দুই আইডির বিপরীতে ৭২টি নাম
সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ২২টি চা-বাগানের দুই হাজার ১১৩টি চা-শ্রমিকের পরিবারের প্রত্যেকটিকে পাঁচ হাজার টাকার করে চেক দেওয়া হয়। মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিকদের পরিবারের মাঝে এই চেক বিতরণ করেছেন।
চেক বিতরণের পর শ্রমিকদের তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, শমশেরনগর ও কানিহাটি চা-বাগানে দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে ৭২ জন শ্রমিকের নাম রয়েছে। তা ছাড়া, চা-বাগানের শ্রমিকদের তালিকায় বস্তির মানুষের নামও রয়েছে।
গত ৬ জুন শমশেরনগর, কানিহাটি, দেওছড়া, বাঘিছড়া ও ডবলছড়া চা-বাগানের ৬০১ জন শ্রমিকের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। ৬০১ জন শ্রমিকের মাঝে মোট ৩ লাখ ৫ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়। শশেরনগর চা-বাগানের শ্রমিক তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, একটি এনআইডির (৫৮১৫৬৮৫) বিপরীতে ১১০ নম্বরে রয়েছে সত্যনারায়ণ রাজভরের নাম। তালিকায় একই এনআইডির বিপরীতে রয়েছে আরও ৩০ শ্রমিকের নাম। একই তালিকায় শমশেরনগর শিংরাউলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক নুনু মিয়ার নামও রয়েছে। তা ছাড়া, তালিকাভুক্তদের অধিকাংশই চা-বাগানের নিবন্ধিত শ্রমিক নন। এমনকি আলীনগর চা-বাগানে মৃত ব্যক্তির নামেও চেক প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে।
কানিহাটি চা-বাগানের শ্রমিক তালিকায় একটি এনআইডির (৫৮১৫৬৮৫৯৫) বিপরীতে এক নম্বরে রয়েছে মাখন বীনের নাম। তালিকায় একই আইডির বিপরীতে রয়েছে আরও ৪২ শ্রমিকের নাম। এসব তালিকা তৈরি করেন স্থানীয় ওয়ার্ড ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। তৈরি করা তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই করে ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর সই করেন সংশ্লিষ্ট চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি, চা-বাগানের একজন ব্যবস্থাপক ও ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ।
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তালিকা তৈরি করেন জনপ্রতিনিধিরা। সেই তালিকায় স্বাক্ষর দেন বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি, একজন ব্যবস্থাপক ও ইউপি চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে সমাজ সেবা বিভাগের করণীয় কিছু ছিল না।
এ বিষয়ে কানিহাটি চা-বাগানের ইউপি সদস্য সীতারাম বীন বলেন, ‘তালিকা আমি করিনি। স্থানীয় বাগান পঞ্চায়েত ও চেয়ারম্যান মিলে করেছেন বলে জেনেছি।’
তবে, কানিহাটি চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি প্রতাপ রিকিয়াশনকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
শমশেরনগর চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি নিপেন বাউরি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই। তালিকাটি শমশেরনগর চা-বাগানের ইউপি সদস্য করেছেন।’
শমশেরনগর চা-বাগানের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, ইউনিয়ন অফিসের কম্পিউটারে তালিকা করা হয়। হয়তো সেখানে ভুল হতে পারে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা প্রাণেশ চন্দ্র বর্মা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চেক বিতরণ করা হলেও সমাজ সেবা বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চেকের টাকা প্রদানে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই কেউ এখনো চেকের টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। আর এখন যেহেতু নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, সেহেতু এসব খতিয়ে দেখা হবে।’
Comments