করোনায় সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের মৃত্যু
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মারা গেছেন।
আজ সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার ছেলে ডা. আরমান আহমেদ শিপলু সকালে এ তথ্য দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।
কামরানের ব্যক্তিগত সহকারি বদরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ বোধ করছিলেন তিনি, তবে রোববার মধ্যরাত থেকে হঠাৎ অবস্থার অবনতি হয় এবং বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। আজ ভোররাতে মারা যান তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার মরদেহ সিলেট নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রথমে নগরীর ছড়ারপাড়স্থ বাসায় রাখা হবে। এরপর জানাজা শেষে তাকে মানিকপীর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কামরানের জনপ্রিয়তার কারণে জানাজায় প্রচুর লোকসমাগম হতে পারে তাই সংক্রমণ বিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজার আয়োজনের বিষয়ে দলীয় এবং প্রশাসনিকভাবে আলোচনা করে দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
গত ৫ জুন করোনা শনাক্ত হয় ৬৯ বছর বয়সী সিলেটের সাবেক এ মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতার। তার আগে ২৭ মে তার স্ত্রী ও সিলেট মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসমা কামরানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
করোনা শনাক্ত হওয়ার পরদিন তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলে পরদিন তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন ৭ জুন তাকে বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৮ জুন তাকে প্রথমবারের মতো প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচনী প্রচারণায় শ্লোগান দেওয়া হতো ‘নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদর উদ্দিন কামরান’। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কামরান সিলেট শহরের সবচেয়ে পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তির একজন হয়ে উঠেন।
১৯৭২ সালে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত হন।
এরপর বারবার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৫ বছর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর কিছুদিন প্রবাস জীবন অতিবাহিত করে দেশে ফিরে এসে ১৯৯৫ সালের নির্বাচনে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০১ সালে সিলেট পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হলে ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার পরের বছর ২০০৩ সালে তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্বলাভ করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেলবন্দি অবস্থা থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করেন কামরান।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কামরান ১৯৮৯ সালে সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বলাভ করেন এবং এ পদে ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ সালেও আবার নির্বাচিত হন।
২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ এবং ২০১১ সালের সম্মেলনেও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।
কামরান একই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী আজ এক শোক বিবৃতিতে বলেন, ‘স্বীয় কর্মের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা কামরান গণমানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’
তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
Comments