নোয়াখালীতে আবারও ‘স্বেচ্ছাসেবক’দের বিরুদ্ধে অ্যাম্বুলেন্সে হামলা-ভাংচুরের অভিযোগ

নোয়াখালীর সদর-বেগমগঞ্জ উপজেলায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিন, বুধবার সকালেও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলার অভিযোগ উঠেছে লকডাউন বাস্তবায়নকারী ‘স্বেচ্ছাসেবক’দের বিরুদ্ধে। এসময় চালক, হেলপার ও রোগীর সাথে থাকা লোকজনকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
ঘটনার প্রতিবাদে নোয়াখালী উপকূলীয় অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমবায় সমিতির লোকজন বুধবার দুপুরে নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।
এর আগে লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল লকডাউন বাস্তবায়নের নামে কথিত স্বেচ্ছাসেবকরা রাস্তায় নৈরাজ্য করে গাড়ি ভাংচুর ও চাঁদাবাজি করে। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ভাংচুরের ঘটনার বিচারের আশ্বাস দিলে অ্যম্বুলেন্স মালিক শ্রমিকরা মামলা না করে চলে যান।
নোয়াখালী জেলার সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলাকে করোনা রেড জোন ঘোষণা করে গত ৯ জুন সকাল ৬ টা থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস।
লকডাউন বাস্তবায়ন করতে জেলা শহর মাইজদী বাজার এলাকা থেকে সোনাপুর পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে একদল যুবক অবস্থান নেয়।
জেলা শহর মাইজদী হাউজিং এর ডায়াবেটিস কেয়ার সেন্টার থেকে বুধবার সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো-ছ ৭১-২৬৩৯) একজন রোগী নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজেন্ডারে যাচ্ছিল।
অ্যাম্বুলেন্সের মালিক আব্দুর রাজ্জাক শামিম জানান, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি সোনাপুরের কালিতারা কাঞ্চন মেম্বারের পুল এলাকায় পৌঁছালে লকডাউন বাস্তবায়নকারী একদল স্বেচ্ছাসেবক গাড়ির গতি রোধ করে চালক সুমন, তার সহকারী ও রোগীর লোকজনদের মারধর করে এবং গাড়ি ভাংচুর করে। চালক সুমনের দাবি হামলাকারীরা ছাত্রলীগ কর্মী।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আসাদুজ্জামান আরমান, এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করতে পারে না। কারণ ছাত্রলীগ ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বিশ্বাস করে না। লকডাউনের সময় সুবিধাবাদী কেউ যদি গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে থাকে তার দায় দায়িত্ব ছাত্রলীগ নেবে না।’
আব্দুর রাজ্জাক শামিম আরও জানান, হামলা ও ভাংচুরের খবর নোয়াখালী উপকূলীয় অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমবায় সমিতির লোকজনের কাছে পৌঁছালে মালিক ও শ্রমিকরা বেলা ১২ টার দিকে সুধারাম মডেল থানায় মামলা করতে যান। এসময় সুধারাম মডেল থানার ওসি নবির হোসেন এ ব্যাপারে মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
অ্যাম্বুলেন্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলা উদ্দিন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীকে অবহিত করেন। তিনি হামলাকারীদের শাস্তি হবে বলে আশ্বাস দিলে তারা চলে যান।
অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলা উদ্দিন বলেন, তার সমিতিতে ৮০ টি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। করোনার দুর্যোগকালে তিনি জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য প্রশাসনকে ৬০টি অ্যাম্বুলেন্স বিনামূল্যে সার্ভিস দেওয়ার জন্য দিয়েছেন। এর পরেও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হামলার ঘটনা দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, ভাংচুরের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে সুধারাম মডেল থানার ওসি মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মালিক-শ্রমিকরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে তিনি সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন।
দুপুরে নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী এক ভিডিও বার্তায় লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রাস্তায় ভূমিকা রাখায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি তাদেরকে মাঠ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও কেউ মাঠে থাকলেও হাতে লাঠি না রাখার এবং অ্যাম্বুলেন্স, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী গাড়ি, সাংবাদিকদের বহনকারী যানবাহন না আটকানোর অনুরোধ জানান।
সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. নবির হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদের অভিযোগ দিতে বলেছি কিন্তু কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এছাড়াও লকডাউনে পুলিশ রাস্তায় রয়েছে। সড়কে কোন ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মঙ্গল ও বুধবারে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় বুধবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কেউ লিখিত কোন অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়ার জন্য ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তা পুলিশ মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
Comments