মেঘনার ভাঙনে বিলীনের মুখে নাসিরনগরের বাজার, বসতভিটা
১৫ শতক জায়গার ওপর ওয়ার্কশপ আর নিজের বাড়ি নিয়ে সুখেই দিন যাচ্ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় চকবাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীপাড়ের ৫৫ বছর বয়সী আবদুর রাজ্জাকের। গেল সপ্তায় মেঘনা নদীর আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ১৪ সদস্যের এই পরিবারটির দোকান-বাড়িঘর। পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী ভলাকুট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে বড় ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
কেবল আব্দুর রাজ্জাকই নন, গেল কয়েক বছরে চাতলপাড় গ্রামের প্রায় ১০০ বসতবাড়ি ও সেখানকার চকবাজার ও বড়-বাজারের প্রায় ৫০ টি দোকানঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এছাড়া আরো অন্তত শতাধিক স্থাপনা নদী ভাঙনের হুমকিতে। এতে চাতলপাড় গ্রামের বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বছরের পর বছর অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীতে চর জেগে গতিপথ সংকুচিত হয়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। ফলে চাতলপাড় বাজার অংশে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। নদীর ওপারে কিশোরগঞ্জ অংশে অপরিকল্পিত ও অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে বর্ষা আসার আগেই এ ভাঙন শুরু হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চকবাজার সংলগ্ন চাতলপাড় বিলের পাড় এলাকার কমপক্ষে ২০টি বাড়ির নিচের অংশের মাটি সরে গেছে। সেখানকার অনেক বাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে। বাজারের একাধিক দোকানে ফাটল দেখা দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নিতেও দেখা গেছে।
বিলের পাড়ের বাসিন্দা জ্যোতিষ সূত্রধর জানিয়েছেন, রাতারাতি তার পাঁচটি দোকান ও বাড়ি মেঘনায় বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার মালামাল হারিয়েছেন তিনি। মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে এখন অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে।
বাজারের করাতকলের মালিক সোহেল মিয়া জানান, নদীর পানির ঢেউয়ের তোড়ে তার বাড়ি ও ফুল-ফলের বাগানসহ করাতকলটিও বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কারণে পুরো বাজারে কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় চাতলপাড় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদ জানান, গত তিন বছর ধরে অব্যাহতভাবে ভাঙছে মেঘনা তীরের গ্রাম চাতলপাড় ও গ্রামের দুটি বড় বাজার। এ অবস্থায় সরকার ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী কোন প্রকল্পের ব্যবস্থা না করলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে চাতলপাড় বাজার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাসিরনগর শাখা কর্মকর্তা, প্রণয়জিৎ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চাতলপাড় বাজার অংশ ও সংলগ্ন গ্রামের ভাঙন ঠেকাতে যেখানে অন্তত ৩৫ হাজার জিও-ব্যাগ দরকার, সেখানে সরকারিভাবে মাত্র ২ হাজার ২০০টি ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। এই অল্প বরাদ্দ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। সরকারিভাবে স্থায়ী কোন সমাধানের ব্যবস্থা করা হলেই কেবল এ ভাঙন রোধ সম্ভব হবে।
Comments