৪৭ জেলায় নেই আইসিইউ, জেলা হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন ব্যবস্থা

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরের বাইরে বেড়ে চলেছে গুরুতর রোগীর সংখ্যা। আর জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরের বাইরে বেড়ে চলেছে গুরুতর রোগীর সংখ্যা। আর জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধা নেই। এ ছাড়াও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় হাসপাতালগুলোর ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার এক নির্মম চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আইসিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা উভয়ই প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ৯০ শতাংশ হাসপাতালে আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস (এবিজি) এনালাইজার নেই। যা রোগীর রক্তের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রয়োজন হয়। ৮৯ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেনের কনসেনট্রেটর নেই, যা অক্সিজেনের মসৃণ ও উচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত করে।

এ ছাড়াও, ৯৬ শতাংশ হাসপাতালের কোনো যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর নেই, যা রোগী শ্বাস নিতে না পারলে শ্বাসযন্ত্রের কাজ করে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৯৫ শতাংশ জেলা হাসপাতালে বিপিএপি ও সিপিএপি নেই এবং ৩০ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন মাস্ক নেই।

যখন রোগী একা নিঃশ্বাস নিতে বা শ্বাস ছাড়তে পারেন না তখন এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে মাস্ক দিয়ে রোগীর ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।

আইসিইউ সুবিধার অনুপস্থিতি এবং অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবের অর্থ এই যে, জেলার গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার জন্য বিভাগীয় সদর দপ্তরে যেতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে কোনো এবিজি মেশিন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, কান্নুলা এবং ফেস মাস্ক নেই। এর সবই রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে জড়িত।

সেক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলার কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা নিতে বিভাগীয় সদর দপ্তর খুলনায় যেতে হবে।

হবিগঞ্জের করোনা রোগীদেরও চিকিত্সা নিতে যেতে হবে সিলেটে। বিভাগীয় সদর দপ্তরেও পুরো বিভাগের করোনা রোগীদের জন্য মাত্র ১৬টি আইসিইউ শয্যা আছে।

একইভাবে কক্সবাজার এবং বান্দরবানের রোগীদের যেতে হবে চট্টগ্রামে। যেখানে করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য ২৪টি আইসিইউ বরাদ্দ রয়েছে। বিভাগে আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে কুমিল্লাতে।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন একেএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা শুরু করেছি এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। এরপর আমরা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনব।’

হবিগঞ্জ, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সিভিল সার্জনদের কাছ থেকেও একই রকমের উত্তর পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভাইরাসের দ্রুত বৃদ্ধি সরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান ব্যবস্থার বা অভাবের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরছে।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান বলেন, ‘আমরা জেলা হাসপাতালের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার উদ্যোগ নিয়েছি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা কিছু সমস্যা খুঁজে পেয়েছি এবং সেগুলো পূরণ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করছি।’

প্রখ্যাত চিকিৎসক ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘এটিই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মারাত্মক চিত্রায়ন। আমরা স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির কথা শুনি, কিন্তু এই চিত্র এখন উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মহামারি শুরু হওয়ার পরে, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সঙ্কট এড়াতে প্রতিটি হাসপাতালে কমপক্ষে পাঁচটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রাখার পরামর্শ দিয়েছিলাম। মনে হচ্ছে আমাদের পরামর্শ বৃথা গেছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য মোট ৩২৯টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮টি ঢাকা শহরে এবং বাকিগুলো ছয়টি বিভাগীয় সদর দপ্তরে।

এ ছাড়াও, করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য দেশে নয় হাজার ৬৩৪টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago