‘ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার থেকে স্টার’, বাস্তব জীবনের নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুত

Sushant Singh Rajput
সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: সংগৃহীত

হৃত্বিক রোশান কিংবা শাহরুখ খানের মতো বলিউড সুপারস্টারদের পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই স্টার হিসেবে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তার জীবনের গল্পটা অনেকটা ছবির মতোই।

পড়াশুনায় বরাবরই ক্লাসের প্রথম সারিতে ছিলেন সুশান্ত৷ ভারতের বিহারে মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন তিনি। ২০০২ সালে মায়ের মৃত্যুর পর শোকাহত পরিবারটি দিল্লিতে পাড়ি জমায়।

দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (অল ইন্ডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স এক্সাম) প্রবেশিকা পরীক্ষায় গোটা ভারতে সপ্তম স্থান অর্জন করেন সুশান্ত।

ভারতের ‘ফিজিক্স ন্যাশনাল অলিম্পিয়ার্ডে’ বিজয়ীও হন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যাত্রাপথে হঠাৎ থিয়েটার নিয়ে আগ্রহী হন সুশান্ত। মোটা মোটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বইয়ের ফাঁকে অভিনয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি।

বলিউডে ‘স্বজনপ্রীতি’র জয়জয়কার— একথা জানা সত্ত্বেও নিজেকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত সব পরীক্ষায় সামনের সারিতে থাকা সুশান্ত হঠাৎ করেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে অভিনয় ও নাচের ক্লাসে যোগ দেন।

তার নাচের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ভারতের বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার শামক দাভরের তাকে কমনওয়েলথ গেমসে ও ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার অনুষ্ঠানে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে পারফর্ম করার সুযোগ দেন। একজন ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার সুশান্ত মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ‘স্টার’ হিসেবে অসংখ্য অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে চলে আসেন।

মঞ্চে তার অভিনয় দেখে বালাজি টেলিফিল্মসের একজন কাস্টিং ডিরেক্টর মুগ্ধ হয়েছিলেন। নিজের প্রতিভার জোরেই তিনি জায়গা করে নেন টেলিভিশন ধারাবাহিকের পর্দায়।

‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ধারাবাহিকের নায়কের এক ভাই হিসেবে পর্দায় আসেন সুশান্ত। ছোট ওই চরিত্রটি কিছুদিন পর সরিয়ে দেওয়া হলেও দুর্দান্ত পারফর্মেন্স ও দর্শকপ্রিয়তার কারণে পরে তাকে আবারও ফিরিয়ে আনা হয়৷ পরবর্তীতে ‘পবিত্র রিশতা’ টেলিভিশন ধারাবাহিক থেকেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই অভিনেতা।

২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন সুশান্ত।

ব্যতিক্রম এই অভিনেতা কেবল প্রতিভার জোরেই একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়েছেন। শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স (২০১৩), পিকে (২০১৪), ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি (২০১৫), এমএস ধোনি জীবনীচিত্র (২০১৬), কেদারনাথ (২০১৮), ড্রাইভ (২০১৯) সহ ১৬টি ছবিতে ছোট-বড় চরিত্রে অভিনয় করেন সুশান্ত।

বলিউডের সবচেয়ে ব্যবসাসফল জীবনীচিত্র ‘এমএস ধোনি’তে সুশান্ত অভিনয় করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধনীর চরিত্রে। ছবিতে তার দুর্দান্ত অভিনয় এখনো দর্শকমনে আলাদা জায়গা তৈরি করে আছে।

তাকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ছিঁছোড়ে’তে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র আন্নির ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ছবিতে তিনি বলেছিলেন, ‘আত্মহত্যা কোন সমাধান না।’

গতকাল রোববার মুম্বাইয়ে নিজের ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় সুশান্তের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাণোজ্জ্বল এই অভিনয়শিল্পীর এমন করুণ মৃত্যুতে যেন দুঃস্বপ্ন দেখছেন ভক্তরা।

তার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিনেতার পরিবার ও অনুগামীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন। অভিনেতার আত্মার শান্তি কামনা করে তিনি টুইটে বলেন, ‘সুশান্ত সিং রাজপুত... এক উজ্জ্বল তরুণ অভিনেতা, খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। টিভিতে ও ছবিতে তিনি নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিনোদন জগতে তার উত্থান অনেককে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বেশ কয়েকটি স্মরণীয় পারফরম্যান্স রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত।’

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব হয়ে আছে ভক্তদের হাহাকারে।

দ্য ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেইজে তার মৃত্যুর সংবাদে সানজিদা আলম নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘২০০৯ সালে আমি হিন্দি সিরিয়াল “পবিত্র রিসতা” দেখতাম। তখন থেকেই তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। সেটি তার সেরা কাজ ছিল না। কিন্তু ,সিরিয়ালের সেই দুর্বল কাহিনী দিয়েও সুশান্ত আমার হৃদয়ে জায়গা অর্জন করতে পেরেছিল। মৃত্যুর পর হয়তো তিনি শান্তি খুঁজে পাবেন।’

প্রাথমিকভাবে সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হলেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধারণাকে জোরালোভাবে অস্বীকার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার শেষ পোস্টটি ছিল প্রয়াত মাকে নিয়ে। মায়ের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছিলেন, ‘চোখের জলে অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া অতীত। অন্তর্নিহিত স্বপ্নগুলো হাসির সিন্দুক খোদাই করছে। ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে চলছে দুজনের মধ্যে আলোচনা, মা...।’

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

6h ago