নোয়াখালীতে গণধর্ষণ মামলার আসামি সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার, রাতে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত
নোয়াখালীর সেনবাগে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারের পর রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন এক শিশু গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি।
নিহত মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (৪০) সোনাইমুড়ী পৌরসভার নাওতলা মহল্লার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
আজ ভোররাত ২টার দিকে সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের ছাতারপাইয়া পূর্ব বাজার সোনাকান্দি এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ও খুনের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এর আগে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মিজানুর রহমানকে সেনবাগের মাহতাবপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে সেনবাগ থানা পুলিশ।
নিহত মিজান সোনাইমুড়ী পৌর এলাকায় সিএনজি থেকে চাঁদা তুলতো। তার বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
সেনবাগ থানা পুলিশের দাবী বন্দকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপ গান, দুই রাউন্ড কার্তুজ ও একটি ছোড়া উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সেনবাগ থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, গত শনিবার বিকেলে সোনাইমুড়ী উপজেলা শহরের মা-মনি বেকারিতে কর্মরত এক শ্রমিক (১৫) বেকারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার গ্রামের বাড়ি কবিরহাট উপজেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। রাত ৮টার দিকে সোনাইমুড়ী বাইপাস সড়ক এলাকায় পৌঁছার পর সিএনজি শ্রমিক মিজান তাকে নিরাপদে কবিরহাট পৌঁছে দেবে বলে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় তুলে বিভিন্ন স্থানে ঘুরায়। রাত ১টার দিকে ওই শিশুকে নিয়ে সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া পূর্ব বাজারে কানা শহিদের গ্যারেজে এনে অস্ত্রের মুখে মিজান, কানা শহিদ ও সিএনজি চালকসহ রাতভর গণধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে তারা পালিয়ে গেলে রোববার সকালে ওই শিশু সেনবাগ থানায় গিয়ে মিজানকে প্রধান আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও জানান, পুলিশ রোববার সন্ধ্যায় সেনবাগের মাহতাবপুর গ্রাম থেকে মামলার প্রধান আসামি মিজানকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিজান নিজের কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। আজ ভোররাত রাত ২টার দিকে সেনবাগ থানা পুলিশের একটি দল মিজানকে নিয়ে সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া পূর্ব বাজার সোনাকান্দি এলাকায় যায়। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মিজানের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে মিজানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মিজানের সহযোগীরা পিছু হটে চলে যায়। এ সময় মিজানের সহযোগীদের ছোড়া গুলিতে মিজান গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও ছোড়া উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মিজানের সহযোগীদের হামলায় রসূল মীর, পিয়াস সরকার ও পিপুল নামের তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়েছে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে করতে পুলিশি অভিযান চলছে।’
সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, ‘বন্ধুকযুদ্ধে একজন নিহত হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে খোঁজ নিয়েছি। শুনেছি তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা। তবে ডাকাত কিনা তা বলতে পারছি না। তবে তার নামে নারী নির্যাতনের মামলা আছে বলে জেনেছি।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, ‘আজ ভোরে সেনবাগ থানা পুলিশের কয়েক জন সদস্য মিজানুর রহমান নামের একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তিনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তার বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। দুপুরে হাসপাতালের মর্গে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বন্দুকযুদ্ধে গণধর্ষণ মামলার আসামি মিজানুর রহমান ওরফে মিজান নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এছাড়াও সে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি। জেলাকে মাদক, অবৈধ অস্ত্র, জঙ্গিবাদ ও ধর্ষণ মুক্ত করতে পুলিশের অভিযান চলবে। অপরাধ করে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই। নোয়াখালী জেলাবাসীকে শান্তি, শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।’
Comments