ব্র্যাক ব্যাংকের কোভিড পর্যালোচনা

দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে

সাধারণ ছুটির কারণে ৫১ শতাংশ পরিবারে কোনো আয় নেই

কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে গত মার্চের শেষের দিকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে সারা দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপে জানা গেছে।

জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৫১ শতাংশের কোনো আয় নেই এবং কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়াও, ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, মহামারির কারণে তারা অর্থনৈতিকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

সারা দেশে গত ৯ মে থেকে ১৩ পর্যন্ত পরিচালিত জরিপে নানা পেশাজীবীর ২ হাজার ৩১৭ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে এবং ৩২ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করেন।

‘কোভিড-১৯ সচেতনতা ও অর্থনৈতিক প্রভাব’ শিরোনামে পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য ওঠে এসেছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মঙ্গলবার জানানো হয়।

তারা জানান, সাধারণ ছুটির আগে জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মাসিক গড় আয় ছিল ২৪ হাজার ৫৬৫ টাকা। গত মে মাসে তা কমে ৭ হাজার ৯৬ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ আয় কমে ৭৬ শতাংশ।

জরিপ মতে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলের মানুষদের আয় কমেছে বেশি। গ্রামাঞ্চলের মানুষদের আয় কমেছে ৭৫ শতাংশ এবং শহাঞ্চলের মানুষদের আয় করেছে ৭৯ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেওয়া যেসব জেলার মানুষদের সবচেয়ে বেশি আয় কমেছে সেসব জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে পিরোজপুর (৯৬ শতাংশ), কক্সবাজার (৯৫ শতাংশ), রাঙ্গামাটি (৯৫ শতাংশ), গাইবান্ধা (৯৪ শতাংশ) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া (৯৩ শতাংশ)।

জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেসব পরিবারে নারী মূল উপার্জনকারী সেসব পরিবারে পূরুষ মূল উপার্জনকারী পরিবারের তুলনায় আয় কমেছে বেশি। নারী মূল উপার্জনকারী পরিবারে আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং পূরুষ মূল উপার্জনকারী পরিবারে আয় কমেছে ৭৫ শতাংশ।

সাধারণ ছুটির কারণে নারী মূল উপার্জনকারী পরিবারের অন্তত ৫৭ শতাংশের আয় শূন্য কোঠায় এবং পূরুষ মূল উপার্জনকারী পরিবারের ৪৯ শতাংশ আয় শূন্য।

আয় কমে যাওয়ায় বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়েছে। গড়ে ১৬ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে তাদের কাছে যে খাবার আছে তা দিয়ে এক থেকে তিন দিন কোনোভাবে চলা যাবে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশের বেশি মানুষ জানিয়েছেন, তারা করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। বাকিরা বলেছেন, মাঝেমধ্যে নেন।

এছাড়াও, জরিপে ৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা মনে করেন তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এমন ভাবনার কারণে অনেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেন না বলেও জরিপে ওঠে এসেছে।

জরিপে আরও জানা যায়, শহরাঞ্চলের (৬২ শতাংশ) তুলনায় গ্রামাঞ্চলে (৭২ শতাংশ) সহায়তা বেশি প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সামেরান আবেদ বলেন, ‘ব্র্যাক ৩ লাখ ৬০ হাজার পরিবারকে জরুরি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। ক্ষুদ্র-অর্থনৈতিক কর্মসূচির আওতায় ৫ লাখ সদস্যকে তাদের সঞ্চয় ফিরেয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে তারা তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে পারেন।’

ঝুঁকিতে থাকা মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র-অর্থনেতিক সংস্থাগুলোর (এমএফআই) ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের মাধ্যমে এটা করা খুবই চ্যালেঞ্জিং কেননা, ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতার অভাব রয়েছে।’

‘নতুন মেকানিজম দরকার’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং এই কাজটি করছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ সহজেই আর্থিক কার্যত্রম চালাতে পারছেন।’

নিম্নআয়ের মানুষদের কাছে তাদের সঞ্চয় ফিরিয়ে দেওয়ায় ব্র্যাকের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এডিজি-বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সব এমএফআই ও এনজিওর ব্র্যাকের এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত।’

ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, ‘পরবর্তী উদ্যোগ হিসেবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যথাযথ স্বাস্থ্যসতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অনেকের মধ্যে অংশ নিয়েছিলেন প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক মিজানুর রহমান খান এবং ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago