হাসপাতালে আদলে চীন এবং বাংলাদেশর যৌথ উদ্যোগে জরুরি হাসপাতাল তৈরি করতে পারে।
গ. চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের সুবিধা গ্রহণ করা
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, বেইজিং ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিনেভা অতি দ্রুত কার্যকারী ভ্যাকসিন তৈরি ও সরবারাহ করবে। আমাদের উচিত হবে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করে সবার আগে এই ভ্যাকসিন সুবিধা গ্রহণ করা।
ঘ. চীনের সহযোগিতা গ্রহণ
ইতালি, ফিলিপাইন, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিশেষজ্ঞ দল ও সরঞ্জামসহ ঔষধ সরবরাহ করেছে চীন। বাংলাদেশের মননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করোনা রোধে বাংলাদেশকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেডিক্যাল সামগ্রী ও বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে চীন। এখন আমাদের করণীয় হবে চীনের থেকে এ সকল সুবিধা গ্রহণ করে করোনা রোধে এগিয়ে যাওয়া।
ঙ. যথাযথ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা
আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তুলনামূলক কম। সব স্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর আইন প্রণয়ন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোন অবস্থান দরকার।
চ. হাসপাতাল গুলোতে আই সি ইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা বাড়ানো
করোনা মহামারির মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ আইসিইউ বেড বাড়াতে হবে। যেসব রোগীর সংক্রমণ খুবই মারাত্মক তাদের জীবনরক্ষায় ভেন্টিলেটর খুবই কার্যকর যন্ত্র। আমাদের দেশে কয়েকটি কোম্পানি ভেন্টিলেটর উৎপাদন শুরু করেছে। তারপরেও জরুরিভিত্তিতে চীন থেকে দুই-আড়াই হাজার মানসম্মত ভেন্টিলেটর আমদানি করে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে সরবরাহ করতে হবে।
ছ. ওষুধ শিল্পে কর মওকুফ
বাংলাদেশ সরকারকে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে করোনার প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন তৈরিতে সব ধরনের কর মওকুফের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে আহবান করছি। সেইসঙ্গে উৎপাদন পরবর্তী সময়ে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। যাতে শুধুমাত্র যে সকল হাসপাতাল করোনা সেবা প্রদানে নিয়োজিত শুধু তাদের এসব প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়।
বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি করোনা মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তার কন্যাও নিজেকে মানব কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন।
এম. এ. হাসেম, সাবেক সংসদ সদস্য
Comments