করোনা আপডেট: নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, পঞ্চগড়, ফরিদপুর

নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ জন ও কুমিল্লায় নতুন করে ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তিন হাজার ৫৯৪ জন ও কুমিল্লায় এ এক হাজার ৪৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। মানিকগঞ্জেও উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত এপ্রিল ও মে মাসে জেলায় মোট ১৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হলেও, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৬ জনের। এ ছাড়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫০ বছর বয়সী এক নারী ও ফরিদপুরে ৩৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। দ্য ডেইলি স্টার স্থানীয় সংবাদদাতারা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ জন ও কুমিল্লায় নতুন করে ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তিন হাজার ৫৯৪ জন ও কুমিল্লায় এ এক হাজার ৪৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। মানিকগঞ্জেও উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত এপ্রিল ও মে মাসে জেলায় মোট ১৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হলেও, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৬ জনের। এ ছাড়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫০ বছর বয়সী এক নারী ও ফরিদপুরে ৩৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। দ্য ডেইলি স্টার স্থানীয় সংবাদদাতারা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জে আরও ৯৪ জনের করোনা শনাক্ত, ৪ জনের মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জে আরও ৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত তিন হাজার ৫৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এ ছাড়া, জেলায় আরও চার জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ৮৯ জন করোনায় মারা গেছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আজ সোমবার সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ‘নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ৩১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নতুন করে ৯৪ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলার চার জন পুরুষ মারা গেছেন।'

তিনি বলেন, ‘যে চার জন মারা গেছেন তারা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারা গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যায়নি। গত দুই তিন দিনের মৃত্যুর হিসাব এক সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি জানান, জেলায় সিটি করপোরেশন এলাকায় সব থেকে বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে ১৩২৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫৩ জন মারা গেছে ও সুস্থ হয়েছে ৫১৩ জন। সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৯৯৭ জনের মধ্যে মারা গেছে ১৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ২৯৩ জন। রূপগঞ্জে ৫৬০ জন আক্রান্তের মধ্যে দুই জন মারা গেছে ও ১০ জন সুস্থ হয়েছে। সোনারগাঁও উপজেলায় ২৮৬ জন আক্রান্তের মধ্যে ১২ জন মারা গেছে ও ২৮ জন সুস্থ হয়েছে। আড়াইহাজার উপজেলায় ৩১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে দুই জন ও সুস্থ হয়েছে ৪৭ জন। বন্দর উপজেলায় ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে দুই জন ও সুস্থ হয়েছে ১৯ জন।

জেলায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৮৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের মধ্যে তিন হাজার ৫৯৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।

কুমিল্লায় আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত

কুমিল্লায় আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নেয়াতুজ্জামান আজ সোমবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, নতুন শনাক্তদের মধ্যে চান্দিনায় রয়েছেন ছয় জন, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় তিন জন, দাউদকান্দিতে ১১ জন, তিতাসে তিন জন ও বুড়িচংয়ে তিন জন।

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত জেলা থেকে ১২ হাজার ৩৬৩টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং ১০ হাজার ৪৪৫টির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৫৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

সিভিল সার্জন জানান, আক্রান্ত হয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার ২৪৩ জন, দেবিদ্বার উপজেলার ১৯১ জন, মুরাদনগরের ১৬৩ জন, চান্দিনায় ১২৯ জন, লাকসামে ১০৩ জন, বুড়িচংয়ে ১০০ জন, চৌদ্দগ্রামে ৯৭ জন, নাঙ্গলকোটে ৭৩ জন, আদর্শ সদরে ৭২ জন, দাউদকান্দিতে ৫২ জন, তিতাসে ৩৪ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩৩ জন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ৩২ জন, বরুড়ায় ২৯ জন, মনোহরগঞ্জ ২৭ জন, হোমনায় ২৬ জন, মেঘনায় ২১ জন ও লালমাইয়ে ১২ জন। এ ছাড়া, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।

