‘মোবাইল সেবায় অতিরিক্ত ট্যাক্স ডিজিটালাইজেশনের অন্তরায়’

mobile
স্টার অনলাইন রিপোর্ট

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছেন, বাজেট ঘোষণার পরপরই কার্যকর করে দেওয়া মোবাইল ফোনের সব সেবার ওপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ট্যাক্স ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের প্রস্তাব করা বাজেটে মোবাইল ফোন সেবার ওপর বিদ্যমান ট্যাক্সের ওপর আরও সম্পূরক শূল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। যেটি গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসআরও ইস্যু করে রাত থেকেই কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

এর আগে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্যে মোবাইল ফোনের সব সেবার ওপর সম্পূরক শূল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা ছিল।

নির্দেশ অনুসারে মধ্যরাত ১২টা থেকে সেটি কার্যকর হয়েছে এবং এখন গ্রাহকরা বাড়তি ট্যাক্স গুনছেন।

ফলে এখন গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সব মিলে ট্যাক্স দিচ্ছেন ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। যেটিকে একশ টাকার রিচার্জ হিসেবের মধ্যে আনলে গ্রাহক সবমিলে ৭৫ দশমিক শূন্য ৫ টাকার সেবা পেতে পারবেন।

শুধু এই এক বছর নয় গত কয়েক বছর ধরেই নানাভাবে মোবাইল সেবার ওপর ট্যাক্স বাড়ছে। সেটি এসে পড়ছে গ্রাহকের ওপর।

বিষয়টি সম্পর্কে মোবাইল ফোন অফারেটরদের সংগঠন এমটব বলছে, নিয়মিতভাবে করের বোঝা চাপিয়ে সরকার মোবাইল খাতকে ক্রমেই দূর্বল করে তুলছে। এটি গ্রাহকদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

‘দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিকম খাতের অবদান যত উল্লেখযোগ্যই হোক না কেন, সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের উপর আরও বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরও দূর্বল করে তুলছে। ফলে দেশের জিডিপিতে মোবাইলের বর্তমান অবদান ৭ শতাংশ থেকে যে দুই অংকের ঘরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল তা আর অর্জিত নাও হতে পারে,’ বলেন এমটব মহাসচিব এস এম ফরহাদ।

তার মতে, ‘দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষদের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে— ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’

‘এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে যা করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে আরও বাড়বে। এতে মোবাইল শিল্প খাত আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হবে,’ যোগ করেন তিনি।

বাংলালিংকের সিইও এরিক অস বলেন, ‘গ্রাহকরা ইতোমধ্যেই উচ্চ করের বোঝা বহন করে টেলিকম সেবা গ্রহণ করছেন। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের প্রভাবিত করবে এবং এর ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়বে।’

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর করোনা মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে তিনি ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।

প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন, গ্রামীণফোনের হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হাসেন সাদাত। তিনি বলেন, ‘সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় কভিড-১৯ ও পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় মোবাইল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে।’

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘উচ্চ করভারে জর্জরিত মোবাইল সেবার ওপর নতুন করে ৫ শতাংশ এসডি বাড়ানো গ্রাহকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে।’

তিনি মনে করেন, ‘করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

ফরহাদ, এরিক এবং সাহেদ তিনজনেই বলেছেন, টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর আগের বছর আরোপিত দুই শতাংশ ন্যূনতম আয়কর প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাহার না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিষয়টি পুর্নবিবেচনার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

‘অপারেটরদের পক্ষ থেকে মোবাইল খাতের অলাভজনক কোম্পানির জন্য বর্তমান দুই শতাংশ ন্যূনতম কর বিলোপ ও করপোরেট ট্যাক্স কমানোর জন্য পূর্বাপর অনুরোধ করলেও তা বিবেচনা করা হয়নি, যা চরম হতাশাজনক,’ বলেন ফরহাদ।

এদিকে, বেসিসের একজন পরিচালক রাশাদ কবীর বলেন, ‘ডিজিটাল সেবার ওপর বাড়তি ট্যাক্স অবশ্যই এই খাতের গতিধারার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

‘আমরা প্রত্যাশা করি সরকার যেন এটি তুলে নেয়। কারণ, করোনার কারণে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি ডিজিটাল সেবার ওপর নির্ভর করছে। এই মানুষদের খরচ অনেক বেড়ে যাবে,’ বলেন রাশাদ কবীর।

Comments

The Daily Star  | English

Gas cylinder-laden truck explodes on Brahmanbaria bypass

According to police, the truck overturned due to the poor condition of the road

8m ago