করোনাভাইরাসের পরও গতানুগতিক বাজেট: সিপিডি

CPD
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে তাকে গতানুগতিক আখ্যা দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

আজ শুক্রবার এক অনলাইন সংবাদ ব্রিফিংয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে এমনিতেই সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানাবিধ চাপে ছিল তা এ মহামারি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফলে এ মহামারির ক্ষয়ক্ষতি লাঘব ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যে ধরনের ইনোভেটিভ বাজেট দরকার ছিল সেটি হয়নি। উপরন্তু এবারের বাজেটে এ মহামারির প্রভাব অর্থনীতিতে কী হতে পারে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে আসছি বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক যে কোনো নীতি গ্রহণে প্রবৃদ্ধি কী হবে তা ভাবা উচিত হবে না।’

তার মতে, ‘বরং দেশের মানুষের জীবন রক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। অথচ এ বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীক মনোভাব থেকে বের হতে পারেনি সরকার।’

বাজেট বৃক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যখাত, কর্মসংস্থান ও কৃষিখাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

‘এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশই বাড়ানো হয়েছে অনুন্নয় খাতে। মাত্র ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে উন্নয়ন খাতে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এছাড়া, এখনও স্বাস্থ্যখাতের মোট বরাদ্দ দেশের জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। অথচ ৩০টিরও বেশি স্বল্পোন্নত দেশের স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় তাদের জিডিপির ১ শতাংশের চেয়ে বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশ্চর্যজনকভাবে করোনাভাইরাসও সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বাস্থ্যখাতকে বিবেচনা করাতে পারেনি। বরং সরকারের বাজেট দেখে মনে হচ্ছে যে এ মহামারি হঠাৎ করে যেমন এসেছে তেমন খুব শিগগির এটি চলেও যাবে। পাশাপাশি অর্থনীতিও এ বছরই ঘুরে দাঁড়াবে।’

এবারের বাজেটে অনেক পরিকল্পনাই করা হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করেন তিনি।

উদাহরণ দিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ১২৫ শতাংশ বাড়বে বলে ধরা হয়েছে। অথচ, একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন যোগ্য নয়।’

‘রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। যেখানে ইতোমধ্যে পোশাক ও পোশাক বর্হির্ভূত সব খাতের রপ্তানি আয়েই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ঠিক একইভাবে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ১৫ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সেখানে বিদেশে শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করা হয়নি,’ মন্তব্য ড. ফাহমিদার।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশে সমানে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চাপের মধ্যে রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে মানুষ ভোগ ও ব্যয় কমাচ্ছে।’

‘এগুলো বিবেচনায় নিয়ে এই রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়,’ তিনি যোগ করেন।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুর ইসলাম খান বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে যে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে সেটিও বর্তমানের পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভব নয়। অথচ উচ্চধনীদের আয়কর কমানোর মাধ্যমে সরকার একদিকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

‘কালো টাকা সাদা করার যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এটি কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে ভালো করদাতারা অনুৎসাহিত হবেন।’

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque's supporters padlock Nagar Bhaban

Protesters began gathering around 9:00am, blocking the main gate and occupying nearby roads

15m ago