কেন ইরানের সামরিক বাহিনী ইসরাইলের চেয়ে এগিয়ে?
বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তির নানা দিক বিবেচনা করে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হয় সংবাদ প্রতিবেদন। সেসব প্রতিবেদনে অনেকের হয়তো আস্থা তেমন একটা থাকে না। তবুও সেসব প্রতিবেদনে দেশগুলোর সামরিক শক্তি সম্পর্কে খানিক ধারণা পাওয়া যায়।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট কম যখন ২০১৯ সালের দেশগুলোর সামরিক তথ্য বিশ্লেষণ করছে, এমন সময় ২০১৮ সালের র্যাঙ্কিংকে ভিত্তি করে গতকাল রোববার সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট কমের মতে, বিশ্বে সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৩ তম আর ইসরাইলের অবস্থান ১৬।
ওয়েবসাইটটির হিসাবে সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপরের ধাপগুলোতে যথাক্রমে রয়েছে— রাশিয়া, চীন, ভারত, ফ্রান্স ও ব্রিটেন।
মজার বিষয় হলো: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারে দৃষ্টিতে সামরিক শক্তিতে মিশর তার নিকটতম প্রতিবেশী ইসরাইল ও দূরতম প্রতিবেশী ইরান থেকে এগিয়ে আছে। সামরিক শক্তিতে মিশরের অবস্থান ১১ তম।
ইসরাইলের চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে ইন্দোনেশিয়া (১৫) এবং একধাপ পিছিয়ে আছে পাকিস্তান (১৭)।
তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে ভুটানের নাম। সামরিক শক্তিতে এর অবস্থান ১৩৬।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট কমের হিসাব কতোটা সঠিক?
ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে, তারা সামরিক শক্তির তালিকা তৈরি করতে বাস্তবভিত্তিক ৫৫টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, একটি দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, দেশটির জনসংখ্যা, দেশজ সমরনীতি ইত্যাদি।
‘এরপর প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়’ উল্লেখ করে ওয়েবসাইটতে আরও বলা হয়েছে, ‘যেমন ধরুন, একটি দেশের হাতে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে শুধু এর ওপর নির্ভর করে তালিকা করা হয় না। বরং দেখা হয়, সেসব অস্ত্রের রকমফের।’
সাইটটির ভাষ্য, ‘কোন দেশের হাতে কতোগুলো পরমাণু বোমা আছে সেটা হিসাবে না নিয়ে তা বিবেচনায় নিয়ে তালিকা তৈরি করা হয়। এ থেকে সেই দেশ একটি বোনাস পয়েন্ট লাভ করে।’
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট কম মনে করে, সবার বিশ্বাস ইসরাইলের হাতে পরমাণু বোমা রয়েছে। ইরান অতীতে পরমাণু বোমা বানানোর চেষ্টা করেছিল। এখন ইরান পরমাণু বোমা বানাতে কতোটা সক্ষম— এর উত্তর নির্ভর করবে প্রশ্নটি আপনি কাকে করছেন।
ইরান ও ইসরাইলের সামরিক শক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট কমের হিসাবে ইরানের জনসংখ্যা আট কোটি ২০ লাখ। দেশটির সামরিক বাহিনীর সম্ভাব্য সদস্য সংখ্যা চার কোটি ৭০ লাখ।
অপরদিকে, ইসরাইলের জনসংখ্যা ৮০ লাখের মতো। সে দেশের ৩০ লাখ ৬০ হাজার নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে।
ইরান আয়তনের দিক থেকে ইসরাইলের ১০০ গুণ বড়। পারস্য উপসাগরের এই দেশটির রয়েছে তেল-গ্যাসের বিশাল ভান্ডার। এছাড়াও, ইসরাইলের তালিকাবদ্ধ সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা যেখানে ছয় লাখ ১৫ হাজার সেখানে ইরানের রয়েছে নয় লাখের ওপরে। তবে ইসরাইলের তুলনায় ইরানের হাতে ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমানের সংখ্যা কম।
ধারণা করা হয়, ইসরাইলের তুলনায় ইরানের অধিক জনসংখ্যা ও বিশাল সেনাবাহিনী থাকার পরও ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে এসব ইরানকে তেমন একটা সুবিধা দিবে না। কেননা, ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের সীমান্ত নেই। ইরানের সেনা সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে ঢুকতে পারবে না।
১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধে সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে ইরান যে সুবিধা পেয়েছিল ইসরাইলের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো: দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বাধলে ইসরাইল প্রথমদিকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না।
Comments