তিনি আরও জানান, আজ সোমবার চান্দিনা ও লালমাই উপজেলায় দুই জন করোনায় করোনায় মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ৪৩ জন করোনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া, জেলায় এ পর্যন্ত ২৪০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন বলে জানান সিভিল সার্জন।

মানিকগঞ্জে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, গত সপ্তাহে বেড়েছে ১৯৬ জন

মানিকগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত এপ্রিল ও মে মাসে জেলায় মোট ১৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হলেও, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৬ জনের।

পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। ১৯ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলাকে লক ডাউন করার পর আক্রান্তের হার কিছুটা কমে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে একজন ও ২য় সপ্তাহে নয় জনের করোনা শনাক্ত হয়।

কিন্তু, লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। মে মাসের ৩য় সপ্তাহে ৩৬ জন, শেষ সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয় ৮১ জনের। অর্থাৎ, মে মাসে আক্রান্ত হয় ১২৮ জন। ফলে, এপ্রিল ও মে মাসে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হয় ১৪৯ জন।

এরপর, ৩১ মে থেকে লকডাউন খুলে দেওয়ার পর আক্রান্তের হার বাড়ছে আশংকাজনক হারে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৬ জন।যার গড় প্রতিদিন ২৮ জন।

এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন করোনা প্রতিরোধ জেলা কমিটির প্রধান এবং জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানিকগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিটির সদস্যদের মতামতের প্রেক্ষিতে আগামীতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'সরকারি বিধি ভঙ্গ করে মানুষ বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। অনেকেই মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন না এবং সামাজিক দূরত্বও মেনে চলছেন না। নানাভাবে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করা হলেও, তাতে কোন লাভ হচ্ছে না।'

করোনা প্রাদুর্ভাব রোধকল্পে জনসাধারণকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে অভিযান চালু আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহার না করার কারণে জরিমানা করা হচ্ছে। যাদের মাস্ক নাই তাদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় অনুরূপ অভিযান চলছে। কিন্তু মানুষজন আইন মানছেন না।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলা থেকে তিন হাজার ৪৮৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় এবং তিন হাজার ৯০টির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৪৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ। এ পর্যন্ত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০০ জন, সাটুরিয়া উপজেলায় ৬৯ জন, সিংগাইরে ৬৫ জন, ঘিওরে ৪৯ জন, হরিরামপুরে ২৮ জন, শিবালয়ে ২৫ জন ও দৌলতপুরে নয় জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ জন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ২১৮ জন নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। সুস্থ হয়েছেন ৯৯ জন এবং মারা গেছেন তিন জন।

তেঁতুলিয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে নারীর মৃত্যু

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৫০ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। আজ সোমবার দুপুরে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে তিনি মারা যান। মৃত নারী উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন।

তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল কাশেম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ দুপুরে জরুরী বিভাগে আসা ওই নারীর জ্বর, কাশি ছিল এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এ সময় চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে জরুরি বিভাগেই তিনি মারা যান।'

করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত নারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মৃত নারীর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে ।

এ ছাড়া, তার বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সে সব বাড়িতে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ওই নারী তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য

কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। সে সময়, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে, আজ সকাল থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকলে, পরিবারের সদস্যরা দুপুরের দিকে তাকে আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলা থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত মোট এক হাজার ৭৮৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা আইইডিসিআর, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে এক হাজার ৩১৪ জনের পাওয়া নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে, যার মধ্যে জেলায় এখন পর্যন্ত ৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।

ফরিদপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১ জনের মৃত্যু

ফরিদপুরে সর্দি, কাশি গলা ব্যথাসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আজ সোমবার ভোরে ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মৃত ব্যক্তির বয়স ৩৪ বছর। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত রোববার দুপুরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার ভোরে তিনি মারা যান।

ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে মারা গেছেন কিনা, তা পরীক্ষা করতে আজ সকালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago