জয় পেলেও দুই অর্ধে রিয়ালের দুই রূপ
টনি ক্রুস, সার্জিও রামোস ও মার্সেলোর কল্যাণে প্রথমার্ধে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখায় রিয়াল মাদ্রিদ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তাদের পারফরম্যান্সে ছিল না কোনো ছন্দ। উল্টো সফরকারী এইবার চেপে ধরেছিল লস ব্লাঙ্কোসদের। তবে কোনো অঘটনের জন্ম হয়নি। পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে করোনাভাইরাসে কারণে লম্বা সময় স্থগিত থাকা স্প্যানিশ লা লিগায় ফের যাত্রা শুরু করেছে রিয়াল।
রবিবার রাতে ঘরের মাঠ আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে এইবারকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে স্পেনের সফলতম ক্লাবটি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সংস্কার কাজ চলায় মৌসুমের বাকি সময়টাতে এই মাঠকেই হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করবে রিয়াল।
দর্শকশূন্য ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই উল্লাসের উপলক্ষ পায় রিয়াল। বাম প্রান্ত দিয়ে এইবারের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন করিম বেনজেমা। এই ফরাসি স্ট্রাইকারের পা থেকে বল কেড়ে নিতে পারলেও বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন সফরকারী দলটির ডিফেন্ডাররা। এতে বল পেয়ে যান জার্মান মিডফিল্ডার ক্রুস। ডি-বক্সের ভেতরের দিকের প্রান্ত থেকে ডান পায়ের অবিশ্বাস্য এক শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
গোল হজম করার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এইবার। ১২তম মিনিটে উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার সেবাস্তিয়ান ক্রিস্তোফোরো বাম পায়ে দূরপাল্লার শট নেন। বল লুফে নিতে অবশ্য সমস্যা হয়নি স্বাগতিক গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার।
অতিথিদের সমতায় ফেরার আশা গুঁড়িয়ে দিয়ে ৩০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রামোস। দুর্দান্ত পাল্টা-আক্রমণের শুরুটাও করেছিলেন তিনিই। এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে তা বাড়ান বেনজেমার উদ্দেশ্যে। তিনি কিছুদূর এগিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে কোণাকুণি পাস দেন হ্যাজার্ডকে। চোট থেকে ফেরা এই বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডের সামনে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। তবে তিনি নিঃস্বার্থভাবে স্কয়ার পাস দেন রামোসকে। ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি রিয়াল অধিনায়ক।
সাত মিনিট পর বেনজেমার বুদ্ধিদীপ্ত পাসে হ্যাজার্ডের নেওয়া শট রুখে দিয়েছিলেন এইবার গোলরক্ষক মার্কো দিমিত্রোভিচ। কিন্তু তাকে স্বস্তি দেননি মার্সেলো। বাম পায়ের জোরালো শটে স্কোরলাইন ৩-০ করেন এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। স্বদেশি মার্সেলোর পাস থেকে শট নিলেও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন রদ্রিগো।
বিরতির পর পাল্টে যায় চিত্র। চমক দেখিয়ে খেলার নিয়ন্ত্রণ নেয় এইবার। একের পর এক সুযোগ তৈরি করে জিনেদিন জিদানের শিষ্যদের কঠিন পরীক্ষা নেয় তারা। তবে ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না, কোর্তোয়াও উপস্থিত হন চীনের প্রাচীর হয়ে।
৫৬তম মিনিটে গোল শোধ করার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল এইবার। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এদু এক্সপোসিতোর নেওয়া জোরালো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান কোর্তোয়া। দুই মিনিট পর কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন সার্জিও এনরিক। কিন্তু মিনিটখানেক আগে মাঠে নামা এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডকে হতাশায় পোড়ায় ক্রসবার।
পরের মিনিটে জাল আর অক্ষত রাখতে পারেনি খেই হারিয়ে ফেলা রিয়াল। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বেনজেমা বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় পেয়ে যান পাবলো দে ব্লাসিস। তার জোরালো শট বদলি ডিফেন্ডার পেদ্রো বিগাসের গায়ে লেগে কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়।
৭০তম মিনিটে মার্সেলোর ভুলে ম্যাচে ফেরার লাইফলাইন প্রায় পেয়েই গিয়েছিল এইবার। কিন্তু ডি-বক্সের ভেতরে ফাঁকায় থাকা পেদ্রো লিওন লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। রিয়ালের সাবেক এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের ডান পায়ের নিচু শট রুখে দেন কোর্তোয়া। ম্যাচের বাকি সময়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করতে পারেনি দল দুটি।
এই জয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান কমিয়েছে রিয়াল। ২৮ ম্যাচ শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫৯ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে বার্সার অর্জন ৬১ পয়েন্ট। আগের রাতে রিয়াল মায়োর্কাকে তাদের মাঠেই ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে দলটি।
Comments