করোনা মহামারিকালে ঝড়-বৃষ্টির রাতেও ‘কাউন্সিলর খোরশেদ ভাই’র মহানুভাবতা

১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ৮০ জনের মরদেহের সৎকার করেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার দল। ছবি: সংগৃহীত

‘আমাদের অনেক আত্মীয় ও প্রতিবেশী আছে। কিন্তু, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে শুনে কেউ দেখতেও আসেনি। বাড়ির সামনে কয়েক ঘণ্টা মরদেহ রেখে দেওয়া হয়। দাফনে এগিয়ে আসেননি এক জনও। তবে, আপন কেউ না হয়েও ঝড়-বৃষ্টির রাতে এগিয়ে এসেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ ভাই। তার মতো মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন।’

আজ শনিবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথাগুলো বলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির ভাতিজা নুরুল ইসলাম।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত ছয় দিন ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন আমার চাচা। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে হঠাৎ শ্বাসকষ্টে তিনি মারা যান। করোনায় আক্রান্ত বলে হাসপাতাল থেকে মরদেহ গোসল করিয়ে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অঞ্জুমানে পাঠানো হলেও একই অবস্থা। কোনো উপায় না পেয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তখন তিনি আমাদের সাহস দেন মরদেহ আনলে সব করবেন। অনেক বৃষ্টির মধ্যেও রাতে খোরশেদ ভাই তার টিম নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়। গোসল কারনো থেকে শুরু করে দাফন করা পর্যন্ত সব কাজ ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী ওনারা শেষ করেন।’

কাউন্সিলর খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। করোনায় আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ আছে এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও যখন কেউ এগিয়ে আসে না তখন খবর পেলেই এগিয়ে যান তিনি। তা সিটি করপোরেশন এলাকায় কিংবা সিটির বাইরে হোক। এ কারণে সবাই তার নাম দিয়েছেন ‘কাউন্সিলর খোরশেদ ভাই’।

১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ৮০ জনের মরদেহের সৎকার করেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার দল। যার মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষই ছিলেন।

কাউন্সিলর খোরশেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাল যখন ফোনে আমাকে বিষয়ট জানানো হয় তখন প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টি থাকায় মরদেহ দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য একত্রিত হতে না পারায় টিমের সদস্যদের সঙ্গে আমি নিজেই দাফনে বেরিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তা খুবই বেদনাদায়ক। বাড়ির সামনে মরদেহ রাখা, কিন্তু মৃতের ছেলে ও মেয়ের জামাই ও ছেলের দুই বন্ধু ছাড়া আর কেউ নেই। তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন। তবে, মৃত্যুর পর কেউ এগিয়ে আসেনি। তখন আমাদের টিমের সদস্য হাফিজ সিব্বির গোসল, কাফনের কাপড় পরায় এবং নামাজে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।’

কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৮০টি মরদেহ দাফন ও সৎকার করেছি। বিভিন্ন সামাজিক পরিচালনা কার্যক্রম করেছি। কিন্তু, এ কাজ থেকে আমি করোনায় আক্রান্ত হয়নি। আমি আক্রান্ত হয়েছি আমার স্ত্রীর মাধ্যমে। আমি যখন এসব কাজের জন্য আলাদা থেকেছি তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও জরুরি প্রয়োজনে আমার স্ত্রীকে বাইরে বের হতে হয়েছে। গত ২২ মে তার করোনা শনাক্ত হয়। সে গুরুতর অসুস্থ হলেও আমাকে তার সংস্পর্শে যেতে হয়েছে। পরিবারের কথায় মতো গত ৩০ মে আমার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার শরীরে করোনার একটি উপসর্গও ছিল না। তারপরও আমি আইসোলেশনে ছিলাম স্কায়ার হাসপাতাল ও বাসায় তা শেষ হয়েছে। আজকে আমি নমুনা দিয়ে এসেছি। এ কারণে আমি মরদেহ দাফনে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নমুনা পরীক্ষা নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু তখন আমার পজিটিভ এসেছিল তাই সে তার বাবার বাসায় ঢাকায় আছে। কিন্তু এখনো অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।’

Comments

The Daily Star  | English

US to make history either way

Kamala Harris and Donald Trump launched a final frenzied campaign blitz yesterday, hitting must-win Pennsylvania on the last day of a volatile US presidential race that polls say is hurtling towards a photo finish.

8h ago