করোনা আপডেট: কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফরিদপুর, ফেনী

কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক সিনিয়র সাংবাদিক ও করেনা উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৮ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে আরও ৩৭ জন লক্ষ্মীপুরে পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফরিদপুরে সাত পুলিশ সদস্যসহ নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন। এ ছাড়াও, ফেনীতে নতুন করে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং ফেনীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া তিন জনের রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে।
Coronavirus-1.jpg
করোনাভাইরাস। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক সিনিয়র সাংবাদিক ও করেনা উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৮ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে আরও ৩৭ জন লক্ষ্মীপুরে পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফরিদপুরে সাত পুলিশ সদস্যসহ নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন। এ ছাড়াও, ফেনীতে নতুন করে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং ফেনীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া তিন জনের রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে।

কক্সবাজারে করোনায় ১ সাংবাদিক ও উপসর্গ নিয়ে ২ জনের মৃত্যু

কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন কক্সবাজারের এক সিনিয়র সাংবাদিক।

ওই সাংবাদিকের ভাই বলেন, ‘গত মে মাসের শেষের দিকে তিনি জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হন। পরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন। গত ৩১ মে তিনি ও তার সন্তানের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ১ জুন তাকে উখিয়া কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ৩ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। আজ সকালে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে বেলা দুইটার দিকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। বেলা আড়াইটায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি মারা যান।’

এ ছাড়াও, চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে আজ ভোর চার টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ফকিরপাড়ার এক ব্যক্তি।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৭ মে তার সর্দি ও কাশি শুরু হয়। কয়েকদিন পর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে গত ৩ জুন নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আজকের দিন পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।’

আজ সকাল আটটায় করোনা উপসর্গ নিয়ে উখিয়া উপজেলা রাজাপালং ইউনিয়নের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কুতুপালং লম্বাশিয়া এলাকায় স্থানীয় এক মুদি দোকানদারের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রোহিঙ্গা শিবিরে পণ্য সরাবরাহের কাজও করতেন।

তার স্বজনেরা জানান, এক সপ্তাহ আগে তার জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি স্থানীয় চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা নেন। কিন্তু তার শারীরিরক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। আজ সকালে তিনি মারা যান।

লক্ষ্মীপুরে আরও ৫ জনের করোনা শনাক্ত

আমাদের সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে আরও পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হলো ২৭২ জন। লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফ্ফার আজ দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদের মধ্যে কমলনগর উপজেলায় ৪ জন ও রায়পুর উপজেলায় ১ জন রয়েছেন।

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও, রায়পুর উপজেলায় আরও ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফ্ফার বলেন, ‘জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৭২ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২২ জন, রামগঞ্জে ৫৫, কমলনগরে ২৬, রামগতিতে ২২ ও রায়পুরে ৪৭ জন আছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৪ জন। হোম আইসোলেশনে আছেন ৬০ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৪২ জন এবং মারা গেছেন পাঁচ জন।

নোয়াখালীতে ডাক্তার, নার্সসহ এক দিনে আরও ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, জেলায় ডাক্তার, নার্সসহ আরও ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার রাতে আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ নোয়াখালী ও নোবিপ্রবি পরীক্ষাগার থেকে আসা নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য জানা যায়। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হলো ১ হাজার ১ জন। আজ রোববার দুপুরে নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মো. মোমিনুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২০ জন, বেগমগঞ্জে ১৬ জন ও কোম্পানীগঞ্জে ১ জন।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ফোকাল পার্সন ও মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নিলিমা ইয়াছমিন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলায় ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত ২ জন ইনটার্নি ডাক্তার ও একজন স্টাপ নার্স সহ ২১ জন রয়েছে। আক্রান্তদেরকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৩৬ জন।

বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাস জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এ উপজেলায় আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের অধিকাংশই চৌমুহনী পৌর শহরের বাসিন্দা। এ নিয়ে বেগমগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৫৫ জন। এছাড়াও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মো. মোমিনুর রহমান বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে করোনা রোগীর সংখ্যা ৩৭ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০১ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩৬ জন, বেগমগঞ্জে ৪৫৫ জন, কবিরহাটে ৭৫ জন, চাটখিলে ৭১ জন, সেনবাগে ৬৬ জন, সোনাইমুড়ীতে ৫৫ জন, সুবর্ণচরে ২৮ জন, কোম্পানীগঞ্জে ৯ জন ও হাতিয়ায় ৬ জন। আক্রান্তের হার ১৮.৬৫ শতাংশ। সুস্থ হয়েছেন ১৬৭ জন। সুস্থতার হার ১৬.৬৮ শতাংশ।’

ফরিদপুরে ৭ পুলিশ সদস্যসহ আরও ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত

ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, জেলায় সাতা পুলিশ সদস্যসহ নতুন করে আরও ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ফরিদপুর জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৭৯ জন। তবে নতুন করে শনাক্ত হওয়া এক ব্যাক্তি ইতিমধ্যে মারা গেছেন।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফরিদপুরে নতুন করে যে ৪৭ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলায় ২৯ জন, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলায় ৪ জন করে, সালথা উপজেলায় ৩ জন, ফরিদপুর সদর উপজেলায় ৪ জন, চরভদ্রাসন ও নগরকান্দা উপজেলায় ১জন করে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ৩২ জন পুরুষ।

এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত ভাঙ্গায় করোনা শনাক্ত এক জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তিনি ভাঙ্গা পৌরসভার ছিলাধরচর মহল্লার বাসিন্দা ছিলেন। গত শুক্রবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারি কমিউিনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা ছিলেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মোহসীন উদ্দিন ফকির বলেন, ‘ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর পর মুন্সী মো. মুশার শরীর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ নিয়ে ফরিদপুরে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে নয় জনের।’

ফেনীতে আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত, উপসর্গ নিয়ে মৃত ৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ

ফেনী সংবাদদাতা জানান, জেলায় নতুন করে এক পুলিশ, দুই জন স্বাস্থ্যকর্মী ও একই পরিবারের ৩ জনসহ আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৬৪ জনে। এরমধ্যে সাত জন মারা গেছেনন। সুস্থ হয়েছেন ৬৮ জন। সাত জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩ জন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি এবং অন্যরা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ফেনীর সিভিল সার্জন মো. সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত দুই মাসে জেলায় ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। গত সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৯৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, ফেনীতে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর জানা গেল তারা ৩ জনেরই করোনা পজেটিভ ছিল।

ফেনীর সিভিল সার্জন মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, আজ সকালে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ থেকে নমুনা পরীক্ষার পর দুজনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। গত ২ জুন দাগনভূঁঞার এক বৃদ্ধার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৬ জুন রাতে তিনি মারা যান। আজ তারও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।

এ তিন জন নিয়ে ফেনী জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট সা জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka stares down the barrel of water

Once widely abundant, the freshwater for Dhaka-dwellers continues to deplete at a dramatic rate and threatens to disappear far below the ground.

2h ago